করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতের উদ্যোক্তাদের টিকিয়ে রাখতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ২০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজের বিশেষ ঋণ সুবিধা ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু নানা অজুহাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্যাকেজ থেকে ঋণ বিতরণে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এমন ২৫টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি নামমাত্র ঋণ বিতরণ করা আরও ২৫ প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। উভয় চিঠিতে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে শতভাগ ঋণ বিতরণ করতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, প্যাকেজ বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলো সরকারের কাছ থেকে বেশকিছু সুবিধা নিলেও ছোট ব্যবসায় ঋণ বিতরণে অনীহা দেখাচ্ছে। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নগদ জমার হার (সিআরআর) দুই দফায় কমানো, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নেওয়ার সুদহার অর্থাৎ রেপোর হার কমিয়ে নেওয়া, সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কম সুদে তহবিল পাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ৩১ আগস্টভিত্তিক পরিসংখ্যান মতে, ছয়টি সরকারি ব্যাংকের ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে ২ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিতরণ করেছে মাত্র ৪১ কোটি টাকা— যা লক্ষ্যমাত্রার ১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে ১০ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে বিতরণ করেছে ৯৭১ কোটি টাকা— যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৯ দশমিক ১৮ শতাংশ। প্রণোদনা প্যাকেজের নীতিমালা ঘোষণার প্রায় পাঁচ মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। এর মধ্যে প্রায় এক ডজন ব্যাংক রয়েছে যারা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৫ শতাংশ পর্যন্ত বিতরণ করেছে। আর দুটি বিদেশি ব্যাংক ছাড়া অপর সাতটি ব্যাংক এক টাকাও ঋণ বিতরণ করতে পারেনি। সবগুলো ব্যাংকের প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে ২ হাজার ৮০১ কোটি টাকা— যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ১৪ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রকৃত উদ্যোক্তারা তহবিল সংকটে ব্যবসা করতে পারছেন না। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে বারবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাগিদ দিচ্ছে। কিন্তু নির্দেশনা আমলে না নেওয়ায় এ পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানা গেছে, শোকজ করা হয়েছে ১৬টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, দুটি বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ৭ বিদেশি ব্যাংককে। আর সতর্ক করা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো— বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক এবং সরকারি খাতের প্রায় সব ব্যাংক।