খাগড়াছড়িতে স্ত্রীর দায়ের করা নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার ২০ দিন পরও গ্রেফতার হননি কুড়িগ্রামে সাংবাদিক নির্যাতনে অভিযুক্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা। নভেম্বরের ১ তারিখে খাগড়াছড়ির নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. আবু তাহের ওই ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন বলে জানান মামলার বাদী চন্দ্রিকা চাকমার আইনজীবী সৌরভ ত্রিপুরা। কিন্তু পুলিশ বলছে তারা এখনও গ্রেফতারি পরোয়ানা পাননি।
রিন্টু চাকমার স্ত্রী চন্দ্রিকা চাকমার দায়ের করা মামলার সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার আমতলী গ্রামের অক্ষয়মণি চাকমার ছেলে রিন্টু বিকাশ চাকমার সঙ্গে চন্দ্রিকা চাকমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে নানা অজুহাতে যৌতুক দাবি করে আসছিলো রিন্টু চাকমা। যৌতুক না দেওয়ায় পারিবারিকভাবে চন্দ্রিকা চাকমাকে প্রায় নির্যাতন করা হতো। এমনকি কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মারারও চেষ্টা করা হয়। ২০১৪ সালে তাদের ঘরে কন্যা সন্তান আসে। বেকার থাকায় রিন্টু বিকাশ চাকমা শ্বশুরবাড়ি থেকে বিভিন্ন সময় মোটা অঙ্কের যৌতুক নেন। বিসিএস ভাইভার আগে চাকরির জন্য ঘুষ দেওয়ার কথা বলে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে অভিযুক্ত রিন্টু চাকমা। এসময় তাকে দুই লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে দেওয়া হয়। কুড়িগ্রামে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় বিভাগীয় মামলা ও ওএসডি থেকে খালাস পেতে রিন্টু আরও পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে চন্দ্রিকার ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালান বলে অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনে শিকার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতেও বাধ্য হন চন্দ্রিকা চাকমা।
এজাহার সূত্রে আরও জানা যায়, রিন্টু চাকমা স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন। ঘরের মেঝেতে ফেলে স্ত্রীর বুক ও শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে নির্যাতনও চালান তিনি। এমনকি রিন্টুর আঘাত থেকে বাদ যায়নি ছয় বছরের শিশুকন্যাও।
এদিকে রিন্টু চাকমার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে শিশু কন্যাসহ ৯ সাক্ষীর বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরেন বিচার বিভাগীয় তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া খাগড়াছড়ির সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোরশেদুল আলম।
নির্যাতনের শিকার ভিকটিমের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৌরভ ত্রিপুরা জানান, ওএসডি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমার বিরুদ্ধে আদালতের জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা তার কর্মস্থল ও গ্রামের বাড়ি গুইমারার আমতলীতেও পাঠানো হয়েছে। তবে এখনও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এখানে আদালতের নির্দেশও প্রতিপালিত হচ্ছে না।
তবে গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমানের দাবি, ‘আমরা রিন্টু চাকমার বিরুদ্ধে কোনও গ্রেফতারি পরোয়ানা পাইনি। গ্রেফতারি পরোয়ানা পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার বাদী চন্দ্রিকা চাকমা বলেন, আমি ন্যায়বিচার চাই। আমাকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে। দ্রুত রিন্টু চাকমাকে গ্রেফতারের দাবি জানান নির্যাতনের শিকার ওই নারী।
উল্লেখ্য, বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে গত ১৩ মার্চ রাতের আঁধারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমার নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে নিয়ে ‘বিবস্ত্র’ করে নির্যাতনের ঘটনায় কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের বিরুদ্ধে সে সময় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে।
আরও পড়ুন:
‘ডিসি অফিসে নিয়ে সাংবাদিক আরিফকে চোখ বেঁধে বিবস্ত্র করে পেটানো হয়’
কুড়িগ্রামে মধ্যরাতের মোবাইল কোর্ট: রায় ও সাক্ষ্যতে নাটকীয়তা
মধ্যরাতে সাংবাদিক আরিফুলকে তুলে নিয়ে গেলো মোবাইল কোর্ট
