X
রবিবার, ২৬ মে ২০২৪
১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

শিক্ষকদের আন্দোলনে চতুর্থ দিনের মতো ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হাবিপ্রবিতে

দিনাজপুর প্রতিনিধি
২০ নভেম্বর ২০১৮, ২০:০৬আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০১৮, ২০:১৩

হাবিপ্রবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকরা দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) শিক্ষকদের মারধর ও লাঞ্ছিতের ঘটনায় মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে চতুর্থ কর্মদিবসে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষকরা। এদিকে শিক্ষকদের ওপর হামলায় জড়িতদের বিচার চেয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা।

আজ মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে বিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থ, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা শিক্ষকদের আন্দোলনের সঙ্গে একত্মতা প্রকাশ করে হামলাকারীদের বিচারের দাবি জানান। একইসঙ্গে ক্লাস-পরীক্ষা চালু করার পদক্ষেপ গ্রহণসহ ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানায়।

এদিকে চতুর্থ কর্মদিবসে প্রশাসনিক ভবনের বারান্দায় মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন মারধর ও লাঞ্ছিতের শিকার হওয়া ৬১ শিক্ষক। আর তাদের সঙ্গ একাত্মতা প্রকাশ করে ও নিজেদের ছয় দফা দাবিতে একইস্থানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন প্রগতিশীল শিক্ষক পরিষদের শতাধিক শিক্ষক।

শিক্ষকদের অভিযোগ, গত ১১ অক্টোবর রিজেন্ট বোর্ডের সভায় ৬১ জন শিক্ষককে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। কিন্তু পদোন্নতি দেওয়া হলেও পদ অনুযায়ী বর্ধিত বেতন দেওয়া হচ্ছিল না তাদের। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে ও কারণ জানতে গত বুধবার (১৪ নভেম্বর) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. বিধান চন্দ্র হাওলাদারের কাছে যান ওই ৬১ শিক্ষক। সেখানে কথা চলাকালীন সময়ে সিনিয়র শিক্ষকরা তাদের ধাক্কা দিয়ে কক্ষ থেকে বের করে দেন। পরে কিছু ছাত্র সিনিয়র শিক্ষকদের ইঙ্গিতে নারী শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করে ও মারধর করে। এই ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা ও বর্ধিত বেতন স্কেল বহাল ও বেতন বৈষম্যের অবসান চেয়ে বৃহস্পতিবার থেকে সব ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করার ঘোষণা দেন ও প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। একইসঙ্গে শিক্ষকদের ওপর হামলার ইঙ্গিত দেওয়ার অভিযোগে প্রক্টর প্রফেসর ড. খালেদ হোসেন, ছাত্র ও পরামর্শ বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. তারিকুল ইসলাম ও রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. সফিউল আলমের বহিষ্কার দাবি করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা।

মঙ্গলবার মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী মামুন বলেন, ‘শিক্ষকদের ওপর ছাত্রদের হামলা ও লাঞ্ছিতের ঘটনা কখনোই কল্পনা করা যায় না। যারা শিক্ষকদের ওপর হামলা চালিয়েছে তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় নিয়ে আসা প্রশাসনের দায়িত্ব। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের বেতন-বৈষম্যও কাম্য নয়।’ হাবিপ্রবিতে শিক্ষকদের আন্দোলনের সমর্থনে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

শিক্ষার্থী হারুন ও রফিক জানান, প্রশাসনের পদক্ষেপহীনতায় মারাত্মক ক্ষতির শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এভাবে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকলে তাদের সেশনজটের মধ্যে পড়তে হতে পারে। এসময় শিক্ষার্থীরা ঘটনার নিন্দা জানিয়ে শিক্ষকদের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে এবং প্রশাসনকে জরুরিভাবে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।

লাঞ্ছিত ও প্রগতিশীলের দেড় শতাধিক শিক্ষক ক্লাস-পরীক্ষা থেকে বিরত থাকায় বিজ্ঞান ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্চিনিয়ারিং অনুষদের ৭টি বিভাগে কোনও ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। এছাড়াও কৃষি, মৎস্য, প্রকৌশল, ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স, সোশাল সায়েন্স অ্যান্ড হিউমিনিটিস ব্যবসা শিক্ষা অনুষদের ৬০-৬৫ শতাংশ ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।

আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী কৃষ্ণ চন্দ্র রায় জানান, ‘গত চার কর্মদিবস ধরে আমরা আন্দোলন করছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের দাবির ব্যাপারে কোনও ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। দ্রুত বর্ধিত বেতন প্রদান, বৈষম্য দূরীকরণ এবং হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে আমরণ অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’

প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. হারুন-অর রশিদ জানান, শিক্ষকদের যে আন্দোলন তা আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা সম্ভব। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে কোনও ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। যাতে করে সংকট আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৬১ শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামও একাত্মতা প্রকাশ করেছে এবং ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছে। দ্রুত সমাধান না হলে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার সঙ্গে তারাও থাকবেন বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. শফিউল আলম জানান, ‘বিষয়টি ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) চিঠি দেওয়া হয়েছে। ইউজিসির সিদ্ধান্ত আসলেই তাদের বর্ধিত বেতনের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আর শিক্ষকদের ওপর কোনও ধরনের হামলা করা হয়নি। এরপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

 

/এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বেইজিং যাচ্ছেন পররাষ্ট্র সচিব
বেইজিং যাচ্ছেন পররাষ্ট্র সচিব
নদী রক্ষার যুদ্ধে আমরা জয়ী হবো: নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী
নদী রক্ষার যুদ্ধে আমরা জয়ী হবো: নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সেপটিক ট্যাংক নির্মাণ করতে গিয়ে প্রাণ গেলো ২ শ্রমিকের
সেপটিক ট্যাংক নির্মাণ করতে গিয়ে প্রাণ গেলো ২ শ্রমিকের
বিমান বাহিনীর নতুন প্রধান হাসান মাহমুদ খাঁন
বিমান বাহিনীর নতুন প্রধান হাসান মাহমুদ খাঁন
সর্বাধিক পঠিত
এমপি আনার হত্যা: কে এই সিলিস্তা রহমান?
এমপি আনার হত্যা: কে এই সিলিস্তা রহমান?
ঘূর্ণিঝড় রিমাল: পায়রা ও মোংলায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত
ঘূর্ণিঝড় রিমাল: পায়রা ও মোংলায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত
জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেলো সুন্দরবন
জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেলো সুন্দরবন
বেনজীরের বাঁচার উপায় কী
বেনজীরের বাঁচার উপায় কী
সান ফার্মার নতুন কারখানা উদ্বোধন করলেন সালমান এফ রহমান
সান ফার্মার নতুন কারখানা উদ্বোধন করলেন সালমান এফ রহমান