X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবাসীদের টাকা দেশে পাঠাতে যত ঝামেলা

গোলাম মওলা
২৩ জুলাই ২০১৭, ১৯:৫৩আপডেট : ২৩ জুলাই ২০১৭, ১৯:৫৫

প্রবাসীদের টাকা দেশে পাঠাতে যত ঝামেলা দেশে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে বৈধ চ্যানেলের ঝামেলা এড়াতে অবৈধ চ্যানেল বেছে নিচ্ছেন প্রবাসীরা। বিদেশে অবস্থিত ব্যাংকগুলোর এক্সচেঞ্জ হাউজের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মানি লন্ডারিং বিষয়ে অতিরিক্ত কড়াকড়ির কারণে রেমিটেন্স পাঠানো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আগে যেখানে খুব সহজেই রেমিটেন্স পাঠানো যেত, এখানে সেখানে নানা ধরনের প্রশ্ন করা হয়। এ কারণে একদিকে অব্যাহতভাবে কমছে প্রবাসী আয়, অন্যদিকে বাড়ছে হুন্ডির ঘটনা। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ একাধিক সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। 

এ প্রসঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের মধ্যপ্রাচ্যের এক্সচেঞ্জ হাউজের একজন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠাতে কিছু নিয়ম মানতে হয়। প্রবাসীদের অনেকেই সেই নিয়ম মানতে নারাজ।’ তিনি বলেন, ‘বিকাশসহ হুন্ডি চক্রের আধিপত্য বাড়ায় প্রবাসীদের একটা বড় অংশ  ব্যাংকের এক্সচেঞ্জ হাউজেই আসেন না।

জানা গেছে, ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠাতে হলে আয়ের বৈধ সনদ দিতে হয়। একইভাবে পাঠানো অর্থের সুবিধাভোগীদের পুরো তথ্য দিতে হয়। এর ফলে অনেকেই ব্যাংকিং চ্যানেলকে হয়রানি মনে করে বিকাশসহ হুন্ডিতে টাকা পাঠাতে বেশি আগ্রহী। ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, ‘যেসব প্রবাসী বৈধতা পায়নি, তারা টাকা আয় করলেও ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠাতে পারেন না। ফলে  অধিকাংশ প্রবাসী বৈধ চ্যানেলের পরিবর্তে অবৈধ পন্থা বেছে নিচ্ছেন।’

আবার হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠালে ব্যাংকের চেয়ে ভালো দাম পাওয়া যায়। পাশাপাশি কোনও চার্জ দিতে হয় না। এখানেই শেষ নয়, প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ ব্যাংক থেকে তুলতে গিয়ে আরেক ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়। সময়ক্ষেপণ হয়। ব্যাংকের রেট কম হওয়া ও মাসুল কাটার কারণে টাকার পরিমাণ কমে যায়। অথচ হুন্ডিতে পাঠালে একদিকে সময় বাঁচে, টাকাও পাওয়া যায় তুলনামূলক বেশি। অন্যদিকে হুন্ডিওয়ালারা প্রবাসী শ্রমিকের সরাসরি বাড়িতে গিয়ে টাকা দিয়ে আসেন।

ইসলামী ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বৈধ পথে অর্থ পাঠানোর ঝামেলা এড়াতে এ জন্য অধিকাংশ প্রবাসীই অবৈধ পথ ব্যবহারে উৎসাহিত হচ্ছে। এতে সহজ ও স্বল্প সময়ে নিকটজনের কাছে অর্থ পৌঁছে যাচ্ছে।’

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টার প্রেস নেটওয়ার্কের (আইপিএন) গবেষক আনোয়ারুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী তেলের দাম কমে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যে এক ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে ওইসব দেশ মন্দার মধ্যে পড়েছে। অথচ বাংলাদেশের কর্মীরা ওইসব দেশেই বেশি রয়েছে। অন্যদিকে পশ্চিমা বিশ্বের নানা সংকটে ইউরো ও পাউন্ডের দাম পড়ে যাওয়ায় প্রবাসীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এসব কারণে একটু বাড়তি লাভের আশায় ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ না পাঠিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ব্যাংকিং চ্যানেল ও খোলাবাজারে ডলারের দামের পার্থক্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ টাকার বেশি। ব্যাংকে প্রতি ডলারের মূল্য গড়ে ৮০ টাকা হলেও খোলাবাজারে তা ৮৪ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। এ জন্য বেশি টাকার আশায় অনেকেই অবৈধ পথ বেছে নিচ্ছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিটেন্সের পরিমাণ দিন দিন কমছে। ২০১৬ সালে ব্যাংকিং চ্যানেলে এসেছে ৫০ দশমিক ৭২ শতাংশ। যা ২০১৩ সালে ছিল ৬৭ দশমিক ৩২ শতাংশ। ২০১৩ সালে মোবাইল ব্যাংকিং-এ কোনও অর্থ না আসলেও ২০১৬ সালে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন বা মানিগ্রামের মাধ্যমে এসেছে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ আর মোবাইল ব্যাংকিং বা বিকাশের মাধ্যমে ১৪ দশমিক ৩১ শতাংশ এসেছে।

এদিকে রেমিটেন্স কমার জন্য ব্যাংকের মাসুল ও চার্জকে দায়ী করে করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ চার্জ কমানোর জন্য সম্প্রতি রেমিটেন্স আহরণকারী শীর্ষ ২০ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আরও বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না, যা নিয়ে উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি-নির্ধারকরা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে আমরা বেশ কিছুদিন ধরেই নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘হুন্ডি ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের অপব্যবহার রোধে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এখন  রেমিটেন্স বাড়ানোর বিষয়ে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আমরা ধারাবাহিক বৈঠক করছি।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রবাসী আয়ে বেশি হোঁচট খাওয়া দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, কুয়েত, যুক্তরাজ্য ও ওমান।

প্রসঙ্গত, প্রতিবছর দেশে যে পরিমাণ রেমিটেন্সের আন্তঃপ্রবাহ ঘটে তার প্রায় ৮০ শতাংশ আসে ওই সাত দেশ থেকে। তবে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের প্রধান শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে প্রবাসী আয় কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে।

এদিকে রেমিটেন্স প্রবাহ কমলেও জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) তথ্য বলছে, গত এক বছরে জনশক্তি রফতানি বেড়েছে ৩৬ শতাংশ। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রফতানি হয়েছে সাত লাখ ৫৭ হাজার ৭৩১ জন। যা আগের বছরে ছিল ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮৮১ জন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, গত পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিটেন্স এসেছে গত অর্থবছরে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবাসী আয় কমেছে সাড়ে ১৪ শতাংশ।  এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য থেকে এসেছে ৭৩০ কোটি ৭১ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ কম। সৌদি আরব থেকে এসেছে ২২৬ কোটি ৭২ লাখ ডলার। দেশটি থেকে রেমিটেন্স কমেছে ২৩ শতাংশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৪২ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল। গত অর্থবছরে তা ১৬৮ কোটি ৮৮ লাখ ডলারে নেমেছে। অন্যদিকে মালয়েশিয়া থেকে রেমিটেন্স কমেছে ১৭ শতাংশ। কাতার ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশ থেকে কমেছে।

/এমএনএইচ/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
অবশেষে চট্টগ্রামে স্বস্তির বৃষ্টি
অবশেষে চট্টগ্রামে স্বস্তির বৃষ্টি
আদালতে ড. ইউনূস
আদালতে ড. ইউনূস
চীনের দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক ধসে নিহত ৩৬
চীনের দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক ধসে নিহত ৩৬
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
সর্বাধিক পঠিত
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!