X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে আইপিভি-সিক্স বাস্তবায়নে দেরি, নতুন টাইম লাইন অনুমোদন

হিটলার এ. হালিম
২৭ জানুয়ারি ২০২১, ১৫:০০আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২১, ১৫:০০

ইন্টারনেট প্রটোকল ভার্সন-সিক্স বা আইপিভি-সিক্স বাস্তবায়ন করতে দেরি হচ্ছে বাংলাদেশের।  বাস্তবায়নের প্রথম টাইম লাইন ছিল এক বছরের, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ সাল পর্যন্ত (ফেজ-১)।  বাস্তবায়ন শুরুর কালে বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি থাবা বিস্তার করলে থমকে যায় এর কাজ। পরে মোবাইলফোন অপারেটরগুলোর সময় বৃদ্ধির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসি নতুন টাইম লাইন চূড়ান্ত করে কমিশনের ২৪৮তম সভায় তা অনুমোদন দিয়েছে। নতুন টাইম লাইন অনুযায়ী, আইপিভি-সিক্স বাস্তবায়নের সময় ধরা হয়েছে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩১ আগস্ট।  সেই হিসাবে এবারের সময় ৭ মাস।

প্রসঙ্গত, আইপিভি-সিক্স হলো ইন্টারনেট প্রটোকলের সর্বশেষ সংস্করণ।  বর্তমানে বাংলাদেশে আইপিভি-ফোর ব্যবহার হচ্ছে।  আইপিভি-সিক্সে প্রবেশ খুবই সীমিত পরিসরে হয়েছে, শতাংশের হিসাবে যা একেবারেই অনুল্লেখ্য। আইপিভি-ফোর হলো ৩২ বিটের প্রথম প্রজন্মের ইন্টারনেট প্রটোকল, যার মাধ্যমে ৪৩০ কোটি অ্যাড্রেস ব্যবহার করা সম্ভব।  কিন্তু এই অপ্রতুল ৩২ বিট দিয়ে বিশাল আইপি অ্যাড্রেসের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। এ কারণেই নতুন ধরনের একটি নেটওয়ার্ক লেয়ারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।  ফলে আবির্ভাব হয় আইপিভি-সিক্সের। আইপিভি-সিক্স হলো ১২৮ বিটের অ্যাড্রেস লেয়ার প্রটোকল, যা ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি নেটওয়ার্ক ডিভাইসকে স্বতন্ত্র পরিচয় প্রদান করে।  আইপিভি-ফোরের জন্য কোয়ালিটি অব সার্ভিস ও নিরাপত্তা বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানা গেছে।

জানা জানায়, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের আঞ্চলিক ইন্টারনেট অ্যাড্রেস নিবন্ধন প্রতিষ্ঠান এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টার (এপনিক) থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বিশ্বের ৩০-৩৫ শতাংশ দেশে আইপিভি-সিক্স চালু হয়েছে। এরমধ্যে ভারত আইপিভি-সিক্স ব্যবহারে বিশ্বে প্রথম।  দেশটিতে আইপিভি-সিক্স ব্যবহারের হার ৬১ দশমিক ৪০ শতাংশ।  অপরদিকে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আইপিভি-সিক্স প্রচলনে ভারত, মালয়েশিয়া, জাপান, কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ভুটান উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ আইপিভি-সিক্সে নাম লেখালেও তা একেবারেই প্রায় হিসাবের বাইরে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এপনিকের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও পলিসি চেয়ার সুমন আহমেদ সাবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আইপিভি-ফোর (ইন্টারনেট প্রটোকল) এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় ২০২২-২০২৩ সালের পরে আর থাকবে না।  অন্য অঞ্চলে এর ব্যবহার নেই বললেই চলে।  এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় যতটুকু এর ব্যবহার রয়েছে, তা এক কথায় চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।  সেটা আর বেশি দিন চালানো যাবে না, পুরনো হয়ে গেছে। নতুন প্রযুক্তিতে তথা আইপিভি-সিক্সে আমাদের যেতেই হবে।’  তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ আইপিভি-সিক্স বাস্তবায়নে অনেক পিছিয়ে আছে, এর ব্যহারের হার মাত্র ০.০২ ভাগ।  যদিও বিটিআরসির ২৪৮তম কমিশন বৈঠকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তা ০.০৫ শতাংশ।’

সুমন আহমেদ সাবির জানান,২০২০ সালে বাংলাদেশে আইপিভি-সিক্স বাস্তবায়নের হার ২০ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা তাদের ছিল।  কিন্তু করোনা সেই রোডম্যাপ বাস্তবায়ন করতে দেয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের দ্বিতীয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত— ৮.৫ এ পর্যায়ক্রমে সব আইপি অ্যাড্রেস আইপিভি-সিক্সে রূপান্তরের নির্দেশনা ছিল।  ওই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বিটিআরসি ১২ সদস্য বিশিষ্ট একটি স্টাডি গ্রুপ গঠন করে দেয়।  ওই গ্রুপ সর্বোচ্চ এক বছর মেয়াদের একটি টাইম ফ্রেমের প্রস্তাবনা দেয়। প্রস্তাবনা কমিশনের ২২৭তম সভায় অনুমোদিতও হয় এবং আইপিভি-সিক্স বাস্তবায়নে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।  ২০১৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ক একটি কমিটি গঠিত হলে আইপিভি-সিক্স বাস্তবায়ন কমিটি দেশের বিদ্যমান টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক অবকাঠামো এবং এ সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি বা যন্ত্রাংশে আইপিভি-সিক্স স্থাপনে সংশ্লিষ্ট সব লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা প্রদানের সুপারিশ সহকারে একটি সময়ভিত্তিক প্রস্তাবনা দাখিল করে। পরে আইপিভি-সিক্সে উন্নীতকরণের জন্য ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি নির্দেশনা প্রদান করা হয় এবং চিঠি জারির তারিখ থেকে সময়কাল গণণা শুরু হয়। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী, আইপিভি-সিক্স বাস্তবায়নের কার্যকাল ধরা হয় ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি।

জানা যায়, ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর মোবাইলফোন অপারেটরগুলোর সংগঠন অ্যামটব আইপিভি-সিক্স বাস্তবায়নে টাইম লাইনের সময় বাড়ানোর জন্য কমিশনে অনুরোধ জানায়। অনুরোধের ব্যাখ্যায় বলা হয়, কোভিড-১৯ এর কারণে আইপিভি-সিক্স বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু করার প্রথম মাস থেকেই প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। মহামারির কারণে নিজস্ব টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক অবকাঠামো উন্নকরণ এবং টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি আমদানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। অনুরোধ করা চিঠিতে অ্যামটব আরও জানায়, কমিশনের দেওয়া সময়সীমা মতে, ফেজ-১ অনুযায়ী প্ল্যানিং বা ডিজাইনের কাজ ২০২০ সালের জুলাই মাসে সম্পন্ন হয়েছে এবং ফেজ-২ এর কাজ নভেম্বর মাসে শুরু করতে চাচ্ছে।  সেই টাইম লাইন অনুযায়ী, ২০২০ সালের নভেম্বর মাস থেকে ২০২১ সালের আগস্ট মাসের মধ্যে কাজ শেষ করতে চায় অ্যামটব।

জানা গেছে, অনুমোদিত নতুন টাইম লাইন অনুযায়ী, আইপিভি-সিক্স বাস্তবায়ন হবে ৭ মাসে।  সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডার (লাইসেন্সধারী অপারেটর) কারিগরি সিস্টেমস, আর্কিটেকচার ও এলিমেন্টস, ডিপিআইসহ অন্যান্য সব নড, প্রান্ত অথবা যন্ত্রপাতিতে প্রয়োজনীয় আপগ্রেডেশনের কার্যক্রম গ্রহণ করবে। প্রোকিউরমেন্ট বা মডিফিকেশনের জন্য আড়াই মাস (২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ এপ্রিল)।  ইকুইপমেন্ট ইন্সটলেশন বা কমিশনিংয়ের জন্য আড়াই মাস (২০২১ সালের ১৬ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন) এবং টেস্টিংয়ের জন্য ২ মাস (২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট) সময় দেওয়া হয়েছে।

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!