দেশে থ্রি-জি ফোনের উৎপাদন ও আমদানি বন্ধ!

দেশে গেলো প্রায় ৮ মাস ধরেই থ্রিজি স্মার্টফোনের উৎপাদন ও আমদানি প্রায় বন্ধ। এই সময়ের মধ্যে গত মে মাসে কেবল ৪ হাজার থ্রিজি মোবাইল সেট দেশীয় কারখানায় তৈরি হয়েছে, আমদানি হয়নি একটিও। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে থ্রিজি নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সরকারের পূর্ণ মনোযোগ এখন ফোরজি নেটওয়ার্ক নিয়ে। সারাদেশে এই নেটওয়ার্ক পৌঁছাতে চায় সরকার। এরসঙ্গে রয়েছে কাঙ্ক্ষিত ফাইভ-জি সেবাদানের প্রস্তুতিও। থ্রিজি সেটের উৎপাদন ও আমদানি বন্ধ করে দিয়ে অনেকটা সেই পথেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি হাঁটছে বলে জানা গেছে।

থ্রিজি বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আমরা থ্রিজি রাখার কোনও প্রয়োজনীয়তা দেখছি না। আমরা চাই ব্যবহারকারীরা ফোরজি ব্যবহার করুক। আগামীতে টুজি ও ফোরজিই থাকবে। দেশের প্রায় সব জায়গায় ফোরজি পৌঁছে গেছে। এর গতিও বেশি। বাজারে ফোরজি সেটের সরবরাহ বেশিই রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘মোবাইল অপারেটরগুলোকে টেক নিউট্রালিটি দেওয়া হয়েছে। সব ব্যান্ডেই সেবা দেওয়া যাবে। সে কারণে থ্রিজি ব্যান্ডের স্পেক্ট্রাম আর দরকার হবে না। সব মিলিয়েই আমাদের মনে হয়েছে, থ্রিজি থাকার কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই।’

প্রসঙ্গত, দেশে মোবাইল ফোন তৈরির জন্য ১৪টি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স পেয়েছে। এরমধ্যে ১০-১১টি কারখানায় মোবাইল তৈরি হচ্ছে বলে জানা গেছে। এসব কারখানাতেই বন্ধ রয়েছে থ্রিজি ফোনের উৎপাদন। ফোরজি ফোনের দিকেই সবার আগ্রহ। গত বছরের এপ্রিল মাসে জিএসএমএ (গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশনস অ্যাসোসিয়েশন) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন দেখা গেছে, বাংলাদেশের স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা মোট মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর ৪১ শতাংশ। তবে মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী ও মোবাইল উৎপাদকরা দাবি করেছেন, প্রতিবেদনের এই তথ্য সঠিক নয়। এই হার অনেক কম। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর মধ্যে ৪৭ শতাংশ টুজি ব্যবহার করেন। ২৫ শতাংশ থ্রিজি ও ২৮ শতাংশ ফোরজি ব্যবহার করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের কারখানাগুলোতে গত আট মাসে ৭৭ লাখ ৭৭ হাজার ফোরজি মোবাইল ফোন সেট তৈরি হয়েছে। এদিকে একই সময়ে আমদানি হয়েছে ৪২ হাজার ৮৬০টি ফোরজি সেট। এরমধ্যে দেশীয় কারখানায় সবচেয়ে বেশি ফোরজি ফোন তৈরি হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে, ১৩ লাখ ৬৮ হাজার। আর সবচেয়ে কম তৈরি হয়েছে মে মাসে, ৬ লাখ ১৫ হাজার।

অপরদিকে একই সময়ে দেশে ফাইভ-জি ফোন তৈরি হয়েছে ২ লাখ ১ হাজার পিস সেট। গত এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ ৫২ হাজার এবং গত আগস্টে সর্বনিম্ন ৩ হাজার সেট তৈরি হয়। যদিও গত জুলাই মাসে দেশের কারখানায় কোনও ফাইভ-জি সেট তৈরি হয়নি বলে জানা গেছে। তবে একই সময়ে (জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত) দেশে ফাইভ-জি সেট আমদানি হয়েছে ২ হাজার ৮৫৩ পিস। গত মার্চ মাসে সর্বোচ্চ ১ হাজার ১১৪ পিস এবং গত জুলাই মাসে সর্বনিম্ন ৭০টি মোবাইল সেট আমদানি করা হয় বলে সূত্র জানায়।

দেশে টেকনো, আইটেল ও ইনফিনিক্স মোবাইলফোনের উৎপাদক ট্রানশান বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী রেজওয়ানুল হক জানান, তারা ইতোমধ্যে থ্রিজি ফোনের উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন। আগামীতে আরও কোনও সম্ভাবনা নেই উৎপাদনের।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বেই থ্রিজি ফোনের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে আমাদেরও বন্ধ করতে হয়েছে। এখন শুধু টুজি আর ফোরজি ফোন সেট তৈরি হচ্ছে।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোবাইল সেটের পরিসংখ্যান দেখেই বোঝা যায় সরকারের সব মনোযোগ ফোরজি ও ফাইভ-জির দিকে। তারা আরও বলেছেন, এই পরিসংখ্যান দেখে এও বোঝা যায়, দেশের কারখানাগুলোর সক্ষমতা আছে ফোরজি ও ফাইভ-জি সেট তৈরির। এটা একটা ইতিবাচক দিকও বটে।

খাত সংশ্লিষ্টদের অভিমত, একটি মোবাইলের লাইফ সাইকেল ৩ থেকে চার বছর। সেই হিসাবে আগামী ৩-৪ বছর পরে আর দেশে থ্রিজি মোবাইল ফোন সেট দেখা যাবে না।