X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

খুবি প্রশাসনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে ৬ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন

ঢাবি প্রতিনিধি
২৮ জানুয়ারি ২০২১, ১৭:৪৭আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২১, ১৭:৪৭

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) তিন জন শিক্ষক এবং দুই জন ছাত্রের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে একযোগে দেশের ৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের উদ্যোগে ওই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়। দাবি আদায় না হলে সমাবেশ থেকে খুবি উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করার হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষকরা। 

মানববন্ধনগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ মিনার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ মিনার, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে  একযোগে পালিত হয়।

মানববন্ধন থেকে বাংলাদেশ শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষে তিন দফা দাবি উপস্থাপন করে আগামী সাত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বেধে দেওয়া হয়। দাবিগুলোর হলো:

১) শুধু আশ্বাস নয়, আনুষ্ঠানিকভাবে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করতে হবে।

২) এই সিন্ডিকেটকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে এবং অবৈধ সিন্ডিকেট যত সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার তদন্ত করতে হবে।

এবং ৩) উপাচার্য যে অপরাধ করেছেন, বিশেষ করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন, এ বিষয়ে তদন্ত করতে হবে।

রাজু ভাস্কার্যের পাদদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের যে মমার্থ, সেটি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমন ব্যর্থহীন উপাচার্য হয়ে প্রশাসনের সর্বোচ্চ আসনে থাকা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০তম সমাবর্তনে প্রফেসর অর্মত্য সেন বলেছিলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম কাজ হচ্ছে, না বলতে শেখা; এটির কাজ হচ্ছে চ্যালেঞ্জ করা, যেকোনও অন্যায় এবং অন্যায্যতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোই হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ।” ভলতেয়ারের একটি উক্তি আছে যে, “আমি তোমার সঙ্গে দ্বিমত করতে পারি, কিন্তু তোমার কথা বলতে দেওয়ার জন্য আমি আমার জীবনও দিতে পারি।” এটিই হলো গণতন্ত্রের সৌন্দর্য্য। এ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ দিয়ে জ্ঞানচর্চা হয় এবং এটি দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে নাকি রাজনীতি চলবে না। যেখানে রাষ্ট্রই নিজেই রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, সেই রাষ্ট্রের মধ্যে দাঁড়িয়েই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলে। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি না চললে কী চলবে?  আন্তোনিও গ্রামশি বলেছিলেন, “সারি সারি দালানকোঠা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকে, সারি সারি দালানকোঠা জেলাখানারও থাকে; তবে এর মধ্যে একটি মানুষকে বন্দি করে, আরেকটি মানুষকে মুক্ত করে।” খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কী একটি কারাগার? আমার জানতে ইচ্ছে করে, এ বিশ্ববিদ্যালয় কী একটি ক্যান্টনমেন্ট? উপাচার্য সামরিক বাহিনীর জেনারেল নাকি? যে মানুষ কথা বলতে পারবে না, আন্দোলন করতে পারবে না। তিনি (উপাচার্য ফায়েক উজ্জামান) ইতিহাস জানেন না, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শামসুজ্জোহা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানানোর জন্য বুকে গুলি খেয়েছিলেন।’

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে হুঁশিয়ারি দিয়ে রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ যদি প্রত্যাহার না করা হয়, তাহলে আমরা শিগগিরই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবো। উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করবো এবং এ দাবিগুলো না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো। এত সহজ ব্যাপার না, আপনি বলবেন, আর আমরা সব মেনে নেবো।’

বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তিন জন শিক্ষককে বহিষ্কার করার ক্ষেত্রে যে ভাষা ব্যবহার করেছে, এটি অত্যন্ত আপত্তিকর। শিক্ষকরা কোথায় আবেদন করতে পারবে, কোথায় কাজ করতে পারবে, এ ধরনের শাস্তি প্রদান করা কোনও কর্তৃপক্ষের আওতার মধ্যে পড়ে না। বহিষ্কারাদেশ পুর্নবিবেচনা করতে অনুরোধ করবো। এ ধরনের ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন।’

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী বলেন, ‘দেশে এখন বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ঘটনা, এটি মূলত গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতা মাত্র। কয়েক বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে এক ছাত্রের করা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্যভাবে দেখলে চলবে না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, ‘রাষ্ট্রের যারা শাসক আছেন তারা বক্তৃতায় বলেন, আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ঢুকে গেছি, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য তারা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ তৈরি করবেন। কিন্তু তারা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ তৈরি করবেন কীভাবে, একটা সমাজ জ্ঞানভিত্তিক হতে গেলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সৃজনশীলতা। আর সৃজনশীলতার প্রথম শর্ত হচ্ছে প্রশ্ন। আপনি প্রশ্ন করার কোনও সুযোগ রাখছেন না, প্রশ্ন করার মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে যে সৃজনশীলতার চর্চা হয়, তা আপনারা রোধ করছেন। আপনি ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন করছেন। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা শাসক আছেন তারা নিজেদের আমলা মনে করছেন। যারা রাষ্ট্রের শাসক তারা আমলাদের নিয়ন্ত্রণ করছেন সরকারি চাকরিবিধি দিয়ে। এ রকম আমলাতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থা যখন তৈরি হচ্ছে তখন আসলে সৃজনশীলতা, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ভণ্ডামি ছাড়া  কিছুই না। সেই ভণ্ডামির একটা রূপ আমরা দেখতে পেলাম, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের আচরণের মধ্য দিয়ে।’

 

/এসআইআর/আইএ/ 
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
রংপুর হাসপাতালে বাড়ছে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগী, ৫ দিনে ২২ জনের মৃত্যু
রংপুর হাসপাতালে বাড়ছে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগী, ৫ দিনে ২২ জনের মৃত্যু
তুর্কি মিডফিল্ডারের গোলে শিরোপার আরও কাছে রিয়াল মাদ্রিদ
তুর্কি মিডফিল্ডারের গোলে শিরোপার আরও কাছে রিয়াল মাদ্রিদ
দ্বিতীয় বিয়ে করায় ছেলের আঘাতে প্রাণ গেলো বাবার
দ্বিতীয় বিয়ে করায় ছেলের আঘাতে প্রাণ গেলো বাবার
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!