X
বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
৪ আষাঢ় ১৪৩২

হুজুগে ইলিশ আর চন্দনা একাকার

শফিকুল ইসলাম
১৩ এপ্রিল ২০১৭, ২১:১৬আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০১৭, ২০:২৬

 

ইলিশ ও চন্দনা পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর দেশব্যাপী ইলিশের চাহিদা বাড়লেও এবারের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। নানা কারণেই এবার ইলিশের চাহিদা আগের যে কোনও বছরের তুলনায় কম। পহেলা বৈশাখ রাজধানীজুড়ে সুপার শপ, বাজার, পাড়া মহল্লা, অলিগলি এখন রীতিমতো ইলিশের বাজার। অনেকেই পাড়া মহল্লার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে বিক্রি করলেও কেউ কেউ বিক্রি করছেন পায়ে হেঁটে। সুযোগ বুঝে ইলিশের ঝাঁপিতে নিয়ে এসেছেন চন্দনাও। চন্দনা সামুদ্রিক মাছ। দেখতে অনেকটা ইলিশের মতো। ইলিশ সম্পর্কে ধারণা না থাকলে চেনা যাবে না কোনটা ইলিশ, কোনটা চন্দনা। পহেলা বৈশাখের হুজুগে এককাকার হয়ে গেছে চন্দনা আর ইলিশ। বিক্রি হচ্ছে ইলিশের সঙ্গে চন্দনাও।

মাছ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চন্দনা হচ্ছে গরিবের ইলিশ। অনেকে এ মাছকে সার্ডিন, চকোরি বা ফুইট্টা ইলিশ নামেও চেনে। এটি কোনও নদীর মাছ নয়। সাগরে জেলেদের জালে ধরা পড়ে। দেখতে অনেকটাই ইলিশের মতো। এ কারণেই এর নাম ‘চন্দনা ইলিশ’। সামুদ্রিক মাছ বলে দামও কছুটা কম। তাই বেচাবিক্রি হচ্ছে। দাম কম বলে এর আসল ক্রেতা হচ্ছে রাজধানীতে বসবাসকারী নিম্নআয়ের মানুষ। অনেকে ইলিশ আর চন্দনার পার্থক্য চেনেন না বলে ইলিশের দামেই কিনে নিচ্ছেন তারা। আর এই সুযোগটি নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। চারটা ইলিশের মধ্যে হয়তো একটা, আবার ৬টার মধ্যে ২টা চন্দনা ইলিশ মিশিয়ে বিক্রি করছে ইলিশের দরে।  

মাছ বিষয়ে অভিজ্ঞরা বলছেন, ইলিশের দেশের বাজারে নকল হচ্ছে ইলিশ। গুণে-মানে ‘মাছের রাজার ইলিশে’র ধারে কাছে না থাকলেও বিদেশি এই মাছগুলো শুধু চেহারার মিলের কারণে ইলিশের নামেই বিক্রি হচ্ছে। আমদানিকৃত এই মাছের গায়ের রং ইলিশের মতো নয়। এই মাছের চোখ বড়। সাইজে এবং দেখতে অনেকটাই ইলিশের কাছাকাছি হওয়ার সুবাদে এর সুবিধা নিচ্ছেন মাছ ব্যবসায়ীরা। প্রতিবছরই এমনটি হয়। সামুদ্রিক ইলিশ বলে চালিয়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

বিদেশি মাছের অন্যতম আমদানিকারক কাওরানবাজারের দেলোয়ার হোসেন জানান, 'সার্ডিন', 'চাকোরি' ও 'ডটেড গিজার্ড শাড'  এক ধরনের সামুদ্রিক মাছ। প্রতি কেজিতে ৬টি থেকে শুরু করে ১৬টি পর্যন্ত ওঠে এই মাছ। ভিয়েতনাম মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিকেজি ১০০ টাকা দরে এই মাছ সিলেট ও উত্তরবঙ্গে সরবরাহ করি। যা খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হয় সর্বোচ্চ ১৮০ টাকা দরে। তবে পহেলা বৈশাখের আগে এর দাম বাড়ে। পাশাপাশি মিয়ানমার থেকেও কিছু ইলিশ আমদানি হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা ইলিশের দামেই এই মাছ বিক্রি করছেন। উৎপাদনকারী দেশগুলোর জনগণ এসব মাছ খায় না। তাই খুব কম দামে অর্থাৎ মাত্র ১ ডলার ৫ সেন্ট মূল্যে মাছগুলো আমদানি করা যায়।’

কাস্টমস সূত্র জানায়, ইলিশের মতো দেখতে এসব সামুদ্রিক মাছ নিয়ে ক্রেতারা বিভ্রান্ত বা প্রতারিত হলেও মাছগুলো আমদানি নিষিদ্ধ নয়। তবে ইলিশ ও সার্ডিন-চাকোরির কাস্টমস ট্যারিফ ভিন্ন। ছোট আকারের ইলিশের ট্যারিফ প্রতি টনে ৭৫০ ডলার, সার্ডিনে ৪০০ ডলার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন আমদানিকারক বলেন, ‘বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে মিয়ানমার থেকে বিপুল পরিমাণ ইলিশ আমদানি করা হয়েছে। এসব আমদানি করা ইলিশ চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যাচ্ছে।’

সরেজমিনে সোমবার সকালে রাজধানীর শাহজাহানপুর ও মালিবাগে দেখা যায়, রাস্তায় রাস্তায় বিক্রি করছে জাটকার (ছোট ইলিশ) মতো দেখতে এক ধরনের মাছ। বিক্রির ফাঁকে ফাঁকে বিক্রেতা পাতিল থেকে বের করে ধুয়ে মাছগুলো আবার পাতিলে ভরছেন। কাছে গিয়ে পরিচয় জানতে চাইলে বলেন, তারা কিশোরগঞ্জ থেকে এসেছেন। কয়েক দিন ধরে তারা শহরের অলিগলিতে ঘুরে ঘুরে এসব মাছ বিক্রি করছেন। কী মাছ জানতে চাইলে বলেন, সমুদ্রের ‘চন্দনা’ ইলিশ। পরিষ্কার করে ধোয়ার পর মাছগুলো দেখতে ছোট জাটকার মতো চকচক করছে। জাটকা ভেবেই লোকজন কিনছেন বলে জানালেন বিক্রেতারা।

মাছ বিক্রি দেখতে মাছওয়ালাকে ঘিরে দাড়িয়ে থাকা স্থানীয় একজন বললেন, দু’দিন আগে গ্রাম থেকে তিনি ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের চারটি মাছ ৫০০ টাকায় কিনেছেন। স্বাদ ভালোই। যাদের ইলিশ কেনার সামর্থ্য নেই, তারাই অপেক্ষাকৃত কম দামে এই চন্দনা ইলিশই ভরসা।

উল্লেখ্য, গত ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৩ লাখ ৬০ হাজার টন ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৮৬ হাজার টন। ২০১০-১১ অর্থবছরে ৩ লাখ ৪০ হাজার টন ইলিশ উৎপাদন হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩ লাখ ৪০ হাজার টনের বেশি ইলিশ উৎপাদন হয়েছে বলে সরকারিভাবে দাবি করা হয়। এ বছর ৪ লাখ টনেরও বেশি ইলিশ উৎপাদন হবে বলে আশা করছে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়।

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঢাকায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে
ঢাকায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে
ট্রাম্পের হুমকি সত্ত্বেও ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
ট্রাম্পের হুমকি সত্ত্বেও ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
টিসিবির কার্ড বিতরণে টাকা আদায়ের অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার
টিসিবির কার্ড বিতরণে টাকা আদায়ের অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার
রাঙামাটিতে বেড়েছে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ, আক্রান্ত ৬৬১
রাঙামাটিতে বেড়েছে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ, আক্রান্ত ৬৬১
সর্বাধিক পঠিত
ইসরায়েলি হামলার পর তেহরানের হাসপাতালে ‘রক্তস্নান’
ইসরায়েলি হামলার পর তেহরানের হাসপাতালে ‘রক্তস্নান’
সিরিয়ার আকাশ দিয়ে ইরানে বোমা ফেলছে ইসরায়েল: নীরব সরকার, বাড়ছে ক্ষোভ
সিরিয়ার আকাশ দিয়ে ইরানে বোমা ফেলছে ইসরায়েল: নীরব সরকার, বাড়ছে ক্ষোভ
ম্যাক্রোঁকে আক্রমণ ট্রাম্পের, বললেন যুদ্ধবিরতি নয়, বড় কিছু ঘটছে
ম্যাক্রোঁকে আক্রমণ ট্রাম্পের, বললেন যুদ্ধবিরতি নয়, বড় কিছু ঘটছে
‘ভয় দেখিয়ে জুলাই গণহত্যার বিচার থেকে দূরে সরানো যাবে না’
‘ভয় দেখিয়ে জুলাই গণহত্যার বিচার থেকে দূরে সরানো যাবে না’
জামায়াতের অনুপস্থিতির বিষয়ে যা বললেন প্রেস সচিব
ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকজামায়াতের অনুপস্থিতির বিষয়ে যা বললেন প্রেস সচিব