‘মাত্র ১৮ হাজার টাকা নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু’

মাসুদ পারভেজ রাজুশিক্ষাজীবনে টিউশনি বা ছাত্র পড়ানোর জন্য ‘মিডিয়ার’ নাম শোনেননি, এমন মানুষ কমই আছে। অনেকেই এসব মিডিয়ার মাধ্যমে ছাত্র পড়ানো শুরু করতেন। শেষ পর্যন্ত শুরু হতো নানা ধরনের জটিলতা। এছাড়া অভিভাবকরাও প্রতারিত হতেন মাঝেমধ্যেই। এই জটিলতা এড়াতে এবং ছাত্র পড়ানোর ব্যবস্থাটিকে নতুন একটি কাঠামোয় নিয়ে আসতে কাজ করে যাচ্ছে কেয়ার টিউটরস ডট কম। এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে খুব সহজেই অভিভাবক ও শিক্ষার্থী যেকোনও ক্লাস অথবা বিষয়ের জন্য টিউটর খুঁজে নিতে পারেন। বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন কেয়ার টিউটরের প্রতিষ্ঠাতা মাসুদ পারভেজ রাজু।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনি উদ্যোক্তা হতে চাইলেন কেন?

রাজু: আমি আসলে ছোটবেলা থেকেই চাইতাম নিজে কিছু করবো। এমন কোনও কাজ করবো যাতে দেশ ও দেশের মানুষ উপকৃত হয়। এ ভাবনা থেকেই অনেক চেষ্টার পর কিছুটা সফল হয়েছি। সামনে আরও অনেক পথ বাকি।
বাংলা ট্রিবিউন: কেয়ার টিউটরস ডট কমের ধারণাটা কীভাবে এলো?
রাজু: আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকার সময় দেখেছি টিউশন নিতে গিয়ে আমার বন্ধুরা এবং অনেক অভিভাবক কীভাবে প্রতারিত হয়েছেন। নিজেরও কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ছিল। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছিল এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার জন্য কিছু একটা করা যেতে পারে। এমন কিছু করা উচিত যেন পরবর্তীতে আর কেউ কোনও সমস্যা বা প্রতারণার শিকার না হন। ওই ধারণা থেকেই মূলত কেয়ার টিউটরস ডট কম চালু করি আমি ও আমার এক বন্ধু মিলে।
বাংলা ট্রিবিউন: কেয়ার টিউটরের শুরুটা কীভাবে?

রাজু: প্রথম দিকে আমরা শুধু একটা ফেসবুক পেজ ও গ্রুপ চালু করি। এটা ২০১২ সালের ঘটনা। মাত্র ১৮ হাজার টাকা দিয়ে প্রাথমিক যাত্রা শুরু হয় আমাদের। এভাবে ধীরে ধীরে এগোতে থাকি। তখন মানুষের ভালো সাড়া পেতাম। এরপর চিন্তা আসে এটাকে একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে রূপ দেওয়ার, যাতে আরও বেশি মানুষ সেবা নিতে পারেন। এ লক্ষ্যেই ২০১৪ সালে কেয়ার টিউটরের ওয়েবসাইট করি। এখন আমাদের সার্বক্ষণিক সেবা দেওয়ার জন্য ১৫ জনের ছোট একটা টিম রয়েছে।

বাংলা ট্রিবিউন: কেয়ার টিউটরস ডট কমকে একেবারেই নতুন একটা সাইট থেকে এ অবস্থায় নিয়ে এসেছেন। কাজটা কেমন ছিল?

রাজু: পড়াশুনা শেষ করার পর ইন্টার্নশিপ থেকেই আমার চাকরি হয়েছিল। তখন চাকরির পাশাপাশি এটা দেখতাম। কিন্তু এক সময় মনে হলো, দুটো একসঙ্গে করা সম্ভব না। যেকোনও একটা আমাকে ছাড়তে হবে। শেষ পর্যন্ত ছাড়ার জন্য চাকরিটাকেই বেছে নিলাম। এরপর দিনরাত এটাতে সময় দিয়েছি।

গ্রাহকদের আস্থা বা বিশ্বাস অর্জন একটা বড় চ্যালেঞ্জ। অনেকেই সহজে বিশ্বাস করতে চান না। টিউশন নিয়ে এতো বাজে কাজ হয়েছে যে এখন মানুষকে বোঝাতে সময় লাগে। বাজে কাজ বলতে ধরুন, কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন, অথচ টিউশন নেওয়ার ক্ষেত্রে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে

বাংলা ট্রিবিউন: এখন কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন?

রাজু: আমরা বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি। এরমধ্যে গ্রাহকদের আস্থা বা বিশ্বাস অর্জন একটা বড় চ্যালেঞ্জ। অনেকেই সহজে বিশ্বাস করতে চান না। টিউশন নিয়ে এতো বাজে কাজ হয়েছে যে, এখন মানুষকে বোঝাতে সময় লাগে। বাজে কাজ বলতে ধরুন, কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন, অথচ টিউশন নেওয়ার ক্ষেত্রে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু আমি বিবিএ করা, তবে বরাবরই টেকনোলজির প্রতি কিছুটা দুর্বল ছিলাম। এগুলো ছাড়াও  বিনিয়োগ, ডিজিটাল মার্কেটিং ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছি। ব্যবসায়ের জন্য এক এক করে সবই শিখতে হয়েছে এবং ভালো ধারণা নিতে হয়েছে।

বাংলা ট্রিবিউন:  উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান বাধাগুলো কী?

রাজু: উদ্যোক্তা হওয়ার বিষয়টি আসলে লম্বা একটা জার্নির মতো। এতে অনেক বাধা আসবে। সবগুলোই সমাধান করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই সফল হওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে যে বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগ শুরু করতে চান, তার খুঁটিনাটি সবকিছু শিখতে হবে। ফোকাস ঠিক রাখতে হবে। আমি এমন অনেক উদ্যোগ দেখেছি, যারা দুই বছরও টিকেনি। শুধু ফোকাস ঠিক ছিল না বলে তাদের এ অবস্থা হয়েছে। এজন্য ফোকাস ঠিক রেখে মানুষ কী চায় সেটা বিবেচনা করে কাজ করতে হবে।

অনেক ধৈর্য থাকতে হবে। অধ্যবসায়ী হতে হবে, হাল ছাড়া যাবে না। একটি উদ্যোগের শেষ দেখে ছাড়তে হবে

বাংলা ট্রিবিউন: যারা উদ্যোক্তা হতে চায় তাদের উদ্দেশে আপনার পরামর্শ।

রাজু:  অনেক ধৈর্য থাকতে হবে। অধ্যবসায়ী হতে হবে, হাল ছাড়া যাবে না। একটি উদ্যোগের শেষ দেখে ছাড়তে হবে। কেয়ার টিউটরের জন্য একটা সময় আমি টানা এক বছর একটা রুমে বসে কাজ করেছি। সফল হওয়া সহজ নয়। এজন্য পরিশ্রমের পাশাপাশি ধৈর্যও ধরতে হবে। শুরুতেই অর্থ উপার্জনের চিন্তা করলে হবে না। মানুষের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে নতুন কিছু করুন, টাকা এমনিতেই আসবে।