দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) ২০২৫–২৬ ও ২০২৬–২৭ মেয়াদের নির্বাহী পরিষদ গঠনের লক্ষ্যে নির্বাচন এবং নির্বাচনি আপিল বোর্ড গঠন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এফবিসিসিআইয়ের নতুন নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) মো. আবদুর রাজ্জাককে। বোর্ডের অপর দুই সদস্য হলেন— যুগ্ম সচিব মুর্শেদা জামান ও যুগ্ম সচিব মুস্তাফিজুর রহমান। পাশাপাশি নির্বাচনি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন অতিরিক্ত সচিব (রফতানি) মো. আব্দুর রহিম খান। বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন— যুগ্ম সচিব তানভীর আহমেদ ও উপসচিব মো. রাজ্জাকুল ইসলাম।
এর আগে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এফবিসিসিআইয়ের নেতৃত্বে পরিবর্তনের দাবি ওঠে। সংগঠনের একটি অংশ কার্যনির্বাহী পরিষদের পদত্যাগ দাবি করে সরব হয়। পরে ১১ সেপ্টেম্বর সংগঠনের সভাপতি মাহবুবুল আলম পদত্যাগ করেন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী পরিষদ বাতিল করে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য মো. হাফিজুর রহমানকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়।
সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ‘বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা, ২০২৫’ জারি করে। নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদের আকার ৮০ সদস্য থেকে কমিয়ে ৪৬ সদস্যে আনা হয়েছে। এতে মনোনীত পরিচালক সংখ্যা ৩৪ থেকে কমিয়ে ১২ জনে নামানো হয়েছে। এর মধ্যে চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে ৫ জন করে ১০ জন এবং নারী চেম্বার ও নারী অ্যাসোসিয়েশন থেকে ১ জন করে মোট ২ জন মনোনীত পরিচালক থাকবেন।
এছাড়া, এবারই প্রথমবারের মতো অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে সভাপতি এবং চেম্বার গ্রুপ থেকে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নির্বাচিত হবেন। সাধারণ পরিষদের ১২ জন মনোনীত পরিচালক হতে হবে পর্ষদের সদস্য, যাদের প্রত্যেককে এককালীন ২০ হাজার টাকা করে নিবন্ধন ফি দিতে হবে।
নতুন বিধিমালায় সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো— টানা দুই মেয়াদের বেশি কোনও ব্যক্তি পর্ষদে থাকতে পারবেন না। অর্থাৎ, দুবার নির্বাচিত হওয়ার পর তৃতীয়বার প্রার্থী হতে হলে অন্তত একবার বিরতি দিতে হবে। এই বিধান অতীত সময়ের জন্যও প্রযোজ্য হওয়ায় অনেক প্রভাবশালী সাবেক ও বর্তমান নেতা এবার নির্বাচন করার সুযোগ হারাতে যাচ্ছেন।
বিধিনিষেধকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ী মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেক নেতা অভিযোগ করেছেন, মন্ত্রণালয়ের একটি প্রভাবশালী মহল কৌশলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে কিছু ব্যবসায়ীকে দূরে রাখতেই এ ধরনের বিধান যুক্ত করেছে।
তবে নির্বাচনকে সুশৃঙ্খল ও সময়োপযোগী করতে সরকারের নেওয়া উদ্যোগকে অনেকেই সাধুবাদ জানিয়েছেন। তারা মনে করছেন, নতুন বিধিমালা এফবিসিসিআইকে আরও জবাবদিহিমূলক ও প্রতিনিধিত্বশীল করে তুলবে।