X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

লেবুর গ্রাম বালিয়াখোড়া

মতিউর রহমান, মানিকগঞ্জ
২১ মে ২০১৮, ০৭:৫৫আপডেট : ২১ মে ২০১৮, ১৩:৩০

লেবুর ভারে নেতিয়ে যাওয়া ডালপালা (ছবি- প্রতিনিধি)

গ্রামের ভেতর দিয়ে চলে গেছে আঁকাবাঁকা সরু পথ। পথের দুই ধারে, কাছে-দূরে সবুজে ঘেরা সারি সারি বাড়ি। আর প্রায় প্রতিটা বাড়ির আঙিনায়ই রয়েছে লেবুর বাগান। বাগানজুড়ে সবুজের প্লাবন। নিবিড় সবুজ পাতার ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে কাগজি, এলাচি আর কলম্বো জাতের লেবু। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। গন্ধে জুড়ায় প্রাণও। আশায় বসতি মানুষের। লেবুতে বদলাবে দিন– এই আশায় একজনের দেখাদেখি বাগান করেছেন আরও একজন। এভাবে বাড়ছে চাষ, বাড়ছে চাষি। একসময় এসব বাড়ির আঙিনায় চাষ হতো লাউ-কুমড়ো, আর এখন লেবুর সুবাস। গ্রামটির নাম বালিয়াখোড়া।

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের এই গ্রাম এখন পরিচিতি পেয়েছে ‘লেবুর গ্রাম’ হিসেবে। অনেকে আবার একে ‘ভিটামিন সি’র গ্রাম বলে ডাকেন। এ গ্রামে প্রায় ৩শ’ পরিবারের বাস। প্রত্যেকটা পরিবারই নিজেদের বাড়ির আঙিনায় লাগিয়েছে লেবুর গাছ। এ ছাড়া, এই গ্রামের অন্তত দেড়শ’ পরিবারের একাধিক লেবুর বাগান রয়েছে।

চাষিরা জানান, গ্রামজুড়ে সব ধরনের লেবুর চাষই হয়। তবে বেশি চাষ হয় কলম্বো জাতের লেবু। এ লেবুর ফলন বেশি হয়; লাভও। এছাড়া এখানে প্রচুর কাগজি ও এলাচি জাতের লেবুর চাষ হয়। এখানকার লেবুর গন্ধটা ভালো, স্বাদটাও।

চাষিরা আরও জানান, এ গ্রাম থেকে লেবু যায় সারাদেশেই। সবচেয়ে বেশি যায় ঢাকা ও গাজীপুরে। এ ছাড়া, সাভার, ফরিদপুর, টাঙ্গাইলসহ আরও নানা জেলায় যায় বালিয়াখোড়ার লেবু।

গাছে ঝুলছে লেবু (ছবি- প্রতিনিধি)

লেবুচাষি ও স্থানীয় এক স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নারায়ণ চন্দ্র বাচ্চু বলেন, ‘১৯৫০ সালে আমার বাবা রুহিণীকান্ত হোড় খোকাবাবু পাশের গ্রামের আলী হোসেন ঘড়ি মিয়ার কাছ থেকে ১০টি লেবু গাছের চারা নিয়ে আসেন। এই চারা লাগিয়েই তিনি এ গ্রামে প্রথম লেবু চাষ শুরু করেন।’

তিনি আরও জানান, ১৯৯৬ সালে তার বাবা মারা যান। এরপর থেকে তিনি এই লেবু বাগান দেখভাল করে আসছেন। বর্তমানে তার চারটি লেবু বাগান আছে। ১৫০ শতাংশ জমির ওপর গড়ে তোলা এই বাগানগুলোতে তিনি এলাচি, কাগজি ও কলম্বো জাতের লেবু চাষ করেছেন। এরমধ্যে এবার একশ’ শতাংশ জমিতে কলম্বো, ৪০ শতাংশ জমিতে এলাচি ও ১০ শতাংশ জমিতে কাগজি লেবু চাষ করেছেন।

নারায়ণ চন্দ্র বাচ্চুর অভিযোগ, ‘অনেক সময় গাছে পোকা লাগে। গাছ মরে যায়। কিন্তু কৃষি বিভাগের কেউ এসবের খোঁজ নেয় না।’

চাষি জুয়েল মিয়া (৩৫) জানান, তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে চারটি লেবু বাগান পেয়েছেন। ১৫০ শতাংশ জমির ওপর তৈরি ওই বাগানগুলোতে তিনি এলাচি ও কলম্বো জাতের লেবু চাষ করছেন। এরমধ্যে ১০০ শতাংশ জমিতে কলম্বো এবং ৫০ শতাংশ জমিতে এলাচি লেবু চাষ করেছেন।

তারও অভিযোগ, ‘অনেক সময় অজ্ঞাত কারণে গাছ মরে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। কিন্তু কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় থেকে কেউ এসে খোঁজ নেয় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিজেদের উৎপাদিত লেবু বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করতে গিয়ে নানা হয়রানির শিকার হই। অনেক সময় ন্যায্যমূল্য পাই না। অনেক সময় আবার বাগান থেকেই মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে লেবু বিক্রি করে দিই। এতে লাভ কম হয়।’ তিনি তাদের উৎপাদিত লেবু সুষ্ঠু বিপণনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।

মফিজুল ইসলাম দীপন (৪০) নামে অন্য এক চাষি জানান, তারা চার ভাই মিলে ২৪০ শতাংশ জমিতে লেবু চাষ করেন। কিন্তু কৃষি কর্মকর্তারা তাদের কোনও খোঁজ নেন না। কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করলে তারা আরও বেশি পরিমাণে লেবু চাষ করতে পারতেন।

লেবুচাষি নিজাম রবিন (৪০) বলেন, ‘আমি ১০৫ শতাংশ জমিতে লেবু চাষ করেছি। কৃষি বিভাগ যদি আমাদের সার, ভিটামিন ও কীটনাশকের জোগান দিতো, তাহলে অনেক উপকার হতো।’

বাগান থেকে তোলার পর লেবু বাছাই করছেন চাষিরা (ছবি- প্রতিনিধি)

বালিয়াখোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল খান জানান, বালিয়াখোড়া গ্রামে ৩শ’ পরিবার বাস করে। এ গ্রামে ছোট-বড় মিলে কমপক্ষে দেড়শ’ লেবুর বাগান আছে। এছাড়া, সব বাড়িতেই লেবু গাছ আছে। এই গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই লেবু চাষের আয় দিয়ে জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করেন। সারা বছরই তারা বাগানে মাটি তোলা, চারা তৈরি, সার দেওয়া, লেবু তুলে বাজারে বিক্রি করার কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।

তিনিও বলেন, ‘লেবু চাষে ইউরিয়া, টিএসপি ও পটাশ সার, ভিটামিন এবং কীটনাশক লাগে। কৃষি বিভাগ থেকে লেবু চাষিদের কোনও সহায়তা দেওয়া হয় না। কৃষি বিভাগ একটু নজর দিলে লেবুচাষিরা আরও লাভবান হতেন।’

ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশরাফ উজ্জামান খান বলেন, ‘প্রতিটি ইউনিয়নে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আছেন। তাদেরই মাঠপর্যায়ে কৃষকদের বিভিন্ন সমস্যায় সমাধান দেওয়ার কথা। এক্ষেত্রে যদি কেউ গাফিলতি করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তবে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কোনও লেবুচাষিকে সার-কীটনাশক দেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক হাবিবুর রহমান চৌধুরী।

 

/এমএ/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ওমরাহ করতে স্ত্রীসহ সৌদি আরব যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল
ওমরাহ করতে স্ত্রীসহ সৌদি আরব যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল
ঢাকার অধস্তন আদালতগুলোতে এসি লাগাতে আইনি নোটিশ
ঢাকার অধস্তন আদালতগুলোতে এসি লাগাতে আইনি নোটিশ
ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি পেছালো
অর্থ আত্মসাতের মামলাড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি পেছালো
তিন ঘণ্টা পর স্বাভাবিক হলো রাজবাড়ীর ট্রেন চলাচল
তিন ঘণ্টা পর স্বাভাবিক হলো রাজবাড়ীর ট্রেন চলাচল
সর্বাধিক পঠিত
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি