X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

আমার মৃত্যুর জন্য হিশাম দায়ী থাকবে: তমা

বিনোদন রিপোর্ট
২৭ ডিসেম্বর ২০২০, ১৩:০৪আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২০, ১৬:২৭

তমা মির্জা ২০১৯ সালের মে মাসে কানাডা প্রবাসী ব্যবসায়ী হিশাম চিশতীকে বিয়ে করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নায়িকা তমা মির্জা। সম্প্রতি হানিমুনের পর দেশে ফিরে চিত্রনায়িকা তমা মির্জা ও তার স্বামী বাড্ডা থানায় পাল্টাপাল্টি দুটি মামলা করেছেন। যৌতুক, নির্যাতন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে গত ৫ ডিসেম্বর তিন ধরনের মামলা করেছেন তমা।
অন্যদিকে মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে গত ৬ ডিসেম্বর মামলা করেন এই অভিনেত্রীর স্বামী হিশাম চিশতী। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তমাকে নিয়ে নানা বিষয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন তিনি। এবার সেই অভিযোগগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে মুখ খুলেছেন তমা মির্জা।
গতকাল ২৬ ডিসেম্বর রাত ১০টায় নিজের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে আসেন তিনি। প্রায় চল্লিশ মিনিটের এই লাইভের শেষে তমা জানান, তিনি এখন চরম এক পর্যায়ে পৌঁছেছেন। আত্মহত্যার ইঙ্গিত দিয়ে তমা বলেন, যদি তার কিছু হয়, তবে এর জন্য দায়ী থাকবেন হিশাম চিশতী।
শুরুতে তমা বলেন, ‘হিশামের সঙ্গে পরিচয় আমাদের এক কমন বন্ধুর মাধ্যমে। প্রথমেই তাকে আমি অত্যন্ত ভদ্র ছেলে হিসেবে পেয়েছি। তার কনভেন্সিং পাওয়ার খুবই বেশি; যার ফলে অল্প সময়ের মধ্যে আমি তাকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিই।’
হিশাম কখনোই বড় ব্যবসায়ী নয় উল্লেখ করে এই তারকা বলেন, ‌‘আমার জানা মতে, কানাডার টরেন্টো শহরে প্রায় ৫০ হাজার রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী আছে। যারা বছরে দুই-তিনটি বাড়ি বিক্রি করতে পারেন। হিশামও তাদের মধ্যে একজন। তাই তাকে বিগশট যারা ভাবছেন, সে তা নয়। তারপর কথা এসেছে, তিনি কানাডায় সাংস্কৃতিক শো স্পন্সর করেন। ২০০-৫০০ ডলার দিয়েই এসব স্পন্সর হয়। আমি আসলে তার স্পন্সরের চেয়ে তিন চারগুণ বেশি সম্মানী পাই।’
হিশাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উপহার, কুকুরের খাবারের বিষয়ে কথা বলেছেন, যা খুবই হীনমানসিকতা বলে উল্লেখ করেন তমা। বলেন, ‘স্ত্রী বা স্বামী হিসেবে কে কাকে কী গিফট করছেন, তা বলাটাও খুব ছোটলোকি বিষয়। সে বলেছে আমাকে নাকি ২০ লাখ ধার দিয়েছে। এত টাকা দিলে তো প্রমাণ থাকে, হয়তো অ্যাকাউন্টে দেবে। বা আমার অ্যাকাউন্টে জমা হবে। এগুলোর প্রমাণ দিক। একটা প্রমাণ দিলেই হবে। সে আমাকে নাকি নিয়ে ঘুরতে গেছে! মূলত আমার সঙ্গে সে যেত। সম্প্রতি আমি শো স্টপার হিসেবে বিদেশে গিয়েছি। আমার স্বামী ফ্রি লোডে গেছে। যা অর্গানাইজারদের কাছে খোঁজ নিলেও জানতে পারবেন।’

হিশাম-তমা ডিভোর্সের কাগজ উত্থাপন করে তমা এ বিষয়ে বলেন, ‘‘সে নাকি ডিভোর্স চেয়েছে, আমি নাকি তা দিইনি। অথচ গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর আমি ডিভোর্স ফাইল করি। এটা বিয়ের ছয় মাসের মধ্যে। সে কিন্তু ডিভোর্স ফাইল করেননি। এবং আমি সেখানে উল্লেখ করেছি কী কী কারণে আমি এটা করতে চাইছি। আমার শাশুড়ি খুব ভালো মানুষ। তিনি মারা গেছেন। কিডনি রোগে ভুগছিলেন। চিকিৎসকরা বলে দিয়েছিলেন তিনি আর বেশি দিন বাঁচবেন না। তিনি চলাফেরা করতে পারতেন না। হুইলচেয়ারে করে সেই মানুষ আমার বাসায় এসে বলেন, ‘আমি বেঁচে থাকতে এটা দেখতে পারবো না যে তমা আমার ছেলেকে ডিভোর্স দিয়েছে। যেহেতু আমি মৃত্যু পথযাত্রী, তমা তুমি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ডিভোর্সটা তুলে নাও।’ সবকিছু মিলিয়ে আমি ডিসেম্বরে ২৫ বা ২৬ তারিখে সেটা তুলে নিই।’’
তিনি জানান, হিশামের মারামারি করার ঘটনা নতুন নয়। তার আইনজীবীর চেম্বারেও সেটা করেছেন।
‘সেই সময়ের ভিডিও ফুটেজ আমি সাইবার ক্রাইম ইউনিটে জমা দিয়েছি। সে ফুটেজে স্পষ্ট আছে কীভাবে সে সিনক্রিয়েট করেছে, মারামারি করেছে। এর আগেও সে আমার গায়ে হাত তুলেছে, প্রচণ্ড মারধর করেছে। তার নামে সাধারণ ডায়েরি করেছিলাম। তখন আমাকে হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়। সেখান থেকে বাসায় এনে আমাকে আটকে রাখে হিশাম। এরপর যখন থানায় যাই, তখনও আমার ঠোঁট ফোলা ও মুখে মারের দাগ ছিল। আমার মনে হয়েছে, হয়তো কমবেশি সব নারীই আক্রান্ত হন। তখন আশপাশের অনেকেই মেয়ের দোষ খোঁজেন’—বলেন এই চিত্রনায়িকা।
হিশামের টাকা নেননি, বরং হিশামই টাকার জন্য মারধর করেছেন বলে জানান তমা। বলেন, ‘সে কানাডায় কয়েক হাজার ডলার ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছে। কানাডা থেকে প্রায়ই তার নম্বরে সে জন্য ফোন আসতো। ফোন রাখার পর আমার ওপর দিয়ে ঝড় বইতো। সে তখন বলতো, এই টাকাটা তুমি দিবে। আমি বলেছিলাম, আমার তো টাকা নাই। সে তখন বললো, তাহলে তুমি তোমার গাড়ি বিক্রি করে দাও। এভাবে ট্যাক্সের টাকা আমাকে পরিশোধের জন্য মারধরও করেছে। আমি হয়তো সহযোগিতা করতাম, যদি সে বিপদে পড়তো। কিন্তু যে মানুষটা নেশা করে পড়ে থাকে, স্ত্রীর নামে নোংরা কথা বলে, নোংরা পোস্ট করে, তার মা-ভাইয়ের বিষয়ে খারাপ কথা বলে, তাকে কীভাবে আমি সাহায্য করি?’
তমা বলেন, ‘‘মামলায় সে বলেছে আমি তাকে হত্যা করতে চেয়েছি। তার বন্ধুরা আমাকে বলেছে সে জাস্ট ৫ মিনিটের জন্য আমার সাথে কথা বলতে চায়। যেদিন রাতে সে আমাদের বাসায় আসে, তার বন্ধুর ফোন, ভাইয়ের ফোনের রেকর্ডিং আমার কাছে আছে। তারা বলেছিলেন, হিশাম তোমার সঙ্গে ৫ মিনিট কথা বলতে চায়। কারণ, পরের দিন আমাদের মিউচুয়াল ডিভোর্স হবে। যখন সে বাসায় আসলো, তখন রাত ৩টা বাজে। এসেই সে দুর্ব্যবহার করা শুরু করে। সে আমার ফোন নিয়ে নেয়। বলে, সে আমার ফেসবুক থেকে স্ট্যাটাস দেবে। সে লিখেছে, ‘আমি তমা মির্জা, আমি পরকীয়া করি। আমার স্বামী আমাকে হাতেনাতে ধরেছে’—এগুলো। আমি বললাম, কী সমস্যা বলো! তার পকেটের মধ্যে ৩০-৪০টা ঘুমের ওষুধ। মদের গন্ধও আসছে। তার সঙ্গে দারোয়ান ছিল। আমি তাকে গিয়ে বললাম, হিশামের অবস্থা তো ভালো না। বাসায় ফোন দিন। এখানে একটা কথা বলি, আমার ফোন কিন্তু তখন আমি পাইনি। সেটা পুলিশ তার পকেট থেকে উদ্ধার করে। আমি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশ ডেকে আনি। পুলিশ তাকে বাসা থেকে বের করতে পারেনি। তাদের সামনেই আমাকে গালিগালাজ করতে থাকে। এবং নানাজনকে ফোন দেওয়ার কথা বলে। পুলিশ তখন বলে, ম্যাডাম আপনি থানায় ডায়েরি বা মামলা করুন। তারা তখন ব্যবস্থা নেবে। হিশাম তখন আমার ঘরে গিয়ে একা একাই দরজা আটকে দেয়। আমি আমার মা-বাবাকে নিয়ে লিফটের সামনে আসি, থানায় যাবো বলে। তখন হিশাম বের হয়ে আসে। সে আমার মা-বাবার সামনে আমাকে মারধর করে। তাদের বয়স ৬৫ বছরের আশপাশে। বাবা-মা দুজনই রোগী। তাদের সামনেই আমাকে মারতে থাকে।’’


‘আমার বাবার চোখের নিচে চশমা ভেঙে ঢুকে যায়। আম্মুর কোমরে ফ্যাকচারও হয়। আমি মনে করি, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এবার তার ব্যান্ডেজ নিয়ে কথা বলি। তার হাতে ব্যান্ডেজ, কপালে ব্যান্ডেজ। সে বলেছে, আমার ৬৫ বছরের বাবা নাকি তার গলায় ফাঁস দিয়েছে। একজন গুরুতর রোগীর পক্ষে এটা আদৌ সম্ভব’—প্রশ্ন তমা মির্জার।
লাইভের শেষ দিকে তমা বলেন, ‘এরপর যদি হিশাম আমার আর কোনও ব্যক্তিগত ছবি বা বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করে বা প্রকাশ করে তাহলে আমি যদি আত্মহত্যা করি তার জন্য হিশাম দায়ী থাকবে।’
অন্যদিকে, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয় ব্যবসায়ী হিশাম সেখানকার রাজনীতিতে যুক্ত। করোনাকালে অসুস্থ মাকে দেখতে কানাডা থেকে দেশে এসেছিলেন তিনি। এরইমধ্যে স্ত্রী তমাকে নিয়ে দুবাইতে হানিমুনেও যান। হানিমুন থেকে ফেরার পরই তাদের বিবাদ প্রকাশ্য হয়। পাল্টাপাল্টি মামলা করেন তারা।
বিবাদের নেপথ্যের কারণ হিসেবে হিশাম জানান, তমাদের পারিবারিক স্বর্ণের ব্যবসার জন্য তার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়েছে। এছাড়াও প্রতি মাসে সংসার খরচ বাবদ তারা মোটা অঙ্কের টাকা হিশামের কাছ থেকে নিতো। এর বাইরে তমাকে ভাইয়ের খরচ, বাবা-মায়ের চিকিৎসা, বাসার পোষা কুকুরের খাবার খরচসহ নানা খাতে, নানা অজুহাতে তাকে টাকা দিতে হতো।

/এম/এমএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
শিল্পী সমিতির নির্বাচনে মিশা-ডিপজল প্যানেলের বড় চমক
শিল্পী সমিতির নির্বাচনে মিশা-ডিপজল প্যানেলের বড় চমক
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
কান উৎসব ২০২৪১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
এই জন্মদিনে আরেক সিনেমার ঘোষণা
এই জন্মদিনে আরেক সিনেমার ঘোষণা
ভোট দিতে এসে কেউ উৎফুল্ল, অনেকেই ক্ষুব্ধ!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনভোট দিতে এসে কেউ উৎফুল্ল, অনেকেই ক্ষুব্ধ!