বেশি দামে কেনা চাল এখনও খুচরা ব্যবসায়ীদের গুদামে রয়েছে। তাই খুচরা বাজারে চালের দাম কমছে না বলে দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, বেশি দামে কেনা চাল কম দামে বিক্রি করে লোকসান গোনা সম্ভব নয়। তাই বেশি দামে আগের কেনা চাল বিক্রি শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভোক্তারা এর সুবিধা পাবে না। কম দামে কেনা চাল বাজারে এলেই খুচরা বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তখন দামও কমবে। দুই/একদিনের মধ্যে খুচরা বাজারে এমন প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন তারা। বেশি দামে কেনা চালের মজুদ কবে শেষ হবে, জানতে চাইলে এর উত্তর দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। ওই সময় কত পরিমাণ চাল মজুদ করা হয়েছে, তাও বলতে রাজি নন ব্যবসায়ীরা।
তবে পাইকারি বাজারে চালের দাম কমার বিষয়ে জানা গেছে, দেশে খুচরা বাজারে চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে গত ২০ জুন চাল আমদানির ওপর শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করে সরকার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করার সঙ্গে সঙ্গেই স্থল বন্দরগুলো দিয়ে দেশে আমদানিকৃত চাল আনতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা।
বন্দরগুলোয় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোমরা ও হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ইতোমধ্যেই ১০ হাজার টন চাল এনেছেন আমদানিকারকরা। তবে ঈদের পর গত সোমবার থেকে পুরোদমে চাল আমদানি শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। এর প্রভাবে পাইকারি ব্যবসায়ী ও চালকল মালিকরা চালের দাম কমাতে শুরু করেছেন।
আমদানি শুল্ক কমানোর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে শুরু করেন। এর পরপরই ইতিবাচক প্রভাব পড়ে চালের পাইকারি বাজারে। চালের দামও কমতে শুরু করে। এর কারণ ব্যাখ্যা করে সংশ্লিষ্টরা জানান, এক শ্রেণির চাল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ধান-চাল মজুদ রাখায় বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছিল। তবে এলসি করা চাল দেশের বাজারে আসতে শুরু করলেই চালের দাম কমে যাবে। বিষয়টি বুঝতে পেরে সিন্ডিকেট-ব্যবসায়ীরা বাজারে চাল ছাড়তে শুরু করেছেন। ফলে চালের দামও কমতে শুরু করেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ইতোমধ্যেই ভারত থেকে ব্যাপক হারে দেশের বাজারে চাল আসতে শুরু করেছে। কিন্তু খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। কারণ হিসেবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা মনে করেন, এর জন্য সরকারি মনিটরিং প্রয়োজন।
দেশের অন্যতম বড় চালের পাইকারি বাজার নওগাঁয় মোটা চালের দাম কমেছে বস্তা প্রতি দু’শ থেকে আড়াই’শ টাকা। তবে এলসির চালের প্রভাব নওগাঁয় এখনও পড়েনি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল হালিম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগামী সপ্তাহে চালের দাম আরও কিছুটা কমবে। এতে স্বস্তি পাবেন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ।’
জানা গেছে, নওগাঁয় গত বছরের আগস্ট মাস থেকে দফায় দফায় চালের দাম বাড়ে। গত দশ মাসে মোটা জাতের চালের দাম সবচেয়ে বেশি বাড়ে। সে তুলনায় সরু চালের দাম তেমন বাড়েনি। মোটা চালের দাম প্রায় ১৬ থেকে ১৮ টাকা বাড়ে। ঈদের আগে খুচরা চালের বাজার ছিল, বিআর-২৮, ৪৮ টাকা, হাইব্রিড ৪০ টাকা ও স্বর্ণা ৪৫ টাকা কেজি। বতর্মানে চালের বাজার বিআর-২৮, ৪৫-৪৬ টাকা, হাইব্রিড ৩৭-৩৮ টাকা ও স্বর্ণা ৪২-৪৩ টাকা কেজি। অর্থাৎ প্রতিকেজি মোটা চাল কেজিতে ২-৩ টাকা কমেছে। তবে চিকন চাল জিরাশাইল ৫০ টাকা কেজি ও পাইজাম ৫৮ টাকা কেজি হলেও দাম কমেনি।
এদিকে চালের আমদানি শুল্ক ১৮ শতাংশ কমানোর ফলে প্রতি কেজি চালের দাম ৬ টাকা কমবে বলে জানিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে চালের আমদানি শুল্ক কমানোর পক্ষে যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছিল, আমদানি শুল্ক কমালে চালের দাম কমবে। শুল্ক কমানোর সুবিধা নিয়ে গত এক সপ্তাহে দেশে প্রায় ৬০ হাজার টন চালও আমদানি হয়েছে। কিন্তু দেশের বেশিরভাগ এলাকায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম কেজিতে কমেছে মাত্র এক টাকা।
গত বৃহস্পতিবার খাদ্য মন্ত্রণালয় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাজারে চালের দাম কেজিতে ১ টাকা কমে ৪৫ থেকে ৪৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকারি চালের ব্যবসায়ীরা বলছেন, মোটা চালের দাম কেজিতে ২-৩ টাকা কমেছে।
এ প্রসঙ্গে বাবুবাজার-বাদামতলী চাল আড়ৎদার সমিতির সাধারন সম্পাদক নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পাইকারি বাজারে চালের দাম কমেছে। খুচরা বাজারে কমেছে কিনা, তা মনিটরিং করার দায়িত্ব সরকারের।’
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘অবিলম্বে চালের দাম কমবে। শুধু বাজার মনিটরিং নয়, জনগণকে স্বস্তি দিতে যা করার প্রয়োজন, সরকারের পক্ষ থেকে তাই করা হবে।’
/এমএনএইচ/