X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করতে চেয়েছিলেন মিয়ানমারের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী!

আবদুল আজিজ, তুমব্রু সীমান্ত থেকে ফিরে
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২২:০৪আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১২:৩৯

বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলছেন রোহিঙ্গা নেতারা সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করতে চেয়েছিলেন মিয়ানমারের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অং সো। এ মাসের শুরুর দিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ঢেকিবনিয়ায় বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ক্যাম্পে এই বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। এজন্য রোহিঙ্গা নেতাদের ২০ জনের একটি তালিকাও চেয়েছিল বিজিপি। কিন্তু গোপন বৈঠকে রোহিঙ্গারা আপত্তি জানানোয় সেটি আর হয়নি। রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গত ৯ ফেব্রুয়ারি দেশটির উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তুমব্রু সীমান্ত পয়েন্টে গিয়ে রোহিঙ্গাদের নো-ম্যানস ল্যান্ড ছাড়ার নির্দেশ দেন। তুমব্রু নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থানকারী রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

রোহিঙ্গা নেতারা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, গত ৬ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের বিজিপির ঢেকিবনিয়া ক্যাম্পের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সো জে ইয়ালিনের নেতৃত্বে একটি টিম তুমব্রু নো-ম্যানস ল্যান্ডে আসেন। তারা সেখানকার আশ্রয়শিবিরে থাকা রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং ঢেকিবনিয়া বিজিপি ক্যাম্পে গিয়ে বৈঠকে বসার প্রস্তাব দেন। কিন্তু বাংলাদেশের বিজিবি বা রোহিঙ্গাদের সহায়তাকারী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে বিষয়টি জানাতে নিষেধ করায় ওই প্রস্তাবে রোহিঙ্গা নেতারা সাড়া দেননি। এর একদিন পর মংডু জেলা প্রশাসক ইউয়ে তো এবং মংডু বিজিপি ক্যাম্পের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল উক্যা ক্যুর নেতৃত্বে আরেকটি টিম একই প্রস্তাব নিয়ে আসে। তারা রোহিঙ্গাদের জানান, ৯ ফেব্রুয়ারি উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল অং সো রাখাইন সফরে আসবেন। তিনি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠক করতে চান। এজন্য ওইদিন ঘুমধুম সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ঢেকিবনিয়া ক্যাম্পে যেতে হবে। এ বিষয়ে বিজিপি সদস্যরা সহায়তা দেবে। কিন্তু এসব কথায় বিশ্বাস না করে অজানা আতঙ্কে প্রস্তাবটি ফিরিয়ে দেন নো-ম্যানস ল্যান্ডের রোহিঙ্গারা।

এরপর ৯ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল অং সো এবং রাখাইন রাজ্যের সীমান্ত ও নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী কর্নেল ভুনটিনসহ একটি টিম তুমব্রু সীমান্তে আসেন। উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং অনেকটা রাগান্বিত হয়ে তাদের নো-ম্যানস ল্যান্ড ছাড়ার নির্দেশ দেন। দ্রুত নো-ম্যানস ল্যান্ড না ছাড়লে পরিণতি ভয়াবহ হবে বলেও তাদের হুমকি দেওয়া হয়।

তুমব্রু নো-ম্যানস ল্যান্ডে থাকা রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি এই বলে, যদি বৈঠকে বসতে হয় তাহলে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে বসতে হবে। কারণ, রোহিঙ্গাদের বিষয়টি এখন আর গোপন নয়, এটি প্রকাশ্যে হওয়া দরকার। এছাড়াও কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমাদের ফেরত নিয়ে যাওয়ার কথাও আমরা বলেছি। একইসঙ্গে, রাখাইনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার কথাও বলেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওই টিমকে বলেছি, আমরা মিয়ানমারের নাগরিক। আমাদের সেখানে ফিরিয়ে নিয়ে যান। আমাদের নিয়ে যাওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই। আমরা বাংলাদেশে থাকতে আসিনি। একথা বলার পর তারা কিছুই না বলে চলে যায়।’

আরেক রোহিঙ্গা নেতা আরিফ আহমদ বলেন, ‘মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ গত ৬ জানুয়ারি মিয়ানমারে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে তিন ভাগে ভাগ করে রাখাইনের মংডু ট্রানজিট ক্যাম্প পরিদর্শনে আসে। পরে তুমব্রু কাঁটাতারের বেড়ার পাশে এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে ছিলেন আরকানের মিনিস্টার ইপু, অং সান সু চির অ্যাডভাইজার ও নিরাপত্তা মন্ত্রী টিন টিন। এ সময় আমরা বলেছি, স্যার, আমরাও মানুষ। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাই। আপনার যদি ছেলেমেয়ে থাকতো, আপনার কি কষ্ট লাগতো না? আমরা ছোট ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে এই ঝুপড়ি ঘরে আছি। বর্ষায় আমাদের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়বে। দয়া করে আমাদের রাখাইনে নিয়ে যান। রাখাইনে আমাদের থাকার পরিবেশ করুন। কিন্তু তারা ফিরিয়ে নেওয়ার মতো কিছুই বলেননি। এরপর কিছুদিন পর (৯ ফেব্রুয়ারি) মিয়ানমারের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অং সো নিজেই এসে বললেন, তোমরা একটু ঘুমধুম দিয়ে ঢেকিবনিয়ায় এসো, আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসো। তখন আমরা বলেছি–স্যার, রোহিঙ্গা ইস্যুটি এখন আন্তর্জাতিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেন আমরা গোপনে বৈঠক বসবো। একথা শোনার পর তিনি রাগান্বিত ভাষায় আমাদের নো-ম্যানস ল্যান্ড ছেড়ে চলে যেতে বলেন। তিনি চলে যাওয়ার পর থেকে প্রতিদিন মাইকিং করে আমাদের সরে যেতে বলছে মিয়ানমার বাহিনী। এখন প্রতিরাতে আমাদের ক্যাম্পের ওপর ইট ও কাঠের টুকরো নিক্ষেপ করছে। রাতে ফাঁকা গুলি করে আমাদের ভয় দেখাচ্ছে।’

গত বছরের ২৪ আগস্ট মধ্যরাতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার  অজুহাতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিধনযজ্ঞে নামে দেশটির সেনাবাহিনী। এতে প্রাণ বাঁচাতে সাড়ে ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়। তবে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে আটকা পড়ে এবং সেখানেই আশ্রয়শিবির তৈরি করে অবস্থান নেয় তারা। ইতোমধ্যে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্ত পয়েন্টে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ সরকার নো-ম্যানস ল্যান্ড থেকে সরিয়ে উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্থানান্তর করেছে। তবে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে অন্তত ৬ হাজার রোহিঙ্গা এখনও অবস্থান করছে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি সেখানে এসে রোহিঙ্গাদের হুমকি দেন মিয়ানমারের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল অং সো।

 

 

/এএম/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
‘হতাশা থেকে রোহিঙ্গারা আইনবিরোধী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হতে পারে’
অস্ত্র ও গুলিসহ ৫ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী আটক
সর্বশেষ খবর
বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ নিয়ে মুখ খুললেন বাইডেন
বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ নিয়ে মুখ খুললেন বাইডেন
গাছ কাটা ও লাগানোর বিষয়ে আইন-বিধি চেয়ে আইনি নোটিশ
গাছ কাটা ও লাগানোর বিষয়ে আইন-বিধি চেয়ে আইনি নোটিশ
জোরে সালাম শুনেই ঘাড় ফিরিয়ে উত্তর দেন খালেদা জিয়া
জোরে সালাম শুনেই ঘাড় ফিরিয়ে উত্তর দেন খালেদা জিয়া
বজ্রাঘাতে প্রাণ গেলো ১০ জনের
বজ্রাঘাতে প্রাণ গেলো ১০ জনের
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম