সুনামগঞ্জ জেলার আটটি উপজেলায় মোট ১১টি বধ্যভূমি চিহ্নিত করা আছে। এর বাইরেও উদ্যোগের অভাবে চিহ্নিত করা যায়নি এমন বধ্যভূমিও রয়েছে। তবে এসব বধ্যভূমি যথাযথভাবে সংরক্ষণ না করায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত আত্মত্যাগের গৌরবগাথা ক্রমেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়দের উদ্যোগে কিছু বধ্যভূমিতে নামফলক লাগানো হলেও বেশিরভাগই অবহেলায় পড়ে আছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
তবে এ মাস থেকেই কিছু বধ্যভূমিতে ফলক লাগানো শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সুনামগঞ্জের বধ্যভূমি সংরক্ষণের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে কোনও সরকারি প্রকল্প পাওয়া যায়নি। তবে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বধ্যভূমিগুলোর একটি খসড়া তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ মাসের মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলার সব বধ্যভূমিতে নামফলক লাগানোর কার্যক্রম শুরু হবে।’
জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিট কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় পিটিআই বধ্যভূমি ও বেরিগাঁও বধ্যভূমি, দক্ষিণ সুনামগঞ্জের জয়কলস বধ্যভূমি, দোয়ারা বাজারের নৈনগাঁও বধ্যভূমি ও শ্রীপুর বধ্যভূমি, দিরাইয়ের শ্যামারচর বধ্যভূমি, জগন্নাথপুরের শ্রীরামসী বধ্যভূমি, রাণীগঞ্জ বধ্যভূমি, ছাতকের মাধপুর বধ্যভূমি, তাহিরপুরের ট্যাকেরঘাট বধ্যভূমি, ধর্মপাশার কাজীরগাঁও বধ্যভূমিসহ ১১টি বধ্যভূমি রয়েছে। এসব বধ্যভূমি সংরক্ষণের কোনও উদ্যোগ না থাকায় বেশির ভাগই কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে বসেছে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বিভিন্ন সময় এসব বধ্যভূমিতে নিরপরাধ ছাত্র-জনতা, সাধারণ মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসররা। কিছু কিছু বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও শহীদদের নাম ফলক বসানো ছাড়া আর কোন কাজ হয়নি। আবার এমন অনেক বধ্যভূমি রয়েছে যেগুলো আজ পর্যন্ত চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।
দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইদ্রিস আলী বীরপ্রতীক বলেন, ‘দোয়ারা বাজার উপজেলার নৈনগাঁও ও শ্রীপুর বধ্যভূমি সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এবছর থেকে সংরক্ষণের কাজ শুরু হবে।’
জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কামান্ডের সাবেক কমান্ডার হাজী নুরুল মোমেন বলেন, ‘জেলায় ছোট-বড় ১১টি বধ্যভূমি ও স্মৃতিসৌধ রয়েছে। কার্যকর কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় বধ্যভূমিগুলো এখনও যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা যায়নি। এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে কিছু কিছু বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করে সংরক্ষণের চেষ্ঠা করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের নামফলকসহ কবর পাকা করে সংরক্ষণের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এটি বাস্তবায়িত হলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কিছুটা হলেও সংরক্ষিত হবে।’ বধ্যভূমিগুলো আরও যত্ন সহকারে সংরক্ষণের আহ্বান জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা মো. সাজ্জাদ হোসেন।