X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ গ্রন্থে অবশেষে জায়গা পেলেন বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা

গোলাম মওলা
২৪ এপ্রিল ২০১৯, ২১:৫১আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ২৩:১৭

রঙ বদলেছে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ নতুন গ্রন্থের

অবশেষে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ গ্রন্থে জায়গা পেয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। শুধু তা-ই নয়, সংশোধিত ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বইয়ে স্থান পেয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি। বইটির এই সংস্করণ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে তদানীন্তন পাকিস্তানি স্বৈরশাসক আইয়ুব খান এবং পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের ছবি। ইতোমধ্যে নতুন করে ছাপানো ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বই প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র এই তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সরকারের প্রধান নির্বাহীর নির্দেশে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ গ্রন্থটি নতুন করে প্রকাশের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তিনি বলেন, আগের গ্রন্থের ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধন করে নতুন করে একটি উন্নত ও পরিমার্জিত সংকলন করা হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, প্রথমবার মুদ্রিত ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর ছবি না ছাপলেও সেখানে  স্থান পেয়েছিল পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এবং পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের ছবি। বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বাধ্য হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গ্রন্থটি বাজারজাত করা থেকে বিরত থাকে। এরপর বইটির ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধন করে একটি উন্নত ও পরিমার্জিত সংকলন করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি রিভিউ কমিটি গঠন করা হয়। এই রিভিউ কমিটির সহায়তায় বঙ্গবন্ধুর ছবি অন্তর্ভুক্ত করে গ্রন্থটি নতুনভাবে প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক ।

‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ নতুন গ্রন্থে জায়গা পেলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

এ প্রসঙ্গে রিভিউ কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ ব্যাংক বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি মো. নেছার আহাম্মদ ভুঁঞা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে। আগের বইতে যেসব ত্রুটি ছিল তা দূর করার পাশাপাশি নতুন বইতে আমরা বঙ্গবন্ধুর অবস্থান জোরালোভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। 

নতুন গ্রন্থটিতে দেখা যায় বঙ্গবন্ধুর তিনটি ছবি ছাপানো হয়েছে। এরমধ্যে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক: সূচনা পর্ব’ অধ্যায় ১-এ জাতির পিতার একটি পোট্রেট এবং ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) স্বাধীনতাকামী লাখ লাখ মানুষের উদ্দেশে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের সেই ছবি রয়েছে। এছাড়া ‘অর্থনীতি ও ব্যাংক ব্যবস্থার পুনর্গঠন (১৯৭২-১৯৭৫)’- শীর্ষক তৃতীয় অধ্যায়ে বঙ্গবন্ধুর আরেকটি ছবি স্থান পেয়েছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর হাতে বাংলাদেশের প্রথম কারেন্সি নোট ও মুদ্রা হস্তান্তর করছেন ব্যাংকের গভর্নর আ ন ম হামিদুল্লাহ। পাশে দাঁড়িয়ে আছেন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ও শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম।

প্রথমবারের মুদ্রিত ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ গ্রন্থের সম্পাদনা পরিষদের প্রধান ও সাবেক নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহার নামও নতুন বইতে বাদ দেওয়া হয়েছে। আগের বইতে সম্পাদক হিসাবে শুভঙ্কর সাহার বক্তব্য থাকলেও সংশোধিত নতুন বইতে ‘মুখবন্ধ’ নামে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের বক্তব্য স্থান পেয়েছে। নতুন গ্রন্থে বাংলাদেশ ব্যাংক: সূচনাপর্ব শিরোনামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি স্থান পেয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের নামকরণ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের ছবি, বাংলাদেশ ব্যাংক চত্বরের বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ছবি স্থান পেয়েছে নতুন গ্রন্থে।

‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ নতুন গ্রন্থে জায়গা পেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়

নতুন গ্রন্থে ছবিসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরা হয়েছে। একইভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবিও স্থান পেয়েছে। এছাড়া ক্রমানুসারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নরদের বিভিন্ন ভূমিকার কথা তুলে ধরা হয়েছে। নতুন গ্রন্থের প্রচ্ছদ আগের মতো থাকলেও রঙ বদলে গেছে। পৃষ্ঠা সংখ্যা আগের চেয়ে কমে গেছে। তবে অধ্যায় আগের গ্রন্থের চেয়ে একটি বেড়েছে। আগের গ্রন্থে অধ্যায় ছিল ৮টি। নতুন গ্রন্থে অধ্যায় রয়েছে ৯টি। 

আগের গ্রন্থের মতোই নতুন গ্রন্থের প্রকাশক হিসাবে নাম রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক জি এম আবুল কালাম আজাদের। আগের গ্রন্থের গবেষণা ও পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন এবং সম্পাদনা কমিটিতে জি এম আবুল কালাম আজাদের নাম না থাকলেও নতুন গ্রন্থের রিভিউ কমিটিতে তার নাম রয়েছে।

জানা গেছে, নতুন গ্রন্থের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিভিন্ন লেখা সন্নিবেশিত করার ক্ষেত্রে রিভিউ কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক জি এম আবুল কালাম আজাদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

এর আগে প্রথম মুদ্রিত বইয়ে জাতির পিতার ছবি না ছাপানোয় অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল হাইকোর্ট। তখন আদালত বলেছেন, প্রথম মুদ্রিত বইয়ে জাতির পিতার ছবি না ছাপানো অমার্জনীয় ভুল। তার ছবি খুঁজে না পাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত। গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর ছবি অন্তর্ভুক্ত না করায় ইতিহাস বিকৃতি হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৫ মার্চ ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন হয়। 

জানা গেছে,  বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি তৈরি ও প্রকাশনার সিদ্ধান্ত হয় ২০১৩ সালের জুন মাসে। এ বিষয়ে তখন উপদেষ্টা কমিটি ও সম্পাদনা নামে দুটি কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটি দুটি পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত করার পর গ্রন্থটি ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত হয়। প্রকাশের পরপরই এতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হওয়ায় গভর্নর ফজলে কবির এর বিতরণ বন্ধ করার নির্দেশ দেন। 

‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ পুরনো বইয়ের প্রচ্ছদ। ভুল তথ্য থাকার অভিযোগ ওঠায় গ্রন্থটি বাতিল করে নতুন করে ছাপানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের দুঃখ প্রকাশ: প্রথমবারের মতো ২০১৭ সালের প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ গ্রন্থে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় এবং কম গুরুত্বপূর্ণ তদানীন্তন পাকিস্তানি স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের ছবি অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় অসাবধানতাবশত ভুলের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক দুঃখ প্রকাশ করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘২০১৮ সালের ২৫ মার্চ  ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচনের পর উক্ত ব্যত্যয় পরিদৃষ্ট হলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে ২০১৮ সালের ১০ মে গ্রন্থটির বিতরণ বন্ধ করে দেওয়া হয়।  গ্রন্থটি রিভিউ করে সংশোধিত আকারে প্রকাশের জন্য ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি রিভিউ কমিটি গঠন করা হয়। ওই বছরের ৩১ অক্টোবর গ্রন্থটি বাতিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি বিতরণকৃত কপিগুলো ফেরত আনার জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়, যা এখনও অব্যাহত আছে।’

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ গ্রন্থের সংশোধিত প্রকাশনা মার্চ, ২০১৯ ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিসহ ইতিহাস সম্পৃক্ত যৌক্তিক ছবি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস গ্রন্থে ইতিহাস বিকৃতি’র ঘটনার মামলার রায় ঘোষণার জন্য আগামী ১৯ জুন দিন নির্ধারণ করেছেন হাইকোর্ট। বুধবার (২৪ এপ্রিল) বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আল আমিন সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যোবায়ের রহমান।

 

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কেমন আছেন মিল্টনের আশ্রমের আশ্রিতরা
কেমন আছেন মিল্টনের আশ্রমের আশ্রিতরা
ভুয়া পুলিশ সদস্য আটক
ভুয়া পুলিশ সদস্য আটক
আয়ারল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ স্কোয়াডে অ্যাডায়ার ভ্রাতৃদ্বয়
আয়ারল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ স্কোয়াডে অ্যাডায়ার ভ্রাতৃদ্বয়
করবস্থানের মাটি ভরাটের কাজে শ্রমিক নিয়োগে ঘুষ!
অতিদরিদ্রের কর্মসংস্থান কর্মসূচিকরবস্থানের মাটি ভরাটের কাজে শ্রমিক নিয়োগে ঘুষ!
সর্বাধিক পঠিত
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা