X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

শেয়ার বাজারে আরও ঝুঁকি বাড়ছে

গোলাম মওলা
০৮ এপ্রিল ২০২২, ১৭:২৪আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২২, ১৫:৪২

ব্যাংকগুলোকে চাপ দিয়েও ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ার বাজারে আনা যাচ্ছে না। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের ব্যাপারে কোনও আগ্রহ নেই বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোরও। এমন পরিস্থিতিতে শেয়ার বাজারে লেনদেন কমতে কমতে তলানিতে এসে ঠেকেছে। শুধু তাই নয়, গত এক সপ্তাহে এই বাজার থেকে হারিয়ে গেছে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা।

যদিও কোম্পানি ও ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে চিঠি দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি।

গত মাসের শেষের দিকে  শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে দেশের ৩৩টি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীকে চিঠি দিয়েছে বিএসইসি। এর বাইরে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের জন্য ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের অনুরোধ জানিয়ে আরও  ২৮টি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। অর্থাৎ আলাদা আলাদাভাবে ওই দুটি চিঠি পাঠানো হয় মোট ৬১টি ব্যাংকের কাছে। এর বাইরে গত ২৯ মার্চ অ-তালিকাভুক্ত ২৬টি বিমা কোম্পানিকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) জন্য ফাইল দাখিল ও ইক্যুইটির ২০ শতাংশ শেয়ার বাজারে বিনিয়োগে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে (আইডিআরএ) চিঠি দিয়েছে বিএসইসি।

এমন পরিস্থিতির মাঝেও গত সপ্তাহজুড়ে টানা দরপতনের কবলে পড়ে শেয়ার বাজার। শুধু তাই নয়, হতাশায় লেনদেন করা ছেড়ে দিয়েছেন অনেকে। এ কারণে বাজারে এখন তীব্র ক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত বুধবারের লেনদেন ছিল গত একবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এদিন ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪৯০ কোটি টাকা। এর আগে সর্বশেষ গত বছরের ১১ এপ্রিল সর্বনিম্ন ৪৫৬ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মধ্যে বুধবারই প্রথম ঢাকার বাজারের লেনদেন ৫০০ কোটি টাকার নিচে নামলো।

বিশ্লেষকরা বলছেন,  প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা এখন বাজারে নিষ্ক্রিয়। হাতে টাকা থাকলেও বাজারে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না তারা। লেনদেন কমে যাওয়ায় আতঙ্কের পাশাপাশি হতাশা ভর করেছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে, যার প্রভাব শেয়ারের দাম ও লেনদেনে পড়েছে। এতে কিছু কিছু কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে। দিনের সর্বনিম্ন দামেও কিছু কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতা মিলছে না। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করতে চেয়েও বিক্রি করতে পারছেন না। বাজারে হঠাৎ লেনদেন কমে যাওয়ায় চিন্তিত বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের আবারও বাজারমুখী করতে নানা উপায় খুঁজছেন বিএসইসির কর্মকর্তারা।

এদিকে গত সপ্তাহের বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়,  পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার কার্যদিবসই পতনের মধ্য দিয়ে পার করেছে দেশের শেয়ার বাজার। এতে গত সপ্তাহে দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার ওপরে কমে গেছে। বাজার মূলধনের পাশাপাশি গত সপ্তাহে কমেছে সবকটি মূল্যসূচক। একইসঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণও।

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসই’র বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩২ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা। যা এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৫ লাখ ৩৯ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ, গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৬ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা।

বাজারের তথ্য বলছে,  সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া মাত্র ৫১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩২৪টির। আর ১০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে সপ্তাহজুড়ে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১১৬ দশমিক ৬০ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছিল ৪ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট। বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে কমেছে ২২ দশমিক ৪১ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছিল ৭ দশমিক ২৬ পয়েন্ট।

প্রধান মূল্যসূচক এবং ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত বাছাই করা সূচকের পাশাপাশি গত সপ্তাহে কমেছে ইসলামি শরিয়াহভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচকও। গত সপ্তাহে এ সূচকটি কমেছে ১৪ দশমিক ৫১ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছিল ১১ দশমিক ৩০ পয়েন্ট।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৬০৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৯৩৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ, প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৩২৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এছাড়া গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৩৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৪ হাজার ৬৮৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এই হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ১ হাজার ৫৪৪ কোটি ৭ লাখ টাকা।

গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। এই কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৯৭ কোটি ৪৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ।

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
৯ মাসে ওয়ালটনের মুনাফা বেড়েছে ৫১২ কোটি টাকা
‘গুজবে’ কান না দেওয়ার অনুরোধ পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার
‘ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজ হতে পারে বিনিয়োগের ভালো অপশন’
সর্বশেষ খবর
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
সারা দেশে আরও ৭২ ঘণ্টার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি
সারা দেশে আরও ৭২ ঘণ্টার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি
শিরোপার দৌড়ে বড় ধাক্কার পর ক্ষমা চাইলেন ক্লপ
শিরোপার দৌড়ে বড় ধাক্কার পর ক্ষমা চাইলেন ক্লপ
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম