X
বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫
১৮ আষাঢ় ১৪৩২

কতটা চাপ সামলাতে পারবে ব্যাংক

গোলাম মওলা
০৬ এপ্রিল ২০২০, ১৪:০৩আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২০, ১৪:৩৩

টাকা

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার পাঁচটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই প্যাকেজ বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব ব্যাংকের। যদিও ব্যাংকগুলোতে এখন তারল্য সংকট আছে। সামনে এই সংকট আরও বাড়বে। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্যাকেজ বাস্তবায়নে ব্যাংক খাতের সক্ষমতা আছে। কিন্তু ব্যাংকগুলোকে যথেষ্ট চাপ পেতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের বড় ধরনের সাপোর্ট লাগবে।

এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সবকটি প্যাকেজই ঋণনির্ভর। আর তা দেওয়া হবে ব্যবসায়ীদের। কিন্তু শঙ্কার বিষয় হলো, বর্তমানে ব্যাংকগুলোর তারল্য পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়। আমানতের সুদ হার কমে যাওয়ায় আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। তিনি বলেন, ‘এই প্যাকেজ বাস্তবায়ন করতে হলে এখন ব্যাংকগুলোকে আগে টাকা দিতে হবে। তারপর তারা ঋণ দেবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক আলাদা তহবিল গঠন করতে পারে। বড় আকারে পুনঃঅর্থায়ন কর্মসূচি বা স্কিম চালু করতে হবে, যাতে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট না হয়। অথবা টাকা বা নোট ছাপিয়ে সরকার বিভিন্ন ব্যাংকে আমানত হিসাবে জমা রাখতে পারে। এতেও তারল্য সংকট দূর হবে।’ তবে এই প্যাকেজগুলো থেকে ঋণ প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে পায়, সেইদিকে নজর দেওয়া জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তবে টাকা না ছাপিয়ে অর্থাৎ বাড়তি অর্থ সরবরাহ না করেও প্যাকেজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এর গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে সরকারের বড় বড় প্রকল্প বন্ধ রয়েছে। কাজেই সেই সব প্রকল্পের টাকা ব্যাংককে দিলেই সমস্যার সমাধান হবে। তবে কোনও কোনও ব্যাংকের কাছে যে পর্যাপ্ত টাকা নেই, এটা মাথায় রেখেই বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার যদি ব্যাংকগুলোকে অর্থ সহায়তা না দেয়, তাহলে এই প্যাকেজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ‘দেখা গেলো অর্থ পাওয়া গেলো, কিন্তু খরচ করা হলো ভুল জায়গায়, তাহলেও প্যাকেজের উদ্দেশ্য নষ্ট হবে।’ তিনি উল্লেখ করেন, বড় বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেখানে একটু নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কোনোভাবেই যারা  স্বভাবগত খেলাপি, বা ইচ্ছাকৃত খেলাপি, তারা যেন এই প্যাকেজ থেকে ঋণ না পায়।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, করোনায় প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি বড় পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্যাকেজ বাস্তবায়নে এই তহবিল থেকে প্রায় ৬৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের বক্তব্য হলো—আগামী দুই-একদিনের মধ্যে এ ব্যাপারে একটি নীতিমালা তৈরি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া, সরকার চলতি অর্থবছরের বাজেট থেকে আরও  পাঁচ হাজার কোটি টাকা অর্থ সহায়তা দেবে।

এছাড়া প্যাকেজের ঋণের বিপরীতে সুদ বাবদ ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে সরকার ভর্তুকি হিসেবে দেবে ২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। বাকি ২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা পরিশোধ করবেন শিল্পোদ্যোক্তারা।

প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড়সহ সব শ্রেণির উদ্যোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে রবিবার (৫ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার নতুন প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছেন। এর আগে রফতানিমুখী শিল্পের জন্য পৃথকভাবে ৫ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন।

জানা গেছে, পৌনে ৭৩ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজের আওতায় যে ঋণ দেওয়া হবে, সেক্ষেত্রে সুদহার হবে ৯ শতাংশ। এর মধ্যে শিল্পঋণের ক্ষেত্রে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ সুদ পরিশোধ করবে সরকার। এ জন্য সরকার ২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেবে। এর মধ্যে শিল্পঋণের সুদে ভর্তুকি ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা, এসএমই ঋণের ভর্তুকির পরিমাণ হবে ১ হাজার কোটি টাকা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইডিএফ তহবিলের সুদের ভর্তুকি ৩১০ কোটি টাকা, বাকি ভর্তুকি দেওয়া হবে প্যাকেজের অন্যান্য খাতে।

শিল্পঋণের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। এর মাধ্যমে শিল্পোদ্যোক্তারা তাদের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য চলতি মূলধন হিসেবে ঋণ নেবেন।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ। এক্ষেত্রে সুদ বাবদ ১ হাজার কোটি টাকা সরকার ভর্তুকি দেবে।

ব্যাক টু ব্যাক এলসির আওতায় শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের রফতানি ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইডিএফ) ৩৫০ কোটি মার্কিন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা হয়েছে। দেশীয় মুদ্রা তহবিলের আকার ৪২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সঙ্গে নতুন যোগ হচ্ছে আরও ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। ব্যবসায়ীরা এই তহবিল থেকে ঋণ নিলে সুদের হার ছিল ২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এতে মোট সুদ আসে ১ হাজার ১৬০ কোটি ২৫ লাখ টাকা। কিন্তু ব্যবসায়ীদের স্বার্থে সরকার সুদের হার দশমিক ৭৩ শতাংশ কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। ফলে  সুদ  কমবে ৩১০ কোটি টাকা। এই ৩১০ কোটি টাকাও ভর্তুকি হিসেবে সরকার পরিশোধ করবে।

উল্লিখিত প্যাকেজ ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রেফারেন্স স্কিম নামে ৫ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ সুবিধা চালু করবে। এই তহবিলের সুদের হার ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া রফতানিমুখী শিল্পের জন্য আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ। শিল্প মালিকরা কেবলমাত্র সচল কারখানার শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার জন্য ২ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দিয়ে এ ঋণ নিতে পারবেন।

/এপিএইচ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিবিয়ানায় ফুরিয়ে আসছে গ্যাসের মজুত: শঙ্কার মুখে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা
বিবিয়ানায় ফুরিয়ে আসছে গ্যাসের মজুত: শঙ্কার মুখে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা
সাবেক এমপি নাঈমুর রহমান দুর্জয় গ্রেফতার
সাবেক এমপি নাঈমুর রহমান দুর্জয় গ্রেফতার
মার্কিন অস্ত্র সহায়তা স্থগিতে রুশ হামলা জোরদারের শঙ্কায় ইউক্রেন
মার্কিন অস্ত্র সহায়তা স্থগিতে রুশ হামলা জোরদারের শঙ্কায় ইউক্রেন
বিশেষ অভিযানে সারা দেশে গ্রেফতার ১৩০৫
বিশেষ অভিযানে সারা দেশে গ্রেফতার ১৩০৫
সর্বাধিক পঠিত
বরখাস্ত হলেন সেই ম্যাজিস্ট্রেট তাবাসসুম ঊর্মি
বরখাস্ত হলেন সেই ম্যাজিস্ট্রেট তাবাসসুম ঊর্মি
পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, তদন্তে কমিটি
পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, তদন্তে কমিটি
কেমন কেটেছিল ডিবি হেফাজতে ছয় সমন্বয়কের সাত দিন
কেমন কেটেছিল ডিবি হেফাজতে ছয় সমন্বয়কের সাত দিন
কার দোষে শ্রমবাজার বন্ধ হয় জানালেন আসিফ নজরুল
কার দোষে শ্রমবাজার বন্ধ হয় জানালেন আসিফ নজরুল
‘দেশের ৩২টি বিমা কোম্পানি উচ্চ ঝুঁকিতে’
‘দেশের ৩২টি বিমা কোম্পানি উচ্চ ঝুঁকিতে’