করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আবারও তৈরি পোশাক শিল্পকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করোনা মহামরির বৈরি প্রভাব মোকাবিলা করে পোশাক শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে বিজিএমইএ।
রবিবার (৬ জুন) বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসানের নেতৃত্বে সংগঠনের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এসময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বেশ কয়েকটি বিষয়ে সহযোগিতা চান বিজিএমইএ’র নেতারা।
সংগঠনের পক্ষ থেকে করোনাজনিত কারণে ঋণ শ্রেণিকরণের সময়সীমা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি পোশাক শিল্প খাতে ১৩৩টি রুগ্ন শিল্পের পুনর্বাসনে নীতিগত সহায়তার অনুরোধ জানানো হয়।
আলোচনাকালে ফারুক হাসান বলেন, ‘করোনা মহামারিতে পোশাক শিল্প একটি ক্রান্তিলগ্ন অতিক্রম করছে। এ অবস্থায় পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা অর্থনীতির চাকা সচল রাখা এবং প্রতিকূল পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। উদ্যোক্তারা মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে পোশাক শিল্প সংক্রান্ত ইস্যুগুলো সহজীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হলে তা এই শিল্পকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করবে।’
বিজিএমইএ’র সভাপতি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে যে সহযোগিতাগুলো চেয়েছেন, সেগুলো হচ্ছে—
পোশাক শিল্প খাতকে এই সংকটময় সময়ে টিকিয়ে রাখার নিমিত্তে আংশিক রফতানি মূল্য অপ্রত্যাবাসিত থাকলে অন্যান্য প্রত্যাবাসিত রফতানিমূল্যের বিপরীতে রফতানি ভর্তুকি/নগদ সহায়তার কার্যকারিতা আগামী ৬ মাস পর্যন্ত স্থগিত রাখা।
এছাড়া ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলার ক্ষেত্রে রফতানিকারকের বন্ডেড ওয়্যার হাউজ লাইসেন্স এবং আইআরসি দাখিলের নিমিত্তে চাপ সৃষ্টি না করার জন্য সকল তফসিলি ব্যাংকের অনুকূলে নির্দেশনা জারি করা।
বৈদেশিক বাণিজ্য লেনদেনের ক্ষেত্রে বৈদেশিক মূদ্রা বিধি শিথিলকরণ বিষয়ে জারিকৃত সার্কুলারের মেয়াদ আরও ৬ মাস বৃদ্ধি করা।
দেশের রফতানি বাণিজ্যের স্বার্থে তারল্য সংকট নিরসনের লক্ষ্যে তৈরি পোশাক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তার মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা।
শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য আর্থিক প্রনোদনা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় প্রদত্ত ঋণ পরিশোধের সময়কাল ২ বছরের পরিবর্তে ৫ বছর করা।
রফতানিকারকদের জন্য ব্যাংকিং সংক্রান্ত একটি বিশেষ আইনি সুরক্ষার ব্যবস্থা করা, যার মাধ্যমে রফতানিকারকরা দেউলিয়া হয়ে যাওয়া ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের বাতিল/অনিশ্চিত হয়ে যাওয়া রফতানি কার্যাদেশ বা পেমেন্টের বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাক এলসি’র দায়-দেনা পরিশোধ সংক্রান্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে আইনগতভাবে সুরক্ষা পাবেন।
পোশাক শিল্পের তারল্য সংকট নিরসনে সহায়তা ও রফতানি সক্ষমতা বজায় রাখতে প্যাকিং ক্রেডিটের বিপরীতে সুদের হার ৭% থেকে হ্রাস করে ৫% নির্ধারণ করা।
করোনা ভাইরাসের অতিমারি সময়ে রফতানিমুখী তৈরি পোশাক খাতকে টিকিয়ে রাখতে ইডিএফ ফান্ডের সুদের হার ২% হতে হ্রাস করে ১.৫% করা এবং একক ঋণ গ্রহীতার সীমা ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত প্রদানের সুবিধার মেয়াদ আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা।
সভায় ফজলে কবির বলেন, ‘পোশাক শিল্প জাতীয় অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এই শিল্পকে সম্ভাব্য সকল সহযোগিতা প্রদানে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রস্তুত রয়েছে।’ তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘বিজিএমইএ’র সভাপতির প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে যেগুলো যৌক্তিক, সেগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক গুরুত্ব সহকারে পর্যালোচনা করবে। আর যেগুলোর বিষয়ে আদেশ জারি করা সম্ভব হবে, সেসব বিষয়ে আদেশ জারির জন্য ব্যাংক উদ্যোগ গ্রহণ করবে।’