বড়তাকিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ইউসুফ। দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতি করে আসছেন এই ব্যবসায়ী। তার ছেলে নিয়াজ মোরশেদ এলিট, বড়তাকিয়া কন্সট্রাকশনের কর্ণধার। তরুণ এই ব্যবসায়ী রাজনীতি করেন আওয়ামী লীগের। রাজনৈতিক মাঠে বিপরীত মেরুতে থাকার পাশাপাশি এবার নির্বাচনী মাঠেও মুখোমুখি হচ্ছেন এই পিতা-পুত্র। নির্বাচনে অংশ নিতে নিজ নিজ দল থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তারা।
শুধু এই পিতা-পুত্র নয়, এবার নির্বাচনে চট্টগ্রামের চারটি আসনে পিতা-পুত্র মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন। এসব পিতা-পুত্রর অনেকেই একই দল থেকে একই আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। একাধিক আসনের জন্যও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন কেউ কেউ।
চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন মনিরুল ইসলাম ইউসুফ। তার বিপরীতে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তার ছেলে নিয়াজ মোর্শেদ এলিট। একই আসনে আবার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও তার ছেলে মাহবুবুর রহমান রুহেল।
চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী মীর নাছির উদ্দিন। একই আসনে একই দল থেকে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন তার পুত্র সুপ্রিম কোর্টের তরুণ আইনজীবী ব্যারিস্টার মীর হেলাল।
চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। একই আসনে একই দল থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তার ছেলে মুজিবুর রহমান। এই দুই পিতা-পুত্র চট্টগ্রাম-৯ আসন থেকেও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। একই আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বিএনপি নেতা শামসুল আলম ও তার ছেলে শোয়াইব রিয়াদ।
মনোনয়নযুদ্ধে আছেন চাচা-ভাতিজাও। চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং) আসন থেকে চাচা এম মনজুর আলম ও সীতাকুণ্ড থেকে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন ভাতিজা দিদারুল আলম। দুজনই আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।
এদিকে স্বজনদের এ দ্বৈরথ দেখতে ভোটাররা মুখিয়ে থাকলেও কেউ কেউ মনে করছেন, মনোনয়ন নিয়ে দলকে চাপে রাখতেই পিতা-পুত্র বা স্বজনরা একই দল থেকে ফরম নিয়েছেন। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
নুরুল ইসলাম বিএসসি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। প্রধানমন্ত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন সে-ই নির্বাচন করবে। তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’ নিজ পরিবারে প্রার্থী রাখতে পিতা-পুত্র দুজন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নিয়াজ মোর্শেদ এলিট বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্যবসার পাশাপাশি নানা সামাজিক ও ক্রীড়া সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছি। কিন্তু রাজনীতি করলে জনসেবা আরও ভালোভাবে করা যায়। তাই মিরসরাই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তিনি যাকে মনোনয়ন দেবেন আমরা তার পক্ষেই কাজ করবো।’
বাবার রাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা (মনিরুল ইসলাম) এখন বিএনপি করেন। একসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতিও করেছেন। বাবার চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি তার রাজনীতি করছেন। আমি আমারটা করছি।’
মীর হেলাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা বাবা-ছেলে দুজন দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তিনিই নির্বাচন করবেন। বাবা অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ, দলের জন্যও তার যথেষ্ট অবদান রয়েছে। আর তরুণ হিসেবে আমি দলের হয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করছি। দল থেকে যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হোক আমরা জিতবো।’
