বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ১০ থেকে ১৩ জুন যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে সরকারি সফর করেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে এ সফরে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেন। এসব বৈঠকে দেশের অর্থনীতি, দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম, সম্পদ পুনরুদ্ধার ও বৈদেশিক বিনিয়োগের বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা হয়।
শনিবার (১৪ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১১ জুন গভর্নর ড. মনসুর দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেনকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) এবং আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সমন্বয় কেন্দ্রের (আইএসিসিসি) শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আইএসিসিসি’র প্রধান ড্যানিয়েল মারফি।
গভর্নর মনসুর বাংলাদেশ সরকারের সম্পদ পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে আইএসিসিস ‘র সহায়তা এবং ১১টি অগ্রাধিকারমূলক মামলায় গঠিত যৌথ তদন্ত দলের (জেআইটি) কারিগরি সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি সম্প্রতি সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের যুক্তরাজ্যে থাকা সম্পত্তিতে ১৭০ মিলিয়ন পাউন্ড এবং বেক্সিমকো গ্রুপের শায়ান রহমান ও শারিয়ার রহমানের ৯০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পদ জব্দের উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এই ২৬০ মিলিয়নের সম্মিলিত উদ্যোগ আন্তর্জাতিকভাবে অন্য দেশগুলোতেও অনুরূপ পদক্ষেপ নিতে উদ্বুদ্ধ করবে।
এ সফরে গভর্নর মনসুর লন্ডনের বিখ্যাত আন্তর্জাতিক আইন সংস্থা ডিএলএ পিপার আয়োজিত ‘অ্যাসেট রিকভারি রাউন্ডটেবিল’ বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন। বৈঠকে আন্তর্জাতিক লিটিগেশন ফান্ডার প্রতিষ্ঠান ওমিনি ব্রিজওয়ে, বেঞ্চওয়াক ক্যাপিটাল, তদন্তকারী সংস্থা আলভারেজ অ্যান্ড মার্সাল এবং কৌশলগত পরামর্শক ইউনিটাস গ্লোবালের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
বৈঠকে ২০২৫ সালের মধ্যে ৩০টি মামলার জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলারের লিটিগেশন ফান্ড গঠন এবং এসপিভি (স্পেশাল পারপাস ভেহিক্যাল) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যুক্তরাজ্য ও সিঙ্গাপুরসহ প্রধান গন্তব্য দেশগুলোতে সম্পদ পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। গভর্নর ব্যক্তিগতভাবে এসপিভি গঠনের এই প্রস্তাবকে সমর্থন জানান।
এছাড়া, গভর্নর মনসুর বিশ্বের বৃহত্তম সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ব্ল্যাকরক-এর সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। সেখানে তিনি বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির ইতিবাচক অগ্রগতি তুলে ধরেন এবং ব্যাংকিং ও পুঁজিবাজারে আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
তিনি লর্ড মেয়র অব লন্ডনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং বাংলাদেশের অর্থ খাতে যুক্তরাজ্যের সিটি অব লন্ডনের সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণে আলোচনা করেন। এ সময় তিনি লর্ড মেয়রকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
অপরদিকে, যুক্তরাজ্যে অবস্থিত কয়েকটি মানি এক্সচেঞ্জ হাউজের সঙ্গেও বৈঠক করেন গভর্নর মনসুর। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রক্রিয়া আরও সহজ ও সাশ্রয়ী করে গড় আয় প্রবাহ ধরে রাখতে করণীয় বিষয়ে মতবিনিময় করেন।
সফর শেষে গভর্নর আশা প্রকাশ করেন, এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকগুলো দেশের আর্থিক খাত, দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম এবং বৈদেশিক সম্পদ পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় নতুন গতি সঞ্চার করবে।