X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
৩০ ডিসেম্বর ২০২০, ১৭:১০আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২০, ১৭:১২

‘নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে’ ‘অর্থনীতির সবুজ’ পুনরুদ্ধারে তরুণদের এগিয়ে আনতে হবে। পরিবেশবান্ধব দেশ গঠনে গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট,  গ্রিন লোন এবং আলাদা সরকারিভাবে গ্রিন ডিভিশন করা প্রয়োজন।  জ্বালানি খাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিষয়ে আরও জোরদার পদক্ষেপ নিতে হবে। বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), উন্নয়ন সমন্বয় ও বাংলাদেশ বৈদেশিক ঋণবিষয়ক কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি)-এর যৌথ উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতির সবুজ পুনরুদ্ধার: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন বাপার সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও উন্নয়ন সমন্বয়ের চেয়ারম্যান ড. আতিউর রহমান। অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বক্তব্য রাখেন— ‘বেন’ এর প্রতিষ্ঠাতা এবং বাপার সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম,

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইআইইডি) এর পরিচালক ড. সালিমুল হক, স্রেডা’র সাবেক সদস্য সিদ্দিক জোবায়ের, বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ড. দিপাল চন্দ্র বড়ুয়া এবং রিচার্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (আরডিএফ) এর প্রধান নির্বাহী এম গোলাম মোস্তফা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল।

আতিউর রহমান তার পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে বলেন, ‘করোনার কারণে আমাদের অনেক কাজ পিছিয়ে গেলেও আমরা অনেক কাজ করছি। করোনায় সময়ে ব্যাংকগুলো থেকে যে ঋণ দেওয়া হচ্ছে, তার মধ্যে গ্রিন উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া এবং তাদের এগিয়ে আনা দরকার।’ তিনি বলেন, ‘আজকের কর্মসংস্থান শুধু নয়, আগামী দিনের কর্মসংস্থানের কথাও চিন্তা করতে হবে। বিশ্বের বহুদেশ গ্রিন উদ্যোগ নিচ্ছে। আমরাও নিচ্ছি। আবার আমরা উল্টো দিকেও যাচ্ছি। যেমন- নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রকল্প কম হচ্ছে। এ জ্বালানির দাম আগের চেয়ে অনেক কম এবং এটি দীর্ঘস্থায়ী।’ 

তিনি জানান, ইন্দোনেশিয়া তাদের শহরকে সবুজ করে গড়ে তুলতে গ্রিন ট্রান্সফরমেশনের একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে। আমাদেরও এই ধরনের রোডম্যাপ করা  দরকার। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের ক্ষেত্রে টার্মলোনে গ্রিন ইনিশিয়েটিভ বাড়াতে হবে। গ্রিন ইনভেস্টমেন্টকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা নেট মিটারিং করছি। তবে সেখানে কোনও  ইনসেনটিভ দেওয়া হচ্ছে না। এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। এদিকে ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টে অনেক কিছু করার আছে।’ মাঠের পর মাঠ আমাদের  বর্জ্য পড়ে থাকে। এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটা সিস্টেমের করা দরকার বলে তিনি মনে করেন।

আতিউর রহমান বলেন, ‘দেশকে সবুজ অর্থনীতির দিকে নিতে হলে, পরিবেশবান্ধব দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে, আমাদের জাতীয় সংসদে গ্রিন ককাস প্রয়োজন।  সেখানে সবুজ অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার ঘটাতে গ্রিন বন্ড ছাড়তে পারে সরকার। গ্রিন ফাইন্যান্স এর জন্য অর্থ মন্ত্রণলয়ে আলাদা উইং করা যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেওয়া প্রয়োজন।  এসব কাজের মধ্য দিয়ে আমরা ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে চাই।’

বেন’র প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘জ্বালানি খাত নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে যেভাবে যাচ্ছে, তা মোটেও ভালো নয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে পরিকল্পনা করা হয়েছে, তাতে কয়লার ব্যবহার বেড়ে হয়ে যাবে ২০ শতাংশ। এর আগে লক্ষ্য ছিল ৭০ শতাংশ, যা অনেক দাবি আর আন্দোলনের ফলে কমিয়ে এনেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিশ্ব কয়লা থেকে যেখানে সরে আসছে, বাংলাদেশ সেখানে বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। একইভাবে বাড়ানো হচ্ছে ফার্নেস অয়েলের ব্যবহার। এটি পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এই খাতে আরও অনেক কিছু করা দরকার। এখানেই আমাদের বেশি মনোযোগ দিতে হবে।’

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশই ফসিল ফুয়েলে বিশাল ভর্তুকি দেয়। আমাদের দেশেও তাই। ভর্তুকি সেই কাজকে উৎসাহিত করে। ফলে বেড়ে যাচ্ছে পরিবেশ দূষণ।  আমাদের উচিত  এই খাতে  ভর্তুকি কমিয়ে আনা।’

তিনি বলেন, ‘সবুজ অর্থনীতির ক্ষেত্রে গ্রিন ইনভেস্টমেন্টকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।  কিন্তু এজন্য  প্রচুর সম্পদ প্রয়োজন।  সম্পদ সৃষ্টি করতে হবে। বাইরে থেকে টাকা নেওয়ার পাশাপাশি দেশের ভেতরের আয়ও বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে কর আদায়ে আমরা এখনও অনেক পেছনে পড়ে আছি। এ বিষয়ে আমাদের আরও গুরুত্ব দিতে হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে দিপাল চন্দ্র বড়ূয়া বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সরকারের সঙ্গে সেতুবন্ধন করে কাজ করতে হবে। আমরা অনেক কাজ করার চেষ্টা করি। কিছু কাজ সরকারের কানে যায়, কিছু যায় না। তাই আলাদা ডিভিসন করার খুব প্রয়োজন। বর্তমানে দেশের ৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। সে হিসাবে প্রায় তিন কোটি লোক এই সেবা পাচ্ছে।’  তিনি বলেন, ‘এই খাতের জন্য ব্যাংকগুলো আলাদা লোনের ব্যবস্থা করতে পারে। শুধু ঋণ দিলেই হবে না, সুদের হার কমানোও দরকার।  এখন ৯ শতাংশ দিতে হয়। সেটি কমিয়ে ৯ থেকে ৪ শতাংশে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।’

স্রেডা’র সাবেক সদস্য সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, ‘অনেকের ভুল ধারণ আছে যে, সোলার ব্যয়বহুল। এই খাতে এখন ফসিল ফুয়েলের সঙ্গে সমানতালে কাজ করা যায়। আমরা ছোট ছোট কাজ দিয়ে শুরু করেছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি ভর্তুকি দেওয়ার চেয়ে আসল দাম কমিয়ে আনতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদি লোনের দিকে যেতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি বলতে আমরা সাধারণত শুধু সোলারকে বুঝি, আসলে তা নয়। পানি, বায়ুসহ আরও অনেক কিছুই আছে। সোলারের ক্ষেত্রে স্টোরেজ যোগ করলে দাম বেশি পড়ে যায়। আমরা আশা করছি, কয়েক বছরের মধ্যে দাম কমে আসবে।’  তিনি বলেন, ‘নেট মিটারিং এর ক্ষেত্রে গ্রাহক যাতে শিল্প গ্রাহকদের কাছ থেকে তার বিল ঠিকমতো পায়, সেই নিয়ম করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বায়ু বিদ্যুতের সম্ভাবনা আমাদের ভালো। উপকূল এবং চরাঞ্চলে এই বিদ্যুৎ সহজেই করা সম্ভব। অনেকেই এগিয়ে যাচ্ছে প্রকল্প নিয়ে।’

 

/এসএনএস/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি জয়া
নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি জয়া
বিএনপি গণতন্ত্রে অকার্যকর ডামি রাজনৈতিক দল: ওবায়দুল কাদের
বিএনপি গণতন্ত্রে অকার্যকর ডামি রাজনৈতিক দল: ওবায়দুল কাদের
চারতলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মাদ্রাসাছাত্রীর মৃত্যু
চারতলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মাদ্রাসাছাত্রীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী