X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

জটিলতা কেটেছে, শিগগিরই মাওয়া প্রান্তে দৃশ্যমান হবে পদ্মা সেতু

শফিকুল ইসলাম
১৫ জানুয়ারি ২০১৯, ২০:৪৮আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০১৯, ২১:৪৬





পদ্মা সেতু (ছবি: নাসিরুল ইসলাম) সব জটিলতা কেটে গেছে। পদ্মা সেতুর ২০টি পিলারের কাজ ৬টি পাইলের মাধ্যমে শেষ করা গেলেও জটিলতা দেখা দিয়েছিল ৬ এবং ৭ নম্বর পিলারে। তাই নকশায় পরিবর্তন এনে ৬টি পাইলের পরিবর্তে ৭টি পাইলে নির্মিত হবে সেতুর এ দুটি পিলার। পরিবর্তিত নকশা মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) অনুমোদন করেছে পদ্মা বহুমুখী সেতু কর্তৃপক্ষ। ফলে মাওয়া প্রান্তে সেতু দৃশ্যমান হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার।
নদীর তলদেশের মাটি ও নদী শাসনের জটিলতার কারণেই এই পিলার দুটির নকশায় পরিবর্তন আনা হলো। এ জটিলতার কারণে এতদিন মাওয়া প্রান্তে সেতুতে কোনও স্প্যান বসানো সম্ভব হয়নি। ফলে এ প্রান্তে সেতুও দৃশ্যমান ছিল না, যা হয়েছে তা সেতুর জাজিরা পয়েন্টে। সেতুর এই প্রান্তে এরই মধ্যে ৫টি স্প্যান বসানোয় ৭৫০ মিটার দৃশ্যমান হয়েছে। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার।
সূত্র জানিয়েছে, জাজিরা পয়েন্টের সবগুলো পিলার ৬টি পাইলের ওপর দাঁড় করানো সম্ভব হলেও মাওয়া প্রান্তে নদীর তলদেশের মাটি ও নদী শাসনগত জটিলতায় তা করা যায়নি। তাই এখানে এই নকশায় পরিবর্তন আনা জরুরি হয়ে পড়ে। নকশা পরিবর্তনের বিষয়টি অনুমোদনের মধ্য দিয়ে এ প্রান্তের ৬ এবং ৭ নম্বর পিলার দাঁড় করানো হবে ৭টি পাইলের ওপর।
মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে নির্মিত পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের সাইট অফিসের একটি সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছে, দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প পদ্মা সেতুর ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম এ অনুমোদন দেন।
জানতে চাইলে পদ্মা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের বলেন, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ৬ ও ৭ নম্বর পিলার স্থাপিত হবে। আগে প্রকল্পের পিলারগুলো ৬টি পাইলের সাহায্যে একটি মূল পিলার স্থাপন করা হতো। এখন ৬টির স্থলে ৭টি পাইলের মাধ্যমে সেতুর ৬ ও ৭ নম্বর পিলার স্থাপন করা হবে। এ দুটি পিলারের নির্মাণকাজ শেষ হলে মাওয়ায় স্প্যান বসানো শুরু হবে। মাঝ নদীতে ১২ ও ১৩ নম্বর পিলার দুটিও প্রস্তুত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু এবার দৃশ্যমান হবে মাওয়া প্রান্তে। শুরুতে এই প্রান্তকে ঘিরে সাজানো হয়েছিল সব পরিকল্পনা। তবে মাওয়া প্রান্তের ২২টি পিলারের নিচের মাটির গঠনগত জটিলতায় পাল্টে যায় সব পরিকল্পনা। আপাতত নকশা জটিলতার সমাধান মিলেছে। মাওয়া প্রান্তের ২, ৩, ৪ ও ৫ নম্বর পিলারের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এই পিলারগুলোর ওপরে পাইল ক্যাপও বসানো হয়েছে। চাইলে যেকোনও দিন এই চারটি পিলারের ওপর স্প্যান বসিয়ে দেওয়া সম্ভব। তবে ৬ এবং ৭ নম্বর পিলার জটিলতায় সবকিছু আটকে ছিল।
সূত্র জানায়, কারিগরি জটিলতায় পরের স্প্যানগুলো বসাতে সময় বেশি লাগবে। কারণ, সেতুর ৪২টি পিলারের প্রতি ছয়টি পিলারকে একটি মডিউল হিসেবে ধরে পুরো সেতুকে সাতটি ভাগে ভাগ করে চলছে সেতুর কাজ। সেই হিসাবে ৭ নম্বর মডিউলের পাঁচটি স্প্যানের কাজ শেষ হয়েছে। এখন বিচ্ছিন্নভাবে স্প্যান না বসিয়ে একটি করে মডিউলের কাজ ধরা হবে বলে জানিয়েছেন পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম।
তিনি জানান, এখন আর বিচ্ছিন্নভাবে স্প্যান বসানোর কাজ হবে না। মাওয়া প্রান্তে পুরোদমে কাজ হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর এক নম্বর স্প্যানটি বসানো হয় ৩৭ নম্বর পিলারের ওপর। তার পাশের ৩৬, ৩৫ ও ৩৪ নম্বর পিলারের কাজও শেষের দিকে। সব মিলে একসঙ্গে ১০টি পিলারের কাজ চলছে। সেতুর পিলারের আকৃতি অনেকটাই ইংরেজি ‘এস’ অক্ষরের মতো দেখতে। এর জন্য প্রতিটি স্প্যানের আলাদা ডিজাইন করতে হচ্ছে।
সূত্র আরও জানিয়েছে, পদ্মা সেতুর মালপত্র সংরক্ষণের জন্য মাওয়া প্রান্তে ইয়ার্ডে স্থান সংকুলানের বিষয়টি বিবেচনা করে চীন থেকে সবগুলো স্পানের টুকরো এখনও দেশে আনা হয়নি। তবে যেসব স্প্যানের কাজ শেষ হয়েছে সেগুলো আগে বসানোর পরিকল্পনা করছে সেতু কর্তৃপক্ষ।
জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, কন্ডিশন অনুযায়ী চীন থেকে স্প্যানগুলো আগে আসবে। নদীর কন্ডিশন, আবহওয়ার আচরণ— সবকিছু মিলিয়ে কাজ করতে হবে। এখানে তো আর গায়ের জোরে কিছু করা যাবে না।
সূত্র জানায়, পরিবর্তিত ডিজাইন অনুযায়ী ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের আরও ৪টি করে পাইল স্থাপন এবং গভীরতায় খানিকটা কম-বেশি করা হচ্ছে। এমন সিদ্ধান্তে সব বিশেষজ্ঞ একমত হওয়ার পরই পদ্মা সেতুর কাজে নতুন গতি আসে। তাই মাওয়া প্রান্তেও কাজ শুরু হয় পুরোদমে। ২, ৩, ৪ ও ৫ নম্বর পিলার ছাড়াও ১৩ নম্বর পিলারের কাজ শেষ। ১৪ নম্বর পিলারের কাজও চূড়ান্ত পর্যায়ে।
জানা গেছে, ১৬টি পাইলের মধ্যে ১২টির কাজ শেষ হয়েছে। তবে এই পাইল বসানোর পরও পিলার উঠতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে। তাই এক প্রান্ত থেকে স্প্যান বসানোয় দেরি হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর প্রথম স্প্যানটি বসে। এরপর ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারের ওপর দ্বিতীয় স্প্যান, ১১ মার্চ ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলারের ওপর তৃতীয় স্প্যান, ১৩ মে ৪০ ও ৪১ নম্বর পিলারের ওপর চতুর্থ স্প্যান এবং সবশেষ গত ২৯ জুন ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারের ওপর পঞ্চম স্প্যান বসানো হয়।

/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হারিয়ে গেছে প্রাণ, নদীর বুকে বুনছে ধান
হারিয়ে গেছে প্রাণ, নদীর বুকে বুনছে ধান
টিভিতে আজকের খেলা (৬ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৬ মে, ২০২৪)
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
সুন্দরবনে আগুন ছড়ানো রুখতে দেওয়া হয়েছে বেরিকেট
সুন্দরবনে আগুন ছড়ানো রুখতে দেওয়া হয়েছে বেরিকেট
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?