আগামী বাজেটে সহজ ও ব্যবসাবান্ধব আয়কর ব্যবস্থা, আয়কর ও ভ্যাটের আওতা বৃদ্ধি, কর ব্যবস্থার সম্পূর্ণ অটোমেশন, স্থানীয় শিল্পায়ন উৎসাহিত এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার ওপর জোরারোপ করেছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।
বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলনকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের কাছে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবনা পেশ করেন। এদিন ঢাকা চেম্বার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের জন্য এনবিআরের কাছে আয়কর, মূসক ও শুল্ক সংক্রান্ত মোট ৪০টি প্রস্তাব পেশ করেছে।
ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, ‘এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে টিনধারী রয়েছেন প্রায় এক কোটি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব প্রদান করেছেন প্রায় ৩২ লাখ করদাতা।’ প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর লক্ষ্যে করজাল বৃদ্ধির ওপর জোরারোপ করেন তিনি।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, ‘আয়কার অধ্যাদেশের ৭০ ধারা মোতাবেক ব্যবসায়িক ক্ষতি কেবল ব্যবসা থেকে আয়ের সঙ্গে সমন্বয় করা যাবে।’ এ প্রসঙ্গে ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশের ৩৭ ধারা পুনর্বহালের সুপারিশ করেন তিনি। এর কারণ হিসেবে আশরাফ আহমেদ বলেন, এতে করে ব্যবসায়ীদের ওপর করের বোঝা কিছুটা হলেও লাঘব হবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রভিডেন্ট তহবিল, গ্র্যাচুয়েটি তহবিল, সুপারএনুয়েশন তহবিল এবং পেনশন তহবিল থেকে উদ্ভুত আয়ের ওপর সরকারি কর্মচারীদের অনুরূপ করমুক্ত ঘোষণা করার প্রস্তাব করেন আশরাফ আহমেদ। এছাড়া বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধের ক্ষেত্রে আয়কর আইন অনুযায়ী উৎসে কর কর্তনযোগ্য হওয়ায়— এ ধরনের ঋণের ব্যয় বাড়বে এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ ও ঋণ প্রবাহ হ্রাস পাবে। এমতাবস্থায় তিনি বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধের ক্ষেত্রে উৎসে কর বাতিলের প্রস্তাব করেন।
এছাড়া যাবতীয় ট্যাক্স সংক্রান্ত বিষয়াদি অটোমেশনের আওতায় আনার জন্য একটি সমন্বিত কর প্রশাসন ব্যবস্থা (আইটিএএস) প্রবর্তনের আহ্বান জানান ডিসিসিআই সভাপতি। যার মাধ্যমে কর প্রদান ও কর সংক্রান্ত যেকোনও বিষয় সহজে সমাধান সম্ভব হবে। ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির কারণে পণ্য সরবরাহ খরচ অনেকাংশে বেড়েছে। বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে ভ্যাটের আওতা-বহির্ভূত ব্যবসায়ীদের টার্নওভারের ঊর্ধ্বসীমা তিন কোটি টাকা থেকে চার কোটি টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করেন। তিনি উল্লেখ করেন ভ্যাটের কার্যক্রমের মধ্যে আপিলাত, ক্রেডিট ফেরত এবং রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এখনও অনলাইনে সম্পন্ন করা যাচ্ছে না। দ্রততম সময়ের মধ্যে উল্লিখিত বিষয়গুলো ভ্যাট অনলাইন কার্যক্রমে সম্পন্ন করার সুপারিশ করেন। ডিসিসিআই সভাপতি নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে দেশীয় সোলার প্যানেল উৎপাদনকারীদের ক্ষেত্রে পণ্য সরবরাহকালে উৎসে মূসক কর্তন প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেন। এছাড়া আমদানি পর্যায়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কেটে নেওয়া ৫ শতাংশ অগ্রিম কর মওকুফ, অথবা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমন্বয় ও জটিলতা নিরসনে জোরারোপ করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ, স্থানীয় শিল্পায়ন সম্প্রসারণ ও বাজার সংরক্ষণ এবং টেকসই পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে এনবিআর রাজস্ব নীতিমালা প্রণয়ন করে থাকে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেতে গিয়ে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হলে এনবিআরকে তা জানানোর জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি জানান, এর ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংশোধনের মাধ্যমে ব্যবসা-সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিতকল্পে বরাবরের ন্যায় এনবিআর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী, সহ-সভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলীসহ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
