X
রবিবার, ২৫ মে ২০২৫
১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রোজা সামনে রেখে নিত্যপণ্যের বাজারে অতিরিক্ত মুনাফার মহোৎসব

শফিকুল ইসলাম
২৭ মে ২০১৬, ০৯:০১আপডেট : ২৭ মে ২০১৬, ১৬:৩৭

নিত্যপণ্যের বাজার বাজারে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস। সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত মজুদের কথা উল্লেখ করে আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়বে না বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু রমজানের আগেই নিত্য পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় শঙ্কিত সাধারণ মানুষ।

রমজান শুরু হতে এখনও বাকি প্রায় ১০দিন। এর মধ্যেই বাড়ছে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম। প্রতি বছরের মতো এবছরও একটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট রমজানে বাজারে কৃত্রিম সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির গুজব ছড়িয়েছে। যে কারণে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। প্রয়োজনীয় সব পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে – সরকারের পক্ষ থেকে বারবার এ তথ্য জানানো হলেও তা কাজে আসছে না। ধর্মীয় ইস্যুকে সামনে রেখে কিছু অসাধু মৌসুমী ব্যবসায়ী এই ফায়দা-লুটে নিচ্ছেন।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, একমাত্র চাল ছাড়া সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে। মসুর ডাল, চিনির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ছোলার দাম। সরকার ও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বার বার বলা হচ্ছে দেশে ছোলার চাহিদা ৬০ হাজার টন, এই মুহূর্তে মজুদ আছে ২ লাখ ৬০ হাজার টন ছোলা। বিশাল মজুদ থাকা সত্ত্বেও রমজানের দোহাই দিয়ে গত এক মাসে ৫২ টাকা কেজি দরের ছোলা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি দরে। বাজারে এতোবড় একটি অনিয়ম হলেও এ নিয়ে বলার কেউ নাই।

আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে ৯০ টাকা কেজি দরের মসুর ডাল ৩ মাসের ব্যবধানে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি দরে। একইভাবে ৪০ টাকা কেজি দরের চিনি ৬০ টাকা, ৩২ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, ৯০ টাকা কেজি দরের রসুন ১৯০ থেকে ৩০০ টাকা, ১৭০- ১৮০ টাকা কেজি দরের শুকনা মরিচ ২৭০ টাকা, ৮৫ টাকা লিটারের সয়াবিন তেল ৯৬ টাকা লিটার দরে বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে বেড়েছে সব ধরনের মাংসের দাম। রমজানকে কেন্দ্র করে ৪০০ টাকা কেজি দরের গরুর মাংস ৪৮০ টাকা, ৫০০ টাকা কেজি দরের খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৯০ টাকা কেজি দরে। সুযোগ পেয়ে বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দামও। ১৪০ টাকা কেজি দরের ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে।       

কাওরান বাজারে পাইকারি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম লালু জানান, বর্তমানে ৫০ কেজির চিনির বস্তার দাম ২ হাজার ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যেখানে এক মাস আগে প্রতি বস্তা ১ হাজার ৮৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তার মতে, চিনির কেজি এখন ৪৯ টাকা দরে বিক্রি হলেও গত এক দেড় মাস আগে তা ৩৭ থেকে ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

দেশে এখন পেঁয়াজের মৌসুম। মাঠ থেকে পেঁয়াজ উঠছে। সেই পেঁয়াজ নিয়েও উদ্বিগ্ন কৃষকরা। বাম্পার ফলন হওয়ায় তারা দামও কম পাচ্ছেন। কুষ্টিয়ার কৃষকরা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, তারা ৬ থেকে ৮ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। আর ফরিদপুরের কৃষকরা পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ১০ টাকা কেজি দরে। কিন্তু বাজার থেকে চড়া দামে কিনতে হচ্ছে খুচরা ক্রেতাদের। বিভিন্ন অজুহাতে পেঁয়াজের সরবরাহ কমিয়ে বাজারে পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। আর এই সংকটকে কাজে লাগিয়ে একটি সিন্ডিকেট ইচ্ছে মতো দামে বিক্রি করছে পেঁয়াজ। রাজধানীর বাজারগুলোয় প্রকারভেদে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে।  

কোনও অজুহাতেই ৬ থেকে ১০ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হতে পারে না বলে মনে করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শওকত আলী ওয়ারেছী। এটি তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।  বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি জানিয়েছেন, উৎপাদিত পেঁয়াজের সঠিক দাম না পেয়ে অনেক কৃষক হতাশায় ভুগছেন। তারা অনেকেই আগামী বছর পেঁয়াজ উৎপাদন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাজারের এই অস্থিরতার বিষয়ে মনিটরিং বাড়ানো হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে বাজারের এমন পরিস্থিতিতে নিত্যপণ্যের মূল্য যৌক্তিক ও সহনীয় রাখতে, অস্বাভাবিক মজুদ ঠেকাতে এবং সরবরাহ ঠিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নতুন করে ১৪টি মনিটরিং কমিটি গঠন করলেও নানা অজুহাতে তা বর্তমানে বাজারে কার্যকর নয়। তাই আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে বাজার মনিটরিং সিস্টেম জোরদার করতে মনিটরিং কমিটিগুলোকে পুনর্গঠন করার উদ্যোগ নিলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তা চূড়ান্ত করেনি। ৬ মাসের জন্য গঠিত মনিটরিং কমিটিগুলোর মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৩০ জুন।

বর্তমানে অধিকাংশ কমিটির প্রধানের পদই খালি। তাই কমিটিগুলোকে পুনর্গঠন করার সিদ্ধান্ত নিলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তা এখনও করেনি। কমিটিগুলোর প্রধান করা হয় উপসচিব পদ মর্যাদার ১৪ জন সরকারি কর্মকর্তাকে। যাদের বেশিরভাগই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং এর অধীনস্ত সংস্থায় কর্মরত। এ সময়ের মধ্যে ওই ১৪ জন কর্মকর্তার অনেকেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অন্য মন্ত্রণালয় বা দফতরে বদলি হয়ে গেছেন। কেউ পদোন্নতি পেয়েছেন। কেউ অবসরেও গেছেন। আবার যারা অন্য মন্ত্রণালয় থেকে বদলি হয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যুক্ত হয়েছেন এমন অনেকেই আছেন যারা বাজার মনিটরিং কমিটিতে নেই।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, দেশে কোনও পণ্যের ঘাটতি নাই। সব পণ্যের মজুদ পর্যাপ্ত। অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধি বা সংকটের গুজব ছড়ালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন- 

বৃষ্টিতে কার্গো ভিলেজের গোডাউনে জলাবদ্ধতা, নির্বিকার বিমান

হাসিনা হাত বাড়ালেন, এবার পালা মমতার

/এসআই/এসএ/এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আ.লীগ নেত্রীকে অবরুদ্ধ করে পুলিশে সোপর্দ
আ.লীগ নেত্রীকে অবরুদ্ধ করে পুলিশে সোপর্দ
প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ, চারজন গ্রেফতার
প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ, চারজন গ্রেফতার
দিনাজপুরে একদিনে ৯ মরদেহ উদ্ধার
দিনাজপুরে একদিনে ৯ মরদেহ উদ্ধার
৭৮তম কান উৎসবের পুরো বিজয়ী তালিকা
৭৮তম কান উৎসবের পুরো বিজয়ী তালিকা
সর্বাধিক পঠিত
বগুড়ায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত ৭ লাখ ৪৬ হাজার পশু
বগুড়ায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত ৭ লাখ ৪৬ হাজার পশু
সাংবাদিক সংকটে ফারুকীর সংবাদ সম্মেলন স্থগিত
সাংবাদিক সংকটে ফারুকীর সংবাদ সম্মেলন স্থগিত
অবশেষে বিএনপিকে সময় দিলেন ড. ইউনূস, ডাকলেন জামায়াতকেও
অবশেষে বিএনপিকে সময় দিলেন ড. ইউনূস, ডাকলেন জামায়াতকেও
নুরের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের
নুরের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের
মিষ্টি বিদেশি আঙুর চাষ হচ্ছে দেশে, রয়েছে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা
মিষ্টি বিদেশি আঙুর চাষ হচ্ছে দেশে, রয়েছে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা