কেন চালু হচ্ছে না ফাইভ-জি?

দেশে ফাইভ-জি’র সফল পরীক্ষা হয়েছে, গাইড লাইনও তৈরি, বরাদ্দ দেওয়ার জন্য ফ্রিকোয়েন্সিও প্রস্তুত, ব্যবহারকারীদের হাতে অল্প-বিস্তর হ্যান্ডসেটও ঘুরছে। কিন্তু মার্কেট (বাজার) তৈরি না হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে চালু করা যাচ্ছে না ফাইভ-জি। অর্থাৎ যারা ফাইভ-জি ব্যবহার করবে, সেই মার্কেট (ব্যক্তি ব্যবহারকারী ও ইন্ডাস্ট্রি) এখনও প্রস্তুত নয়। ফলে বাজার তৈরির জন্য অপেক্ষা করতেই হচ্ছে। আর সেই বাজার কবে নাগাদ তৈরি হবে— সেই তথ্য নেই কারও কাছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) স্পেক্ট্রাম ম্যানেজমেন্ট বিভাগের কমিশনার শেখ রিয়াজ আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ফ্রিকোয়েন্সি অ্যালোকেট করার জন্য আমরা (বিটিআরসি) প্রস্তুত। কিন্তু বাজার এখনও তৈরি নয়। ফাইভ-জি চালুর আগে মার্কেটে গ্রাহক তৈরি করতে হবে। ফাইভ-জি শুধু মানুষই না, মেশিনও (যন্ত্র) ব্যবহার করবে। ইন্ডাস্ট্রির ডিমান্ড তৈরি করতে হবে। তাহলেই না মার্কেট তৈরি হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফাইভ-জি চালুর আগে বিশাল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। বাজার তৈরি না হলে এই বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়বে। অপারেটররা এখনও ফোর-জি’র বিনিয়োগ তুলে আনতে পারেনি। সেই অবস্থায় আরেকটা বিনিয়োগকে ঝুঁকির মুখে ফেলার কোনও যৌক্তিকতা নেই। ফোর-জিই এখনও দেশের শতভাগ এলাকায় পৌঁছানো যায়নি। অনেক অভিযোগ আছে (সেবা নিয়ে) গ্রাহকের। ফলে অনেক বিষয় বিবেচনায় নিতে হচ্ছে।’

বর্তমান সরকারের ‘নির্বাচনি ইশতেহার ২০১৮’-এর লক্ষ্য ও পরিকল্পনায় ২০২১-২৩ সালের মধ্যে ফাইভ-জি চালু করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু ২০২৪ সাল শুরু হলেও দেশে ফাইভ-জি বাণিজ্যিকভাবে চালু হওয়ার কোনও উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। 

প্রসঙ্গত, দেশে ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই ফাইভ-জি’র সফল পরীক্ষা চালানো হয় রাজধানীর সোনারগাঁও হো‌টে‌লে। ওই সময় ফাইভ-জি’র সর্বোচ্চ গতি পাওয়া গিয়েছিল ৪ দশমিক ১৭ জি‌বি‌পিএস। একই বছরের ১২ ডিসেম্বর মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক পরীক্ষামূলকভাবে দেশের ৬টি জায়গায় (স্পটে) ফাইভ-জি চালু করে।

অপরদিকে, ২০২২ সালের ২৬ জুলাই গ্রামীণফোন, ২৮ সেপ্টেম্বর রবি, এরপর বাংলালিংক ফাইভ-জি’র সফল পরীক্ষা চালায়। ফলে সবকিছু রেডি থাকার পরও চালু হয়নি ফাইভ-জি।

ফাইভ-জি’র বিষয়ে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সংগঠন এমটব’র মহাসচিব লে. কর্নেল মোহাম্মদ জুলফিকার (অব.) বলেন, ‘বিটিআরসি সম্প্রতি ফাইভ-জি নীতিমালা প্রকাশ করেছে। আমাদের বিশ্বাস সরকার এখন সুনির্দিষ্ট বাজার প্রস্তুত ও ফাইভ-জি রোল আউটের জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয় বিবেচনা করে পরবর্তী ধাপগুলো নির্ধারণ করবে এবং নির্দেশনা দেবে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সাধারণ গ্রাহকের জন্য প্রয়োজনীয় গতির ইন্টারনেট আমাদের অপারেটররা সফলতার সঙ্গে সরবরাহ করতে পারছে। তবে, ফাইভ-জি মূলত শিল্প-কারখানার উৎপাদন সহায়ক হিসেবে আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম। এছাড়া, নতুন প্রযুক্তি উন্মুক্ত করার পূর্বশর্ত হিসেবে সব অংশীজনকে সঙ্গে নিয়ে একটি পরিপূর্ণ কারিগরি প্রস্তুতি সবার আগে প্রয়োজন। একইসঙ্গে মনে রাখতে হবে, নতুন প্রযুক্তির জন্য একটি ঈপ্সিত ও সুনির্দিষ্ট বাজার প্রস্তুত করাও অপরিহার্য, যেন তা ব্যবসায়িকভাবে সফল বা টেকসই হয়।’

জানা গেছে, ফাইভ-জি’র রূপরেখা তৈরির পুরো প্রক্রিয়া সম্পাদন করতে গঠিত কমিটিকে ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কথা ছিল এ সময়ের মধ্যে কমিটি একটি চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করে দেবে। তার আগে তৈরি হবে খসড়া রূপরেখা। কিন্তু সেই গাইড লাইন বা রূপরেখা তৈরি হয়েছে সম্প্রতি।

তবে সরকার-সংশ্লিষ্টরা বরাবরই বলছেন, আমরা ২০২১ সালের মধ্যে ফাইভ-জি চালু করবো। এরপর রূপরেখা অনুযায়ী, তা সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। প্রাথমিক রূপরেখায় বলা হয়, ‘ফাইভ-জি আগে ঢাকায় শুরু হবে, ২০২৩ সালের মধ্যে বিভাগীয় শহরে এবং ২০২৬ সালের মধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে পৌঁছে যাবে।’