বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট আদায়ে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। গত অর্থবছরে ভ্যাট সংগ্রহে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ শতাংশ। আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ভ্যাট আহরণ হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা। তার আগের অর্থবছরে যা ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৪২০ কোটি টাকা।
এনবিআর মনে করে, ভ্যাট আদায়ে বড় প্রবৃদ্ধির এই অর্জন সম্ভব হয়েছে তিনটি কারণে। প্রথমত, এনবিআর থেকে মাঠপর্যায়ে ভ্যাট আহরণে কঠোর মনিটরিং এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিরলস প্রচেষ্টা। দ্বিতীয়ত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উপকরণ-উৎপাদনের হিসাব হালনাগাদকরণে জোরদার। তৃতীয়ত, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ভ্যাট আদায় হয়েছে সিগারেট থেকে। এ খাত থেকে ভ্যাট এসেছে ৩২ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বেশি। প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৯ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১১ শতাংশ। এ ছাড়া এমএস রড থেকে ভ্যাট আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ, কোমল পানীয়তে ভ্যাট আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩১ দশমিক ১৯ শতাংশ, সিমেন্ট থেকে ৩৩ দশমিক ৭২ শতাংশ, বাণিজ্যিক স্থানের ভাড়া থেকে ২০ দশমিক ১১ শতাংশ। পেট্রোবাংলার গ্যাস ও বিপিসির পেট্রোলিয়াম পণ্যেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে যথাক্রমে ২১ দশমিক ৬৮ ও ২৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
প্রতি বছরের মতো এবারও সর্বোচ্চ ভ্যাট সংগ্রহ করেছে এলটিইউ ভ্যাট কমিশনারেট। বিদায়ী অর্থবছরে এই কমিশনারেট মোট ৫৮ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা ভ্যাট সংগ্রহ করেছে, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৬ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা বেশি। ফলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ, আগের অর্থবছরে যা ছিল ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
উল্লেখ্য, এনবিআরের ভ্যাট শাখার মাঠপর্যায়ে ১২টি ভ্যাট কমিশনারেট রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম, খুলনা ও ঢাকা দক্ষিণ সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে—৩৮ দশমিক ৭১, ২৪ দশমিক ৭১ ও ১৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
গত অর্থবছরে সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে আমদানি কমেছে। ফলে ভ্যাট আদায়ের সুযোগ ছিল কম। অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়মিত এলসি খুলে পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করে স্বাভাবিক উৎপাদন করতে পারেনি। এ ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে পরিষেবার মূল্যবৃদ্ধি ও সরবরাহ পরিস্থিতির কারণে পণ্যের স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এ ছাড়া ভোজ্যতেলসহ বেশ কিছু পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এসব পণ্য থেকে ভ্যাট আদায় কমেছে।
এনবিআর জানায়, ভ্যাট অনুবিভাগের জন্য অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এই লক্ষ্যমাত্রার ৯২ শতাংশ অর্জন হয়েছে।