X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

মূল্যস্ফীতি এখন ১২ শতাংশ হওয়া অস্বাভাবিক নয়: ড. দেবপ্রিয়

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৬ মে ২০২২, ১৫:৪৪আপডেট : ১৬ মে ২০২২, ১৫:৪৪

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, সরকার ৬ দশমিক ২২ শতাংশের যে মূল্যস্ফীতির কথা বলছে, বাস্তবতার সঙ্গে তার আদৌ মিল নেই। এমনকি এ তথ্য বিজ্ঞানসম্মতও নয়। ধারণা করা হচ্ছে, মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশ হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়।

সোমবার (১৬ মে) ‘বর্তমান আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি, জাতীয় বাজেট ও অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি কথা বলেন।

রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত এই ব্রিফিংয়ে তিনি মূল প্রতিবেদন উপস্থাপনা করেন। সিপিডি’র আরেক বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড.মোস্তাফিজুর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন।

অনুষ্ঠানে অংশ নেন অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের পরিবেশ, জলবায়ু ও সবুজ অর্থনীতি’র কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রুমানা হক। নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়ক আনিসাতুল ফাতেমা ইউসুফ এতে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘সরকার মূল্যস্ফীতির কথা ৬ শতাংশের ওপরে বলে থাকে, যেটি প্রকৃত বাস্তবতার সঙ্গে আদৌ মেলে না। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতির হার অনেক বেশি। যেমন- ভোজ্যতেল ও পাম ওয়েলের দাম বেড়েছে ৬১ শতাংশের ওপরে। আটা-ময়দার মতো পণ্যের দামও ৫৮ শতাংশ বেড়েছে। তবে মোটা চালের দাম বাড়েনি। কিন্তু মাঝারি বা সুগন্ধি চালের দাম অনেক বেড়েছে। সার্বিকভাবে তেল, ডাল, ডিম, মুরগি ও মাছসহ ইত্যাদি পণ্যের দাম বাড়ার যে হার দিচ্ছে টিসিবি, তা বিবিএসের দেওয়া তালিকার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গেও মেলে না। বিবিএস মুদ্রাস্ফীতির যে তথ্য দিচ্ছেন, তা বাস্তবসম্মত নয়, এমনকি বিজ্ঞানসম্মতও নয়।’

আমাদের ধারণা, মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। আগামী দিনে এই ধারা অব্যাহত থাকবে। বিশ্ব বাজারে যে পণ্যের দাম বেড়েছে, সেই পণ্য এখনও দেশের বাজারে আসেনি। সেগুলো যখন আসবে, তখন নিত্যপণ্যের দাম আরেকদফা বাড়বে।’

ড. দেবপ্রিয় তার প্রতিবেদনে বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, অপরদিকে টাকার মূল্যমান কমে যাচ্ছে। যেকোনও অর্থনীতির ভেতরে সুদের হার, বিনিময় হার ও মূল্যস্ফীতির মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে। একদিকে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে, আবার অপরদিকে টাকার মান অবনমন হচ্ছে। যে প্রত্যাশায় সুদের হার কম রাখা হচ্ছে, সেই বিনিয়োগ কত কয়েক বছরের বেড়েছে, এমন কোন তথ্য নেই। সুদের হার কমিয়ে বিনিয়োগ বাড়ানো যাবে— এমন সূত্র বাংলাদেশে প্রযোজ্য নয়।’

তিনি বলেন, ‘এখন টাকার আমানতে গড় সুদের হার ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। কিন্তু মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ২২ শতাংশ। অর্থাৎ, ব্যাংকে টাকা রাখলে প্রতি বছর প্রকৃত মূল্য দুই শতাংশ করে কমে যাবে। এটা বড় ধরণের সঞ্চয়বিরোধী। আগামীতে টাকার মান অবশ্যই নিম্নমুখী হবে। অবশ্যই সুদের হার বাড়াতে হবে। সামষ্টিক অর্থনীতিকে ধরে রাখতে হলে, মূল্যস্ফীতিকে কেন্দ্র করে পরিকল্পনা সাজাতে হবে। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নষ্ট হলে গরিব, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ, তাদের আয় পণ্যমূল্যের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে না।’ তিনি বলেন, ‘সামষ্টিক অর্থনীতির ভেতরে বড় ধরনের টানাপোড়ন দেখা দিয়েছে। বিগত বছরে আমাদের আর্থিক যে আয়-ব্যয়ের হিসাব রয়েছে, তা সব সময়ই দুর্বল ছিল। দুর্বলতার লক্ষণ হচ্ছে— আমাদের কর জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশের ওপরে ওঠেনি। একইসঙ্গে উন্নয়ন ব্যয়ের চেয়ে পরিচালন ব্যয় বা অপারেটিং ব্যয় অনেক বেশি। দেশে কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা হলো— একদিকে অর্থের অভাব, অপরদিকে সম্পদ থাকলেও তা যথাপোযুক্তভাবে খরচ করতে না পারা।’

বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমে আসছে উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, ‘একটি বিষয় লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন, বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকেই কমার ধারা শুরু হয়েছে। আমাদের বর্তমানে যে মজুত আছে, তা দিয়ে ৪ থেকে ৫ মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে না।’

বিশ্ববাজারে দ্রব্যমূল্য যদি আরও  বাড়তে থাকে, তাহলে আমাদের রিজার্ভের ওপর বড় ধরনের টান পড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাজার স্থিতিশীলতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার ছাড়ার সক্ষমতা থাকছে না। এর ফলে টাকার পতনের ধারা অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যে টাকা ও ডলারের বিনিময় হারে বড় ধরনের পার্থক্য হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিককালে সরকার পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়াতে চাচ্ছে। কিন্তু এই মুহূর্তে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো অনুচিত।’ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষায় এডিপি বাস্তবায়নের হার কম উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, ‘যেখানে সার্বিক এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৪১ শতাংশ, সেখানে ওই তিন খাতে বাস্তবায়ন হয়েছে ৩৫ শতাংশের নিচে। এই কমের হার গত বছরের ৩৭ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। মানে আরও কমেছে।’ গরিব, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের সঞ্চয় কমে যাচ্ছে জানিয়ে সিপিডির এই বিশেষ ফেলো বলেন, ‘এ কারণে করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা করা উচিত। এর পাশাপাশি প্রান্তিক ও দুস্থ জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ প্রণোদনা রাখতে হবে। সুরক্ষাভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি। আগামী দিনে ভর্তুকি ও পিছিয়ে পড়া মানুষের প্রণোদনা অব্যাহত রাখা কঠিন বিষয় হয়ে যাবে। ভর্তুকির টাকা যেন মেগা প্রকল্পের খাতে ব্যয় না হয়, সেটি লক্ষ্য রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এক সময় ছিল তথ্যের নৈরাজ্য, এখন তথ্যে বন্ধ্যাত্ব বা অন্ধত্ব চলছে। এর ফলে পরিবীক্ষণ ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।’

/জিএম/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হেলমেটের মান নির্ধারণ হবে কবে?
হেলমেটের মান নির্ধারণ হবে কবে?
ঝালকাঠিতে নিহত ১৪ জনের পরিবার পাচ্ছে ৫ লাখ টাকা করে
ঝালকাঠিতে নিহত ১৪ জনের পরিবার পাচ্ছে ৫ লাখ টাকা করে
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ‘আসমানে যাইও নারে বন্ধু’ গানের স্রষ্টা
সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ‘আসমানে যাইও নারে বন্ধু’ গানের স্রষ্টা
সর্বাধিক পঠিত
‘ভুয়া ৮ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে’
‘ভুয়া ৮ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে’
এএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
রেস্তোরাঁয় ‘মদ না পেয়ে’ হামলার অভিযোগএএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
হজ নিয়ে শঙ্কা, ধর্ম মন্ত্রণালয়কে ‍দুষছে হাব
হজ নিয়ে শঙ্কা, ধর্ম মন্ত্রণালয়কে ‍দুষছে হাব
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি