বাড়ির আঙিনায় আরও কয়েকটি শিশুর সাথে খেলা করছিল পাঁচ বছরের কন্যাশিশুটি। মজা কিনে দেওয়ার কথা বলে ৫২ বছরের এক প্রতিবেশি তাকে নিজের ঘরে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে নরসিংদীর শিবপুরের চক্রধা ইউনিয়নের বিলশরন গ্রামে ঘটনাটি ঘটে ।
ধর্ষণের পর রক্তাক্ত অবস্থায় ছাড়া পেয়ে বাইরে এসে কান্নাকাটি করতে করতে এই ঘটনা অপর শিশুদের জানালে, মানুষ খারাপ বলবে তাই কাউকে জানাতে নিষেধ করে শিশুরা। তবে ওই দিনই বিকালে মায়ের কাছে সব খুলে বলে শিশুটি। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শিশুটি নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি। এই ঘটনায় শিশুটির মা বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে অভিযোগ দিলেও শনিবার দুপুরে মামলা নিয়েছে শিবপুর মডেল থানার পুলিশ।
হাসপাতালে শিশুটির মা সাংবাদিকদের জানান, আমার স্বামী কাতার প্রবাসী। বাড়িটিতে আমার দুই মেয়েকে নিয়ে থাকি। আমার ছোট মেয়েটি শিশু শ্রেণিতে পড়ে। বৃহস্পতিবার স্কুল থেকে ফেরার পর তাকে দুপুরের খাবার খাওয়াই। এরপর বিকেল ৪টার দিকে দরকার হওয়ায় আমি এক প্রতিবেশির বাড়িতে যাই। এইসময় সে আরও কয়েকটি বাচ্চার সাথে উঠোনে খেলা করছিল। ফিরে এসে তাকে গোসল করাতে নিয়ে যাই। শরীরে সাবান লাগানো হলে সে বেদম কান্না করতে থাকে। আমি বলি, গোসল করালে তুমি তো কখনো কান্না কর না, কি হয়েছে তোমার? তখন সে আমাকে বলে, আম্মু, ওই বাড়ির ফজলু আমার সাথে খুব খারাপ খেলা খেলেছে। এসময় তার যৌনাঙ্গ দিয়ে রক্ত ঝরছিল। তখনই তাকে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে হাসপাতালের ডাক্তার আমাদের তাড়াতাড়ি নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি করতে বলে। বৃহস্পতিবার রাতেই তাকে ভর্তি করা হয়।
তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার পর রাতেই শিবপুর থানায় অভিযোগ দেই। সেদিন রাতেই পুলিশ হাসপাতালে এসে দেখে গেলেও শনিবার দুপুর পর্যন্ত মামলা হিসেবে নেওয়া হয়নি। এদিকে ঘটনার পরদিন শুক্রবার আমার অনুপস্থিতিতে বিচার (শালিস দরবার) ডাকা হয়।
তিনি বলেন, বিচারে অভিযুক্ত ব্যক্তি তার দোষ স্বীকার করে নিলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি করিম মুন্সী পাঁচ লাখ টাকায় মীমাংসা করে দেন। কিন্তু টাকা দিয়ে এই অন্যায়ের মীমাংসা হোক এটা আমি চাই না। আমি অপরাধীর শাস্তি চাই। আমি থানা পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছি বলে আমাকে ক্রমাগত হুমকি ধমকি দিচ্ছে অভিযুক্ত ব্যক্তির ছেলেরা। মামলা উঠিয়ে নেওয়ার জন্যও চাপ দেওয়া হচ্ছে।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সৈয়দ আমীরুল হক শামীম জানান, বৃহস্পতিবার রাতে মায়ের সাথে শিশুটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এলে গুরুতর বিবেচনায় আমরা তাকে ভর্তি করি। ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য সব তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। ভেজেইনাল সোয়াব মাইক্রোস্কোপিক পরীক্ষাও করা হয়েছে। খুব দ্রুতই ফলাফল হাতে চলে আসবে।
সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এই সম্পর্কে জানতে চাইলে চক্রধা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি করিম মুন্সী মুঠোফোনে জানান, এসব নিয়ে লেখালেখির দরকার নাই। আমরা সমাধানের একটা চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারি নাই। তিনি এই বিষয়ে আর কিছু বলতে রাজি হননি।
শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ জানান, ‘পাঁচ বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ আমরা পেয়েছিলাম। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে যুক্তিযুক্ত মনে হওয়ায় সেটিকে মামলা হিসেবে নেওয়া হয়েছে। এই ধরণের ঘটনা আপোষের কোন সুযোগ নেই। যদি কেউ দরবারের মাধ্যমে আপোষের চেষ্টা করে থাকেন তবে সেটা অন্যায়। আমরা আপোষের কোন অভিযোগ পাইনি, পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শিবপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান আরিফ উল ইসলাম মৃধা বলেন, ‘এত ছোট একটি মেয়ের সাথে এমন নির্মম ও পাশবিক ঘটনা ঘটেছে জেনে খুব লজ্জা লাগছে। শিশুটির পরিবারের লোকজন ঘটনাটি আমাকে জানানোর পরেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছি। শুনেছি, বিষয়টি ধামাচাপা দিতে আপোষের চেষ্টা হয়েছে। এই ঘটনায় যারা আপোষের চেষ্টা করেছেন, তাদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিৎ। ’