ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ

২০০৮ সালে বর্তমান সরকার যে নির্বাচনি ইশতেহার প্রকাশ করেছিল তাতে বলা হয়, ২০২১ সালের লক্ষ্য ডিজিটাল বাংলাদেশ। গতবছর ‘রূপকল্প ২০২১’ বাস্তবায়ন হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ পর্ব শেষে আবারও নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এবারের লক্ষ্যের নাম ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’।

গত ৭ এপ্রিল ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের তৃতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের চেয়ারপারসন ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ওই বৈঠকেই ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের নাম পরিবর্তন করে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ করার সিদ্ধান্ত হয়। ওই বৈঠকেই নির্ধারণ হয় কেমন হবে স্মার্ট বাংলাদেশ।   

কেমন হবে স্মার্ট বাংলাদেশ সে বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানান, ২০৩১ সালের মধ্যে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত আয় নিশ্চিতকরণ এবং ২০৪১ সাল-নাগাদ জ্ঞানভিত্তিক, উচ্চ অর্থনীতির উন্নত, সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এরফলে মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়াবে ১২ হাজার ৫০০ ডলারে। গড়ে উঠবে স্মার্ট বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন, যোগাযোগের ক্ষেত্রে দ্রুত পরিবর্তন আসবে।

প্রতিমন্ত্রী টাস্কফোর্সের বৈঠকে বক্তব্য রাখেন। ওই বৈঠকে তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে ধারণা পেয়েছি আগামী ১০০ বছরের মধ্যে মহাকাশ গবেষণা এবং মাইনিং টেকনোলজি ভবিষ্যৎ বিশ্বের অর্থনীতিকে পাল্টে দিতে পারে। মহাকাশ গবেষণা ও মহাকাশ নির্ভর সৌরশক্তি উৎপাদন, স্যাটেলাইটনির্ভর ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি  এ বিষয়ে ব্যাপক অবদান রাখবে।  বাংলাদেশের নিজস্ব প্রযুক্তি ও সক্ষমতা দিয়ে ভবিষ্যতে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা এখন থেকেই গ্রহণ করতে হবে। তাই এ যাত্রায় আমরা যেন পিছিয়ে না থাকি সেজন্য এজেন্সি ফর নলেজ অন অ্যারোনোটিক্যাল অ্যান্ড স্পেস হরাইজন আকাশ প্রতিষ্ঠা করা হবে।’

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন,‘আমরা যেন অনুমান করতে পারি যে ভবিষ্যতে কোন কোন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতৃত্ব দেবে এবং ধাপে ধাপে ২০২৫, ২০৩১ কিংবা ২০৪১ সালের জন্য প্রয়োজনীয় ইমার্জিং, ফ্রন্টিয়ার কিংবা ফিউচার টেকনোলজিতে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। তবেই আমরা উন্নত দেশগুলোর মতো জাতীয় জিডিপির প্রায় ২০ শতাংশের বেশি প্রযুক্তি খাত থেকে অবদান রাখতে পারবো।’

যেমন হবে স্মার্ট বাংলাদেশ

ডিজিটাল বাংলাদেশের টাস্কফোর্সের বৈঠকে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন: ২০৪১’ বাস্তবায়নে সভায় বিস্তারিত আলোচনাক্রমে   সিদ্ধান্ত হয়—

বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি ও উদ্ভাবনী জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১’ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’র পরিবর্তে স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এটা বাস্তবায়ন করবে।

অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল সমাজ গড়ে তোলা এবং পিছিয়ে পড়া ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলধারায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে ডিজিটাল ইনক্লুশন ফর ভালনারেবল এক্সেপশন (ডাইভ) উদ্যোগের আওতায় আত্মকর্মসংস্থানভিত্তিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের অনলাইন শিক্ষায় অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ করতে ওয়ান স্টুডেন্ট, ওয়ান ল্যাপটপ, ওয়ান ড্রিম -এর আওতায় শিক্ষার্থীদের ল্যাপটপ সহায়তা প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

স্মার্ট এবং সব জায়গায় বিরাজমান সরকার গড়ে তোলার লক্ষ্যে ডিজিটাল লিডারশিপ অ্যাকাডেমি স্থাপন করতে হবে। ক্ষুদ্র, কুটির শিল্প, ছোট, মাঝারি ব্যবসাগুলোর জিডিপিতে অবদান বৃদ্ধির জন্য এন্টারপ্রাইজভিত্তিক ব্যবসাগুলোকে বিনিয়োগ উপযোগী স্টার্টআপ হিসেবে তৈরি করতে হবে।

বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের আওতায় অল্টারনেটিভ স্কুল ফর স্টার্টআপ এডুকেটরস অব টুমোরো (অ্যাসেট) প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের আওতায় বাংলাদেশ নলেজ ডেভেলপমেন্ট পার্ক তৈরি করা হবে।

বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের আওতায় সেন্টার ফর লার্নিং ইনোভেশন অ্যান্ড ক্রিয়েশন অব নলেজ (ক্লিক) স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় এজেন্সি ফর নলেজ অন অ্যারোনোটিক্যাল অ্যান্ড স্পেস হরাইজন (আকাশ) প্রতিষ্ঠা করা হবে।

বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের আওতায় সেলফ-এমপ্লয়মেন্ট ও এন্ট্রেপ্রেনরশিপ ডেভেলপমেন্ট (সিড) প্ল্যাটফর্ম স্থাপন করা হবে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদফতরের আওতায় কন্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ও লিংকেজ ল্যাব (সেল) স্থাপন করা হবে এবং সার্ভিস এগ্রিগেটর ট্রেনিং (স্যাট) মডেলে সরকারি সেবা ও অবকাঠামো-নির্ভর উদ্যোক্তা তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এছাড়া সব ডিজিটাল সেবা কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বিত ক্লাউড’র আওতায় নিয়ে আসা হবে।