কোরবানির ঈদ সামনে, তবু প্রবাসীরা গত মে মাসের চেয়ে জুন মাসে কম রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। মে মাসে তারা ১৮৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন। জুন মাসে এসেছে ১৮৩ কোটি ৭২ লাখ ডলার। অর্থাৎ মে মাসের তুলনায় জুনে রেমিট্যান্স কমেছে ৫ কোটি ডলার। রবিবার (৩ জুলাই) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ডলারের দাম বাড়ানোর পরেও রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরে (২০২১ জুলাই থেকে ২০২২ জুন) প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে অর্থাৎ করোনা মহামারির মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে (২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন) রেমিট্যান্স প্রবাহে রেকর্ড করতে দেখা যায়। ওই অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।
অবশ্য গত ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটার টান দেখা যায়। প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রবাসীরা পাঠান ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার। আগস্টে পাঠান ১৮১ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বরে ১৭২ কোটি ৬২ লাখ ডলার। অক্টোবরে পাঠান ১৬৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার। নভেম্বরে আরও কম, ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে। ডিসেম্বর মাসে আসে ১৬৩ কোটি ৬ লাখ ডলার। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এসেছিল ১৭০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারি মাসে ১৪৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। গত মার্চ মাসে তারা দেশে পাঠিয়েছেন ১৮৫ কোটি ৯৯ লাখ (১.৮৬ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার, যা গত বছরের জুলাইয়ের পর সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। পরের মাস এপ্রিলে রেকর্ড ভেঙে তারা ২০১ কোটি ডলার পাঠান।
দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা প্রায় সোয়া কোটি বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ। দেশের জিডিপিতে সব মিলিয়ে রেমিট্যান্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো।
প্রসঙ্গত, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিয়ে আসছিল সরকার। গত জানুয়ারি থেকে তা বাড়িয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাঁচ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৪০২ কোটি ৭৮ লাখ মার্কিন ডলার।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১ হাজার ৬৫৩ কোটি ৭৮ লাখ মার্কিন ডলার। বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৯ কোটি মার্কিন ডলার। বিশেষায়িত ব্যাংকে এসেছে ৩৭ কোটি ১৮ লাখ মার্কিন ডলার।
গত অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। আলোচিত সময়ে ব্যাংকটির মাধ্যমে এসেছে ৪৯২ কোটি ডলার।
এদিকে সরবরাহের তুলনায় চাহিদা কম থাকায় বর্তমানে আন্তব্যাংকে ডলারের দর উঠেছে ৯৩ টাকা ৫০ পয়সায়। বাড়তি চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করছে। যে কারণে গত আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে উঠে যাওয়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৪১ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। এ কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে ছাড়া এলসি খোলার ক্ষেত্রে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।