ব্যাংক ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে অস্থাবর সম্পত্তিকে জামানত হিসেবে গ্রহণের জন্য প্রণীত আইন বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন দেশের এসএমই (ক্ষুদ্র ও মাঝারি) উদ্যোক্তারা। মঙ্গলবার (২৪ জুন) রাজধানীতে এসএমই ফাউন্ডেশন ও ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক কর্মশালায় তারা এ দাবি জানান।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন আইএফসি’র কান্ট্রি ম্যানেজার মার্টিন হল্টম্যান। প্রধান অতিথি ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. মুসফিকুর রহমান। এতে আরও বক্তব্য দেন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজিম হাসান সাত্তার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার।
বক্তারা বলেন, দেশের এসএমই উদ্যোক্তাদের একটি বড় অংশ গ্রামীণ, অনানুষ্ঠানিক ও নারী খাতভিত্তিক। এসব উদ্যোক্তার স্থাবর সম্পত্তি না থাকায় তারা ব্যবসা শুরু কিংবা সম্প্রসারণের জন্য ব্যাংক ঋণ থেকে বঞ্চিত হন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)-এর ২০২০ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় ৮০ শতাংশ এসএমই উদ্যোক্তারই স্থাবর সম্পত্তি নেই। এ প্রেক্ষাপটে সরকার ২০২৩ সালে Secure Transactions (Movable Assets) Act পাস করে, যাতে যন্ত্রপাতি, কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন অস্থাবর সম্পত্তিকে জামানত হিসেবে গণ্য করার সুযোগ রাখা হয়।
তবে বাস্তবে এ আইনের প্রয়োগ এখনও পর্যাপ্ত নয়। ব্যাংকারদের মধ্যে এ বিষয়ে যথাযথ ধারণা ও প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে বলে কর্মশালায় উল্লেখ করা হয়। ফলে আগের মতোই ঋণ প্রাপ্তিতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন উদ্যোক্তারা। এ অবস্থায় ব্যাংকার, আইনজীবী ও উদ্যোক্তাদের মাঝে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
কর্মশালায় আরও জানানো হয়, এমএসএমই খাত হচ্ছে একটি শ্রমনিবিড় ও স্বল্প পুঁজিনির্ভর খাত, যা স্বল্প উৎপাদন সময়ের মাধ্যমে জাতীয় আয় ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৩ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশে প্রায় ৭৮ লাখ কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে যা মোট শিল্প প্রতিষ্ঠানের ৯৯ শতাংশেরও বেশি। এই খাতে দেশের শিল্প খাতের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৮৫ শতাংশ এবং প্রায় আড়াই কোটির বেশি মানুষ নিয়োজিত।
বর্তমানে এসএমই খাত দেশের জিডিপিতে প্রায় ৩২ শতাংশ অবদান রাখছে। শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির লক্ষ্য অর্জনে এই খাতের বিকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসএমই ফাউন্ডেশন ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে জাতীয় শিল্পনীতি ২০২২, এসএমই নীতিমালা ২০১৯ এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ২০৩০ বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে।
এ পর্যন্ত ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নমূলক কর্মসূচির সুবিধা পেয়েছেন প্রায় ২০ লাখ এসএমই উদ্যোক্তা, যাদের ৬০ শতাংশই নারী।