X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

যে কারণে রাজস্ব আদায়ে পিছিয়ে আয়কর খাত

শফিকুল ইসলাম
২৩ জুন ২০১৮, ১৪:৪৩আপডেট : ২৩ জুন ২০১৮, ১৯:০৭

আয়কর মেলা, ফাইল ছবি বিশ্বের অন্যান্য দেশে সরকারের রাজস্ব আদায়ের প্রধান খাত আয়কর হলেও বাংলাদেশে এ চিত্র ভিন্ন। বাংলাদেশে এখনও রাজস্ব আদায়ের প্রধান খাত মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট। জনবল সংকট, সঠিক মনিটরিং না করা, দক্ষতা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবই এর জন্য দায়ী বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে ভোটের রাজনীতিতে আয়কর আদায়কে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীনরা কখনও সরাসরি ভোটারদের স্পর্শ করতে চায় না। এসব কারণে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছে না আয়কর খাত।

বর্তমান দশকে সরকারের রাজস্ব আদায়ের গড় প্রবৃদ্ধি ১৭ শতাংশের কিছু বেশি, যা গত ৪ দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। মোট রাজস্বের ৮৫ শতাংশই আদায় হয় এনবিআর নিয়ন্ত্রিত খাত থেকে। এনবিআর নিয়ন্ত্রিত খাতগুলোর মধ্যে মূলত আয়কর, আমদানি ও রফতানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক— এই চারটি খাত সরকারের রাজস্ব আদায়ের প্রধান খাত হলেও এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ খাত হচ্ছে ভ্যাট। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আয়কর খাত।  

সরকার কেন আয়কর বাদ দিয়ে ভ্যাটকে রাজস্ব আদায়ের প্রধান খাত হিসেবে মনে করে বা গুরুত্ব দেয় জানতে চাইলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘এ দেশে এখনও আয়কর দেওয়ার কালচার সেভাবে গড়ে ওঠেনি। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগও সেভাবে প্রস্তুত নয়। তবে সম্প্রতি তরুণদের মধ্যে আয়কর দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তরুণরা আয়কর দিচ্ছেন। এ ছাড়া ভ্যাট সহজে আদায়যোগ্য। এসব কারণেই সরকারের রাজস্ব আদয়ের প্রধান খাত এখনও ভ্যাট।’

এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, সরকার আয়কর থেকে রাজস্ব বাড়ানোর নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে নতুন করদাতার সন্ধানে নেমেছে এনবিআর। আগে যেখানে ৭ থেকে ৮ লাখ মানুষ ট্যাক্স দিতো, সেখানে বর্তমানে নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা ৩২ লাখে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে।

তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ১৬ কোটি মানুষের দেশে কমপক্ষে এক কোটি মানুষের আয়কর দেওয়ার কথা। সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী ৩২ লাখ মানুষও যদি আয়কর দেয়, তাহলেও তা খুব সামান্য। নতুন করদাতা শনাক্ত ও তাদের কাছ থেকে আয়কর আদায়ের তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ নেই বলেও জানান তারা।

ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে আয়কর দেওয়ার প্রবণতা কম। সরকারের দক্ষতাও কম। এ ছাড়া সরকারের ভ্যাট আদায় করা সহজ, তাই ভ্যাটই রাজস্ব আদায়ের প্রধান খাত।’

অন্যদিকে আয়করকে প্রধান খাত করার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যাও রয়েছে বলে মনে করেন রাজনীতিবিদরা। তাদের মতে, আয়কর প্রত্যক্ষভাবে করদাতাকে স্পর্শ করে, যা ভ্যাট করে না। তাই রাজনীতির স্বার্থে বলুন, আর ভোটের স্বার্থে বলেন, রাজনৈতিক দল কখনও ভোটারকে সরাসরি কর দেওয়ার ক্ষেত্রে স্পর্শ করতে চায় না। এ কারণেই আয়কর রাজস্ব আদায়ের প্রধান খাত হয়নি।

এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, আগামী ৫ বছরের মধ্যে নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা এক কোটি এবং রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ৮০ লাখে উন্নীত করা যাবে। আয়কর ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা, বিশেষ করে কর প্রদানে তরুণদের— যাদের বয়সসীমা ৪০ এর নিচে— স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অত্যন্ত ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। বর্তমানে রাজস্ব আদায়ের প্রধান খাত ভ্যাট হলেও অদূর ভবিষ্যতে আয়করই হবে রাজস্ব আদায়ের প্রধান খাত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ মনে বলেন, ‘এনবিআরের সেই জনবল নেই যা দিয়ে তারা আয়করদাতার সংখ্যা বাড়াবে। এ ছাড়া তাদের দক্ষতাও নেই। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বারবারই বলা হচ্ছে এনবিআরের দক্ষতা বেড়েছে।’

ট্যাক্সনেট বাড়াতে না পারলে আয়কর থেকে রাজস্ব তারা করতে পারবে না বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে এনবিআর শর্টকার্ট পদ্ধতিতে রাজস্ব আদায়ের পথে চলে। যারা নিয়মিত ট্যাক্স দিচ্ছেন এনবিআর তাদের পেছনেই ছুটছে।’ ট্যাক্সনেট বাড়লে রাজস্ব বাড়বে বলে বিশ্বাস করেন ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘ট্যাক্সনেট বাড়ানোর সহজ উপায় হচ্ছে নতুন করদাতা খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেওয়া। এক্ষেত্রে সব টিআইএনধারী অবশ্য ট্যাক্স দেয় না। তবে টিআইএনধারীর বাড়ি বাড়ি যাওয়ার তো দরকার নেই। এনআইডিতে সব ধরনের তথ্য আছে। তাই সেখান থেকেই তো টিআইনধারী ট্যাক্স দেওয়ার যোগ্য কিনা তা জানা যায়।’

ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গ্রামের একটি মুদি দোকানের মালিকও তার ব্যাবসা সম্প্রসারণের জন্য ৫ কোটি টাকা লোন নিচ্ছেন। তাই জেলা, উপজেলা এমনকি গ্রামের পর্যায়েও ট্যাক্স দেওয়া লোকের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু তারা সেখানে যাচ্ছে না।’

ড. নাজনীন আখতার বলেন, ‘গ্রাম পর্যায়ের করযোগ্য মানুষের কাছে ট্যাক্সের লোকজন যেতে পারবেন তখনই, যখন সেখানে ট্যাক্সের অফিস থাকবে। এখনও ট্যাক্সের অফিস সে পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।

এ ২০১৭-১৮ অর্থবছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা। পরবর্তীতে তা সংশোধিত বাজেটে পুনর্নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সংশোধিত বাজেটে আয়কর ও অন্যান্য খাতে ৭৮ হাজার কোটি টাকা এবং ভ্যাট খাতে টার্গেট ছিল ৮৩ হাজার কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে আয়কর খাতে ৬৫ হাজার ৯৩২ কোটি এবং মূল্য সংযোজন কর (মূসক) খাতে ৬৩ হাজার ৯০২ কোটি টাকা।

আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সরকারের মোট রাজস্ব আয়ের টার্গেট ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ভ্যাট। এ খাতে সরকারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ১০ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে ৩৭ দশমিক ৩ শতাংশ। এর পরে যৌথভাবে আয়কর ও অন্যান্য প্রধান খাত থেকে সরকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করেছে ১ লাখ ২ হাজার ২০১ কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে এ খাতের হার ৩৪ শতাংশ।

 

/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মিল্টন সমাদ্দার ৩ দিনের রিমান্ডে
মিল্টন সমাদ্দার ৩ দিনের রিমান্ডে
আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ড সিরিজে ডাক পেলেন রউফ-হাসান
আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ড সিরিজে ডাক পেলেন রউফ-হাসান
জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেই আ.লীগ ক্ষমতায় এসেছে: ওবায়দুল কাদের
জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেই আ.লীগ ক্ষমতায় এসেছে: ওবায়দুল কাদের
গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ নয়, উন্নয়নের অপপ্রচার করলে ব্যবস্থা
মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের সভায় তথ্য প্রতিমন্ত্রীগণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ নয়, উন্নয়নের অপপ্রচার করলে ব্যবস্থা
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ