রাজধানীর মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পের ব্যয় ৪৪৬ কোটি ২০ লাখ টাকা বেড়ে ১ হাজার ২১৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগে এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ছিল ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। একই সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমাও দেড় বছর বাড়িয়ে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। এ প্রকল্পটি ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়ন করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার কথা ছিল।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেন। বৈঠক শেষে একনেকে নেওয়া সিদ্ধান্ত সমূহ পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের জানান।
রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় নতুন করে কোনও শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠা করা যাবে না বলেও একনেকের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এ এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভবন তৈরির নতুন সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তেজগাঁও এলাকায় শিল্প-কারখানা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এলইডি লাইট (সিকেডি) অ্যাসেমব্লিং প্ল্যান্ট প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হলো। তবে তেজগাঁও এলাকায় আর কোনও শিল্প-কারখানা তৈরি করা যাবে না। কারণ এলাকাটিতে অনেক কোলাহল হচ্ছে। আমরা নতুন নতুন ইকোনোমিক জোন করে দিচ্ছি। ওইসব স্থানে শিল্প-কারখানা নির্মাণ করতে হবে।’
মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়ে বলেন, ‘প্রকল্পের সময় ও ব্যয় আর বাড়ানো হবে না। এই সময়ের মধ্যে কোয়ালিটি নিশ্চিত করে প্রকল্পটি জনসাধারণের জন্য ২০১৭ সালের ৩০ জুন নাগাদ উন্মুক্ত করে দিতে হবে।’
বৈঠকে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এ প্রকল্পের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) দুটি প্রতিষ্ঠান আলাদাভাবে বিদ্যুৎ কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
একনেক বৈঠকে মোট ১০টি প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় ৪ হাজার ৮৩০ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য ৭৭৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা বাকি অর্থ সরকারি অর্থায়ন ৩ হাজার ৬০৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। নিজস্ব তহবিল থেকে ৪৫১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, পরিকল্পনা সচিব সফিকুল আযম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কানিজ ফাতেমা ও সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র সদস্য ড. শামসুল আলম।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার মগবাজার-মৌচাক-সাতরাস্তা রোড এলাকায় যানজট হ্রাস পাবে, ভ্রমণ সময় কমবে, যা সার্বিকভাবে ঢাকা মহানগরীর বাসযোগ্য পরিবেশকে উন্নত করবে। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে- বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প, রংপুর জোন, বাস্তবায়নে ব্যয় হবে এক হাজার ৩৩৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা, বাংলাদেশের নদীবক্ষের বালিতে মূল্যবান খনিজের উপস্থিতি নির্ণয় ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রকল্প, ব্যয় হবে ৩৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা; এলইডি লাইট (সিকেডি) অ্যাসেমব্লিং প্ল্যান্ট ইন ইটিএল, ব্যয় হবে ৩৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা; সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতিগণের জন্য সুউচ্চ আবাসিক ভবন নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত), ব্যয় হবে ১৭৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা; নীলফামারী-জলঢাকা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, ব্যয় হবে ৬৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা; শহীদ এম সিরাজগঞ্জে মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ ও ৫০০ বেডের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৬৩৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা; মান্দা শহীদ কামরুজ্জামান টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট স্থাপন, ব্যয় হবে ৭৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা টাকা; ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন সহায়তা (দ্বিতীয় পর্যায়), ব্যয় হবে ৬৪ কোটি ১০ টাকা এবং কক্সবাজার বিমান বন্দর উন্নয়ন (প্রথম পর্যায়) প্রকল্প, ব্যয় হবে এক হাজার ১৯৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
জানা গেছে, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারটি ২০১৫ ডিসেম্বর সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। ২০১৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৫৪ শতাংশ কাজ। এসময় পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে মাত্র ৩৮২ কোটি ২৯ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। যা মোট বরাদ্দের ৫০ শতাংশ।
/এসআই/এফএস/