X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে ৭০ ভাগ আম শেষ

দুলাল আব্দুল্লাহ, রাজশাহী
০১ জুলাই ২০২০, ০৮:০০আপডেট : ০১ জুলাই ২০২০, ০৮:০০

 

রাজশাহীর একটি আমের বাজারে ক্রেটে সাজানো আম

রাজশাহী জেলায় মঙ্গলবার (৩০ জুন) পর্যন্ত ৭০ ভাগ আম গাছ থেকে নামিয়ে বিক্রি করা হয়েছে। আগামী ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে বাকি ৩০ ভাগ আমও গাছ থেকে নামানো হয়ে যাবে।

এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক শামসুল হক।

তিনি জানান, ভালো জাতের আমের মধ্যে এখনও বাজারে রয়েছে ল্যাংড়া, আম্রপালি ও ফজলি। এবার জেলায় ৭০০ কোটি টাকার আম ব্যবসায়ের টার্গেট ধরা হয়েছে। করোনার মধ্যেও দাম ভালো থাকায় এ টার্গেট পূরণ অসম্ভব নয়। গত মৌসুমে ৪-৫ জন ব্যক্তি অনলাইনে আমের ব্যবসা করছিলেন। কিন্তু এবার ৩৫ থেকে ৪০ জন্য ব্যক্তি অনলাইনে আমের ব্যবসা করছেন।

রাজশাহীর আমের বাজারে ক্রেতাদের দরদাম

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলায় আমবাগান রয়েছে ১৭ হাজার ৬৮৬ হেক্টর জমিতে। এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। অপরিপক্ক আম নামানো ঠেকাতে গত চার বছরের মতো এবারও আম নামানোর সময় নির্ধারণ করে দেয় জেলা প্রশাসন। সে অনুযায়ী গত ১৫ মে থেকে গুটি আম, ২০ মে থেকে গোপালভোগ, ২৫ মে থেকে রানীপছন্দ ও লক্ষণভোগ বা লখনা এবং ২৮ মে থেকে হিমসাগর বা খিরসাপাত, ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে আম্রপালি, ১৫ জুন থেকে ফজলি নামানোর সময় শুরু হয়েছে। সবার শেষে ১০ জুলাই থেকে নামবে আশ্বিনা এবং বারী আম-৪ জাতের আম।

এদিকে এক সপ্তাহ আগেই রাজশাহীর বাজারে নিঃশেষ হয়ে গেছে হিমসাগর ও গোপালভোগ আম। এই দুই জাতের আমের ওপরেই সাধারণ ক্রেতাদের চাহিদা বেশি থাকে। আর শেষের পথে ল্যাংড়া আম। তাই এই সুযোগে এখন রাজশাহীতে দিনে দিনে আমের দাম বেড়ে যাচ্ছে। শুধু লক্ষণভোগ বাদে বাকি সব জাতের আমের দাম বর্তমানে বেশি।

খোলা মার্কেটে আমের দাম নিয়ে বিক্রেতা ও ক্রেতার মধ্যে কথা হচ্ছে।

মঙ্গলবার (৩০ জুন) রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের হাট বানেশ্বর হাটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমের যে হাট ছিল কাচারি মাঠে সেই মাঠ এখন ফাঁকা! কারণ জানতে চাইলে ক্রেতারা জানান, এবার করোনার জন্য বণিক সমিতির সামনে আরও বড় মাঠে আমের গাড়ি রাখতে বলা হয়েছে। আর সকল মোকামে পুরোদমে চলছে আমের বেচাকেনা।

আমচাষী ও ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এখন হিমসাগর নেই! গোপালভোগ অনেকদিন আগেই ফুরিয়েছে। এখন হাটে মোট ৫ রকম আম পাওয়া যাচ্ছে, আমের রাজা ল্যাংড়া, লক্ষণভোগ, ফজলি ও আম্রপালি। তাই সকল আমের দাম বেড়েছে আগের চেয়ে অনেকগুণ বেশি। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন গোপালভোগ ও হিমসাগর সকলের প্রিয় আম। তা ফুরিয়েছে। এখন হাটে এই আমের জায়গায় ল্যাংড়া, আম্রপালি চাহিদা মিটাচ্ছে। তবে সব আমের দাম এখন বাড়তি। আর গাছেও তেমন আম নেই। আমের মৌসুম শেষ। গাছে আম পেকে যাচ্ছে। তাই কিছুদিন পরে প্রায় সকল আম শেষ হয়ে যাবে। 

পুঠিয়া উপজেলার গন্ডগোহালী আম চাষি আরিফ সাহাদাত জানান, কয়েক জাতের আমের বাগান আছে তার। কিন্তু প্রায় বাগানগুলো তিনি আগেই ব্যাপারির কাছে বিক্রি করেছেন। এখন যেমন দাম আছে তাতে নিজে বিক্রি করলে আরও লাভবান হওয়া যেতো।

পুঠিয়ার ভাল্লুকগাছি এলাকার আম চাষি হাবিব জানান, কয়েক হাটে তিনি প্রচুর আম বিক্রি করেছেন। এখন তার গাছে ফজলি আম রয়েছে।

বানেশ্বর হাটের আম ব্যবসায়ী শিমুল হোসেন জানান, এখন আমের প্রায় শেষ মৌসুম চলছে। ল্যাংড়া আর আম্রপালি ভালো বিক্রি হচ্ছে। তবে আর কিছুদিন পরে তা থাকবে না! তিনি জানান, এবার গুটি ও লক্ষণ ভোগের দাম কম ছিল। তাছাড়া অন্য ভালো জাতের সকল আম অনেক বেশি দামে বিক্রি করা হয়েছে।

রকি এন্টার প্রাইজের ব্যবসায়ী নাসির উদ্দির জানান, এখন প্রায় ৫ জাতের আম আছে তার মোকামে। এর মাঝে ল্যাংড়া বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩২০০ টাকা মণ। আম্রপালি ২১০০ থেকে ২৩০০ টাকা মণ। ফজলি ১ হাজার থেকে ১৩০০ টাকা মণ। এছাড়াও লক্ষণভোগ ১ হাজার ও ১২০০ টাকা মণে বিক্রি হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে রাজশাহীতে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ফজলি জাতের আম।

অন্যদিকে, রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় প্রতিদিন সরকারি হিসেবে ৪ কোটি টাকার আম বেচাকেনা হচ্ছে। তবে বেসরকারি হিসেব বলছে, এই বিকিকিনি ৬ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। উপজেলায় আমকে ঘিরে চলছে ব্যস্ততা।

ভালো জাতের আম ফুরিয়ে যাচ্ছে রাজশাহী জেলায়

জানা যায়, বাঘা উপজেলায় দু’টি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নে ৩০ হাজার ৩৮৯টি কৃষি পরিবার রয়েছে। আম বাগান রয়েছে ৮ হাজার ৩৬৮ হেক্টর। উপজেলার সড়কপথ, পতিত জমি ও বাড়ির আঙিনার পাশাপাশি বিঘার পর বিঘা জমিতে আমের গাছ রোপণ করা রয়েছে। বর্তমানে উপজেলায় ছোট বড় দুই হাজার ব্যবসায়ী রয়েছে। তারা সকাল থেকেই আম নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তারা আমের ওপর নির্ভরশীল হয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। এ উপজেলা আম দেশের পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছে। উপজেলায় প্রায় দুই শতাধিক আড়ত রয়েছে। কর্মচারী রয়েছে দুই হাজার। বাঘা উপজেলায় প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১ হাজার মেট্রিক টন আম উপজেলার বাইরে চালান করা হয়।

বাঘা উপজেলার আড়ানী বাজারের মঞ্জু এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটার মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, চলতি আম মৌসুমে আমার আড়তে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার আম বেচাকেনা হয়। তবে উপজেলায় উৎপাদনকারী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ কোটি টাকা বেচাকেনা করে।

বাঘা উপজেলার মনিগ্রামের আম ব্যব্যসায়ী জিল্লুর রহমান বলেন, আমার প্রায় দুই কোটি টাকার আম ক্রয় করা রয়েছে। সেখানে প্রতিদিন ৪৫ জন করে শ্রমিক কাজ করে। তাদের জনপ্রতি মজুরি ৩৫০ টাকা করে। আমি প্রতিদিন এক ট্রাক করে আম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আড়তে দিয়ে থাকি।

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, সরকারি হিসেবে চলতি মৌসুমে প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১ হাজার মেট্রিক টন আম উপজেলার বাইরে চালান করা হয়। এর আনুমানিক মূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা।

বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা বলেন, নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী আম নামানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সব সময় নজরদারি ও কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চিকিৎসকের ওপর হামলা ও রোগীর প্রতি অবহেলা সহ্য করা হবে না
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারিচিকিৎসকের ওপর হামলা ও রোগীর প্রতি অবহেলা সহ্য করা হবে না
নিখোঁজের দুই দিন পর মেঘনায় মিললো যুবকের মরদেহ
নিখোঁজের দুই দিন পর মেঘনায় মিললো যুবকের মরদেহ
আম আদমি পার্টির সাথে জোট, দিল্লি কংগ্রেস প্রধানের পদত্যাগ
আম আদমি পার্টির সাথে জোট, দিল্লি কংগ্রেস প্রধানের পদত্যাগ
কোটালীপাড়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কোটালীপাড়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে