X
বুধবার, ০১ মে ২০২৪
১৮ বৈশাখ ১৪৩১

এলসিতে বিদেশি ক্রেতার শর্ত: যা বলছে বিজিএমইএ

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ২২:৩০আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:০৪

বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক কেনার ক্ষেত্রে এক বিদেশি ক্রেতার ঋণপত্র বা এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) নিয়ে ‘বিভ্রান্তি’ তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেছে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনের সভাপতি ফারুক হাসান বুধবার (৬ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানান। তিনি বলেছেন, ওই এলসির একটি ধারার ব্যাখ্যায় ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে’ বলে উদ্বেগ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে, যা সঠিক নয়। 

বিবৃতিতে ফারুক হাসান বলেন, বিশ্ব বাণিজ্যের দৃশ্যপট দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। মানবাধিকার এবং পরিবেশগত ডিউ ডিলিজেন্স ক্রমবর্ধমানভাবে অগ্রাধিকার পাচ্ছে। অন্যদিকে ভূ-রাজনৈতিক বিষয়গুলোও বাণিজ্যকে প্রভাবিত করছে। যেহেতু বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাণিজ্যের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল, তাই বাণিজ্য নীতি সংক্রান্ত  যেকোনও নতুন বিষয় আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। তাই বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট করার জন্য আমি এই বিবৃত্তি দেওয়ার তাগিদ অনুভব করছি।

তিনি বলেন, সম্প্রতি বিজিএমইএ-এর এক সদস্যকে বিদেশি ক্রেতার পাঠানো একটি লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) এর অনুলিপি আমাদের নজরে এসেছে। এলসি’তে নিম্নলিখিত বিষয়টি রয়েছে—

‘আমরা জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, যুক্তরাজ্য কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা আরোপিত কোনও দেশ, অঞ্চল বা দলের সঙ্গে লেনদেন প্রক্রিয়া করবো না। নিষেধাজ্ঞার কারণগুলোর জন্য আমরা কোনও বিলম্ব, নন-পারফরমেন্স বা/ তথ্য প্রকাশের জন্য দায়ী নই।’

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, এই ধারাটির ব্যাখ্যায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে বলে উদ্বেগ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে, যা সঠিক নয়। এটি উল্লেখ্য যে এই এলসি একটি নির্দিষ্ট ক্রেতার কাছ থেকে এসেছে এবং এটি কোনও দেশের দ্বারা সংবিধিবদ্ধ আদেশ বা বিজ্ঞপ্তি নয়। সুতরাং এটিকে বাংলাদেশের ওপর বাণিজ্য ব্যবস্থা প্রয়োগ বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের বার্তা হিসেবে ভুল ব্যাখ্যা করা উচিত হবে না।

এটিকে আরও স্পষ্ট করে বলছি যে স্বতন্ত্র ক্রেতা/প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ নীতি এবং প্রোটোকল থাকতে পারে, তবে একটি এলসি কপি বা একটি ব্যক্তিগত বাণিজ্যিক ইনস্ট্রুমেন্ট কোনও অফিসিয়াল ঘোষণা নয়। তাছাড়া, বিজিএমইএ আমাদের কূটনৈতিক মিশন থেকে বা কোনও অফিসিয়াল সোর্স থেকে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা বা বাণিজ্য ব্যবস্থা আরোপের কোনও তথ্য পায়নি।

বাংলাদেশে শ্রমিকদের কল্যাণে সরকারি ও বেসরকারি নানা উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শ্রমিকদের অধিকার ও কল্যাণকে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছি। বাংলাদেশ সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে একটি শ্রম রোডম্যাপ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং ২০১৩, ২০১৮ এবং ২০২৩ সালে শ্রম আইনের সংশোধনসহ এটি বাস্তবায়নের জন্য সমস্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।... শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য কেন্দ্রীয় তহবিলে অবদান রাখা আইনত বিধান করা হয়েছে; ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই তহবিলে শিল্প প্রায় ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অবদান রয়েছে। জিআইজেড এবং আইএলও এর সহযোগিতায় এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম (ইআইএস) এখন পোশাক শিল্পে পাইলটিং করা হচ্ছে, যা নজির বাংলাদেশে আর কোথাও নেই। নির্বাচিত শ্রমিকদের অংশগ্রহণ কমিটি এবং নিরাপত্তা কমিটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

বিশ্বের সেরা পারফর্মিং বেটার ওয়ার্ক কারখানাগুলোর মধ্যে কয়েকটি বাংলাদেশে রয়েছে। আইএলও এর সঙ্গে আমরা ‘প্রমোটিং সোশ্যাল ডায়ালগ অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশন ইন দ্য বাংলাদেশ আরএমজি সেক্টর (এসডিআইআর)’ শীর্ষক একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা/প্রকল্প সম্পন্ন করেছি। কারখানায় বিদ্যমান কমিটিগুলোকে শক্তিশালী করতে, বিশেষ করে অংশগ্রহণ কমিটি, নিরাপত্তা কমিটি এবং হয়রানি বিরোধী কমিটি শক্তিশালী করার জন্য বিজিএমইএ জিআইজেড এর সহযোগিতায় পাইলটিং ভিত্তিতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি কারখানাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।...এই সব উদ্যোগের লক্ষ্য হচ্ছে শ্রমিকদের অধিকারগুলো সমুন্নত রাখা এবং শ্রমিকদের কল্যাণ আরও বৃদ্ধি করা।

শ্রমিকদের আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে ২০১০ সাল থেকে ন্যূনতম মজুরি ছয় গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে ফারুক হাসান বলেন, মজুরির ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট এবং ২টি উৎসব ভাতা (প্রতিটি এক মাসের মূল মজুরির সমতুল্য) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে; শ্রমিকদের চিকিৎসা ছুটি এখন অর্ধেক মজুরির পরিবর্তে ১৪ দিনের জন্য পূর্ণ মজুরিতে দেওয়া হচ্ছে; বার্ষিক ছুটির বিধান সংশোধন করা হয়েছে। এটি প্রতি ১৮ দিনের কাজের জন্য ১ করা হয়েছে, যা আগে প্রতি ২২ দিনের জন্য ১ দিন করা ছিলো; শ্রমিকরা আইন অনুসারে তাদের মোট বার্ষিক ছুটির ৫০ শতাংশ নগদায়ন করতে পারে, যা আগে আইনে ছিল না।

সবুজ রূপান্তরের ক্ষেত্রেও আমরা এগিয়ে আছি। বাংলাদেশ এখন ২০৪টি লিড প্রত্যয়িত পরিবেশবান্ধব কারখানার আবাসস্থল, যার মধ্যে ৭৪টি প্ল্যাটিনাম রেটেড এবং ১১৬টি গোল্ড রেটেড । আরও ৫০০ কারখানা সার্টিফিকেশনের জন্য প্রক্রিয়াধীনে রয়েছে। বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ১০০টি সর্বোচ্চ মানের লীড পরিবেশবান্ধব কারখানার মধ্যে ৫৪টি বাংলাদেশে রয়েছে। শুধু তাই নয়, বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ১০টির মধ্যে ৯টি এবং বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ২০টি লীড প্রত্যয়িত কারখানার মধ্যে ১৮টি বাংলাদেশে রয়েছে। এবং এটি সত্যিই গর্বের বিষয় যে বিশ্বের সর্বোচ্চ স্কোরিং কারখানাটি ১০৪ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশে রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের অনেক রফতানি বাজারের জন্য মানবাধিকার এবং পরিবেশগত নিরাপত্তা ক্রমবর্ধমানভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার আমাদের বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ইউএস প্রেসিডেন্সিয়াল মেমোরান্ডাম ‘কর্মীর ক্ষমতায়ন, অধিকার এবং বিশ্বব্যাপী চলমান লেবার ক্যাম্পেইনের’ সঙ্গে উচ্চ শ্রমমান জুড়ে দিয়ে স্বাক্ষর করেছে, যা এনগেজমেন্ট এবং প্রয়োগের দিক থেকে বেশ স্বতন্ত্র বলে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে। আমরা এর তাৎপর্যকে সম্মান করি এবং এর মূল নীতিগুলোর সঙ্গে একাত্মতা খুঁজে পাই। যদিও স্মারকলিপিতে 'কূটনৈতিক ও সহায়তার সম্পূর্ণ ব্যবস্থা এবং যথাযথ আর্থিক নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্য জরিমানা, ভিসা নিষেধাজ্ঞা এবং অন্যান্য পদক্ষেপ' সহ বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে; তবে এটি বাংলাদেশের জন্য গৃহীত নয়, বরং এটি শ্রমিক অধিকার ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা অবস্থান।

আমরা অতীতেও একই ধরনের উদাহরণ দেখেছি; এক ক্রেতার কাছ থেকে আসা একটি এলসি ক্লজ উদ্ধৃত করে এটিকে বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা হিসাবে সাধারণীকরণ করা হয়েছে এবং আমরা এ ধরনের ভুল তথ্য উপস্থাপনের বিরুদ্ধে সব সময়ই আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছি। 

তিনি বলেন, আমরা বাণিজ্যিক কাগজপত্র ও উপকরণে এই ধরনের ধারা অন্তর্ভুক্ত করাকে সমর্থন করি না, যদি এটি শুধু বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনুশীলন করা হয়। বিজিএমইএ তার সদস্যদের, যারা ওপরে উল্লিখিত এই জাতীয় ধারাসহ এলসি গ্রহণ করে, তাদের সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ড(গুলো) এর সঙ্গে যোগাযোগ করে এর একটি স্পষ্টীকরণ চাওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। যদি ধারাটি কেবল বাংলাদেশি সরবরাহকারীদের অনুকূলে জারি করা এলসিগুলোতে থাকে, তবে এটি নৈতিকতা লঙ্ঘন করে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, আমরা আমাদের সদস্য কারখানাগুলোকে বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে নেওয়ার জন্য এবং প্রয়োজনে এই ধরনের ক্রেতাদের সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি পর্যালোচনা/পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করবো।

/জিএম/এমএস/এফএস/
সম্পর্কিত
‘রানা প্লাজার দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কর্মক্ষেত্রকে নিরাপদ করতে হবে’
রাশিয়ায় তৈরি পোশাক ও পাটজাত পণ্য রফতানি বাড়াতে চায় সরকার
ব্রাজিলকে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি তৈরি পোশাক আমদানির আহ্বান
সর্বশেষ খবর
বঙ্গবন্ধু শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন: এমপি কাজী নাবিল
বঙ্গবন্ধু শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন: এমপি কাজী নাবিল
ত্যাগের মহিমায় স্বামী বিবেকানন্দ মানবসেবা করে গেছেন: মেয়র তাপস
ত্যাগের মহিমায় স্বামী বিবেকানন্দ মানবসেবা করে গেছেন: মেয়র তাপস
জাকের পার্টির ‘বিশ্ব ইসলামি সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত
জাকের পার্টির ‘বিশ্ব ইসলামি সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত
গাজায় ইউক্রেনের চেয়েও বেশি ধ্বংসস্তূপ রয়েছে: জাতিসংঘ
গাজায় ইউক্রেনের চেয়েও বেশি ধ্বংসস্তূপ রয়েছে: জাতিসংঘ
সর্বাধিক পঠিত
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
‘মানুষের কত ফ্রেন্ড, কাউকে পাশে পাইলে আমার এমন মৃত্যু হইতো না’
‘মানুষের কত ফ্রেন্ড, কাউকে পাশে পাইলে আমার এমন মৃত্যু হইতো না’
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা