X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

কারাগারে জঙ্গিরা যেন তৎপরতা চালাতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখুন: রাষ্ট্রপতি

গাজীপুর প্রতিনিধি
২০ মার্চ ২০১৮, ১৭:৪২আপডেট : ২০ মার্চ ২০১৮, ২০:১৭

গাজীপুরে কারা সপ্তাহ উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। (ছবি-ফোকাস কাংলা)

রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদ বলেছেন, বিশ্বে বর্তমানে কারাগারগুলোকে শাস্তি কার্যকরের স্থান নয়, সংশোধনাগার হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই কারা অভ্যন্তরে বন্দিদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে হবে। এ সময় যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের কারাগারগুলোকে সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তোলার পরামর্শও দেন তিনি। তবে কারাগারের ভেতরে জঙ্গি ও মাদক ব্যবসায়ীরা যেন তৎপরতা চালাতে না পারে সেদিকে নজর রাখার জন্য কারা কর্মকর্তাদের আহ্বান জানান তিনি।  

মঙ্গলবার দুপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার চত্বরে কারাসপ্তাহ-২০১৮ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেছেন। এ সময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খাঁন, স্বরাষ্ট্র সচিব (সুরক্ষা সেবা) ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ কারাগারের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেছেন, রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন সময়ে আমাকেও গ্রেফতার করা হয়। আমি ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া, রাজশাহী ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলাম। কারাগারে কেবল অপরাধী নয়, রাজবন্দি হিসেবে অনেক নেতাকর্মীকেও দিন কাটাতে হয়। আমাদের জাতির পিতাকেও রাজনৈতিক কারণে ১৪ বছরের অধিক সময় কারাগারে কাটাতে হয়। জাতির দুর্ভাগ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতায় আমাদের জাতীয় চার নেতাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে প্রাণ দিতে হয়।

  কারা সপ্তাহ উদ্বোধনের পর কুচকাওয়াচ পরিদর্শন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। (ছবি-ফোকাস বাংলা)

রাষ্ট্রপতি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ১৩টি কারাগার নতুনভাবে নির্মাণের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি কারাগারের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। সিসিটিভি, আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টরসহ আধুনিক নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি সংযোজনের মাধ্যমে কারা নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করা হয়েছে। কারাগারগুলোর বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন, বন্দিদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সমাজে পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে প্রিজন্স অ্যাক্ট পরিবর্তন করে নতুনভাবে ‘প্রিজন্স অ্যান্ড কারেকশনাল সার্ভিসেস অ্যাক্ট’ প্রণয়নের কাজ এগিয়ে চলছে। সর্বোপরি কারা প্রশাসনের দক্ষ নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশের কারাগারগুলো ক্রমান্বয়ে সংশোধনাগারে পরিণত হচ্ছে।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, দীর্ঘদিন সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের মুক্তির আগে পুনঃসামাজিকীকরণ এবং মুক্তির পর নতুন জীবন শুরুর প্রস্তুতিমূলক প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে পাশের দেশের অনুসরণে ‘উন্মুক্ত কারাগার’ নির্মাণের পরিকল্পনা একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এটি বাস্তবায়িত হলে বন্দিদের প্রাকমুক্তি পারিবারিক বন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে এবং তারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে, যা পুনঃঅপরাধরোধে সহায়ক হবে বলে আমার বিশ্বাস।

গাজীপুরে কারা সপ্তাহ উদ্বোধন করছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। (ছবি-ফোকাস বাংলা)

আবদুল হামিদ আরও বলেন, পৃথিবীর কোনও মানুষই অপরাধী হয়ে জন্মগ্রহণ করে না। বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশই তাদের অপরাধী করে তোলে। আইনের দৃষ্টিতে অপরাধী মানুষগুলোর নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের সমাজে পুনর্বাসন করতে কারা কর্তৃপক্ষকে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের কারাগারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও বন্দিদের অপরাধ প্রবণতা কমানোর উদ্যোগ সকলের অকুণ্ঠ প্রশংসা পেয়েছে। এরমধ্যে বন্দির হাতকে দক্ষ কর্মীর হাতে রূপান্তরের জন্য কারাগারে কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ অন্যতম। কারাশিল্পে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী বিক্রয় করে লভ্যাংশের ৫০ শতাংশ বন্দিদের দেওয়ার সিদ্ধান্ত একটি সময়োচিত পদক্ষেপ। সাজা শেষে কারাশিল্পে নিয়োগের ফলে লব্ধ জ্ঞান এবং প্রাপ্ত লভ্যাংশের অর্থ কাজে লাগিয়ে তারা সমাজে পুনর্বাসনের সুযোগ পাচ্ছে। এতে সমাজে নতুন করে তাদের অপরাধ করার প্রবণতাও হ্রাস পাবে। এছাড়া কারাবন্দিদের মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার বিষয়টি বিবেচনা করে তাদের পরিবারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার জন্য ‘মোবাইল ফোন বুথ’ চালু একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এসব পদক্ষেপের ফলে কারাবন্দিরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ পাবে বলে আমি আশা করি।  

রাষ্ট্রপতি কারা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, কারা বিভাগে জনকল্যাণমূলক কাজে নিজেদেরকে তুলে ধরার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। কারাগারের উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে পেশাগত দক্ষতা অর্জন। আর তা অর্জনে প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। রাজশাহীতে কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন এবং কেরানীগঞ্জে আন্তর্জাতিক মানের ‘বঙ্গবন্ধু কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি’ স্থাপন এ বিষয়ে নেওয়া অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বর্তমান বিশ্বে কারাগারকে শাস্তি কার্যকরের স্থান নয়, সংশোধনাগার হিসেবে গণ্য করা হয়। বন্দিদের সঙ্গে মানবিক আচরণ ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের কারাগারগুলোকে সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আপনাদের নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। কারাগারে আটক বন্দিদের অগ্রহণযোগ্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো সংশোধন করে সমাজকে স্বাভাবিক বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া মাদকসেবীদের কাউন্সেলিং-এর মাধ্যমে মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করে স্বাভাবিক জীবনে অভ্যস্ত করে তোলার মতো মহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই আপনারা নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে যাবেন। দেশ ও জাতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জঙ্গি, শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী যেন কারাগারের ভেতরে অভিনব কায়দায় জঙ্গি পরিকল্পনা বা সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে না পারে, সে বিষয়ে আপনাদের দৃঢ় মনোবলের পরিচয় দিতে হবে।

একজন কারা কর্মকর্তার হাতে ক্রেস্ট তুলে দিচ্ছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

কারাগারে আগত বন্দিদের একটি বড় অংশ মাদক মামলায় আটক। এসব মাদকসেবী কিংবা মাদক ব্যবসায়ীরা যাতে কারাগারে থেকে মাদক সেবন বা মাদকের ব্যবসা পরিচালনা করতে না পারে তার জন্য আপনাদের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কারা প্রশাসনের কেউ যাতে এসব অনৈতিক কাজে জড়িয়ে না পড়ে সে ব্যাপারেও কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, একজন বন্দি যখন কারাগারে প্রবেশ করে তখন তার সব দায়দায়িত্ব কারা কর্তৃপক্ষের।

এর আগে তিনি বেলুন উড়িয়ে কারা সপ্তাহ উদ্বোধন করেন এবং কারা মহাপরিদর্শকের সঙ্গে খোলা জিপে চড়ে প্যারেড পরিদর্শন করেন।

বেস্ট প্রোডাক্টিভ জেল রাজশাহী, পুরস্কৃত হলেন ৭ কারা কর্মকর্তা

অনুষ্ঠানে বেস্ট প্রোডাক্টিভ জেল হিসেবে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারকে অ্যাওয়ার্ড (ক্রেস্ট) দেওয়া হয়েছে। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার হালিমা খাতুন ওই ক্রেস্ট গ্রহণ করেন। এছাড়া কাশিমপুর-২-এর ডেপুটি জেলার মাসুদ হোসেন, কুমিল্লার ডেপুটি জেলার শাহনাজ বেগম ও নরসিংদীর ডেপুটি জেলার তানিয়া জামানকে অ্যাওয়ার্ড অব এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড এবং চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস, বান্দরবান জেলা কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার রিজিয়া বেগম বেস্ট লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড, মহিলা কারারক্ষী তারানা পারভীনকে বেস্ট ইনস্ট্রাক্টরের পুরস্কার (ক্রেস্ট) দেওয়া হয়েছে।

/টিএন/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রাজশাহীতে গরমে নাকাল প্রাণিকুল, মারা যাচ্ছে পাখি
রাজশাহীতে গরমে নাকাল প্রাণিকুল, মারা যাচ্ছে পাখি
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
মাটি কাটার সময় ‘গরমে অসুস্থ হয়ে’ নারী শ্রমিকের মৃত্যু
মাটি কাটার সময় ‘গরমে অসুস্থ হয়ে’ নারী শ্রমিকের মৃত্যু
সাকিবের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সাক্ষাৎ
সাকিবের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সাক্ষাৎ
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার