ইসলামী ব্যাংক থেকে বিভিন্ন কোম্পানির ‘অস্বাভাবিক ঋণ উত্তোলনের’ বিষয়টি আসলে পত্রিকাগুলো তাদের কাটতি বাড়ানো জন্য মুখরোচক সংবাদ প্রকাশ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ব্যাংকটির নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. সেলিম উদ্দিন।
রবিবার (১১ ডিসেম্বর) বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজে সম্প্রচারিত বাংলা ট্রিবিউন বৈঠকিতে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী সম্পাদক মুন্নী সাহা।
মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘ভয়ংকর নভেম্বর’ লিখে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় একটা আঘাত করতে পারলে, ২০২৩ সালে যে রকম ইকোনমিক গ্রোথ আশা করছি এটাকে ত্বরান্বিত করার জন্য, ব্যাংকিং ব্যবস্থা যেন চুরমার হয়ে যায়, এলসি দিতে না হয়, যাতে আমরা অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে যাই, সে জন্য এটা করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সংবাদমাধ্যমে যেসব ঘটনাগুলোকে নিয়ে আসা হয়েছে, সেটা হচ্ছে— একটা রিসেন্ট ঘটনা লিখতে গিয়ে রেফারেন্স হিসেবে গত ৮-১০ বছরের যত ঘটনা আছে, সব তুলে নিয়ে আসে। বাংলাদেশে রেগুলেটরি ফ্রেম ওয়ার্ক আছে। আর্থিক ব্যবস্থার রেগুলেটরি ফ্রেম ওয়ার্ক অত্যন্ত শক্ত। এটা নীতি নির্ধারণী আইন-কানুনের মধ্য দিয়ে হয়ে আসছে।’
বৈঠকিতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক ড. শাহ মো. আহসান হাবীব বলেন, ‘ব্যাংকিং সেক্টরটি খুবই সেনসেটিভ একটি খাত। যদি কোনও কারণে ব্যাংকের প্রতি মানুষের বিশ্বাস প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তাহলে ক্ষতি আমাদের দেশের। আমাদের অর্থনীতি মোটামুটি সম্পূর্ণভাবে ব্যাংকিং খাতের ওপর নির্ভরশীল এবং তার একটা বড় অংশ ইসলামি ব্যাংকিং সেক্টর। এটা আমাদের প্রডাক্ট পোর্টফোলিও-তে পরিবর্তন এনেছে, তাতে কোনও সন্দেহ নাই। সেখানে মিডিয়ার একটা বড় রোল থাকবে। কোনও খাত সম্পর্কে এ ধরনের নিউজ হলে, তা অবশ্যই মানুষের সামনে আনবে। যেন তারা সচেতন হয়। কিন্তু এটা মনে রাখা খুব প্রয়োজন, ব্যাংক একটি সেনসেটিভ সেক্টর। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা কোনও বিষয়ে নিশ্চিত হবো না, ততক্ষণ পর্যন্ত একটা ছোট নিউজও একটা বড় ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দিতে পারে।’
ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে সংবাদ করার ক্ষেত্রে মানুষ যেন বিভ্রান্ত না হয়— সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যদিও এমন কিছু হয়েও থাকে তা এমনভাবে প্রকাশ করা, যাতে ব্যাংকিং সেক্টরের ওপর মানুষের বিশ্বাসে প্রভাব না ফেলে। কেননা, যদি কোনও ব্যাংকের সামনে একসঙ্গে সব গ্রাহক আমানত তুলতে দাঁড়ায়, এটা কলাপস করতে পারে। এটা এতটাই সেনসেটিভ। সেক্ষেত্রে এধরনের (ভয়ঙ্কর নভেম্বর) শব্দ ব্যবহার করে নিউজ করা আমি অ্যাকাডেমিক হিসেবে যতটুকু ব্যাংকিং বুঝি, তা ব্যাংকিং সেক্টরে প্রভাব ফেলবে। দৃষ্টি আকর্ষণ করার একটি পথ আছে। এ ক্ষেত্রে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে যতটা সফট করা যায়। কারণ, তদন্ত করার পর ঘটনা যদি সত্য না হয়, তাহলে এটাকে রেক্টিফাই করা ততটা সহজ নয়।’
বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ প্রতিনিধি গোলাম মওলা বলেন, ‘১৯৮৩ সালে ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালের শুরু থেকেই এই ব্যাংক অনেক বাধা পেরিয়ে এসেছে। তাই একটা নিউজের জন্য ব্যাংকটির ক্ষতি হবে, বিষয়টি এমন কোনও কারণ ছিল না। যদি না বৈশ্বিক অর্থনীতির একটা অস্থিতিশীলতা শুরু না হতো। এর সঙ্গে সাংবাদিকতার জায়গা থেকে বিশেষ করে ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে সংবাদ করার ক্ষেত্রে, আমাদের সতর্ক থাকা দরকার। আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা দরকার। বিষয়টা এমন না যে একটা কাগজ পেলাম, আর নিউজ করে দিলাম।’
তিনি বলেন, ‘তবে এটা সত্য যে, ব্যাংকগুলোতে মানুষের আমানত থাকে এবং ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের একটি বড় ব্যাংক। এই ব্যাংকে সবচেয়ে বেশি মানুষের আমানত আছে। এই ব্যাংক থেকে যেমন সরকার সুবিধা পায়, তেমনই জনসাধারণও সুবিধা পেয়ে থাকে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে— এই ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদে একটা পরিবর্তন আসার পর থেকে এই ব্যাংকের প্রতি অনেকেরই দৃষ্টি রয়েছে। তাই এই ব্যাংক নিয়ে এমন একটি নিউজ প্রকাশের এমন একটি সময় বেছে নেওয়া হয়েছে, যখন মানুষ এটাকে খুব সহজেই বিশ্বাস করবে।’