X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

‘ভাঙতে ভাঙতে সবকিছু গেছে গা’

জামালপুর প্রতিনিধি
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:৫৯আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১:০৯

নদী ভাঙনে সাত বার বসতবাড়ি হারিয়েছেন জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার বাসিন্দা হালিমা বেগম। শেষবার ঠাঁই হয়েছিল উপজেলার উত্তর সিরাজাবাদ গ্রামে। সেটাও এবার বিলীন হয়ে গেছে। পরিবারের আট সদস্য নিয়ে তিনি এখন রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন।

রহিমা বেগম বলেন, ‘আঙ্গর সাতটা (সাতবার) ভাঙা হয়ছে। ভাঙতে ভাঙতে সবকিছু গেছে গা। কিছু কিছু বস্তি (আসবাবপত্র) নিয়াইছি। এহনতো নিজের জমি নাইখে। কোনোরকম খুঁটি-খাটি গাইড়ে রাস্তার উপর আছি। কিন্তু রাস্তার মধ্যে পুনাই (সন্তান) নিয়ে এইভাবে আর কইদিন থাকমু?’

শুধু রহিমা বেগম নয়, জামালপুরের কমপক্ষে আরও ৩০টি পরিবার শেষ সম্বল ভিটেমাটি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বন্যার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। কয়েক সপ্তাহে নদীগর্ভে চলে গেছে শতাধিক বসতবাড়ি-ফসলি জমি।

নদীগর্ভে চলে গেছে শতাধিক বসতবাড়ি-ফসলি জমি

সরকারি হিসাবে ভাঙনে গৃহহীন হয়ে পড়েছে ৬৫টি পরিবার। এছাড়া হুমকিতে রয়েছে অসংখ্য মসজিদ, মাদ্রাসা, বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। এসব রক্ষায় ভাঙর রোধে দ্রুত কাজ করার দাবি এলাকাবাসীর।

গত কয়েকদিনের ভাঙনে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার দেওয়ানগঞ্জ ও খোলাবড়ি সড়কের ৩০০ মিটার নদীগর্ভে চলে গেছে। এতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে দেওয়ানগঞ্জের অসংখ্য মানুষ। খোলাবাড়ি সড়কের পাশে থাকা ২০টি পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

খোলা বাড়ি সড়কের ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত সামাদ মিয়া বলেন, ‘দুই তিন আগে রাতের ভাঙনে আমাদের বাড়িঘর অর্ধেক ভেঙে গেছে। বাকি অর্ধেক ভেঙে এখানে নিয়ে এসেছি। আমাদের বাড়ি তোলার মতো কোনও জায়গা আর নেই। তাই রাস্তাতেই আছি। যাদের বাড়িঘর বন্যায় তলিয়ে গেছে, তারা বাড়িঘর পাবে। কিন্তু আমরা কী করবো? আমরা তো নিঃস্ব হয়ে গেলাম।’

একই এলাকার কামরুজ্জামান বলেন, ‘খোলাবাড়ি রোডটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। হাজার হাজার লোক চলাচল করতো। সেই জায়গা এই দুই দিনের ভেতরে ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। কোনও লোক পায়ে হেঁটে যেতে পারছে না। দুইটা গরুও নদীতে পড়ে গেছে।’

ভাঙন ঝুঁকিতে থাকা ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে অনেকে

এদিকে বকশিগঞ্জ উপজেলার নিলক্ষিয়া ইউনিয়নের কুশলনগর গ্রামে দশানি নদীর টানা ২০ দিনের ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে অন্তত ২৫-২৬টি পরিবারের বসতবাড়ি। এলাকাবাসীর দাবি, ভাঙন রোধে প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এলাকাবাসী চাঁদা তুলে বাঁশের বাঁধ দিয়েছে। কিন্তু এতেও ভাঙন কমছে না।

কুশলনগর গ্রামের বাসিন্দা নুরুল হক বলেন, ‘গ্রামের সবার বাড়িঘর ভাঙার অবস্থা দেখে আমরা নিজেরাই  চাঁদা তুলে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ করে নদীতে বাঁশ দিয়েছি। কিন্তু সেটা আমাদের কোনও কাজে আসছে না। আমাদের টিএনও, চেয়ারম্যান ও মেম্বার দুই আগে পরিদর্শন করে গেছে। তবে এখনও তাদের কাছ থেকে কোনও সহযোগিতা পায়নি।’

বকশিগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউনিয়নের আইরমারী খানপাড়া গ্রামেও দশানি নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত ১৫ দিন আগে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করার সাত দিন পর আবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, জিও ব্যাগ ডাম্পিং করার সময় অনিয়ম ও দুর্নীতি করায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।

আইরমারী খানপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সোলায়মান মিয়া বলেন, নদীর পাড়ে ১৩ মিটার জায়গায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং করার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদার সেখানে পাঁচ মিটার জায়গায় ডাম্পিং করে। এসব অনিয়মের কারণে আবার ভাঙন দেখা দিয়েছে। 

নদী ভাঙনে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ

একই গ্রামের বাসিন্দা কাউসার মিয়া বলেন, দশানি নদীর ৩০০ মিটার জায়গায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং করার কথা থাকলেও, ১৫০ মিটার জায়গায় কাজ করা হয়েছে। এতে কোনও সুফল আসছে না। আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে। এখন গোরস্থানসহ আমাদের বাড়িঘর হুমকিতে আছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ বলেন, যমুনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন রোধে দ্রুত কাজ শুরু করবো। তবে এখন পানির স্রোত অনেক বেশি। তাই ইচ্ছা করলেই কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। তবুও কয়েক জায়গায় কিছু কাজ করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পানি না কমলে চূড়ান্ত কাজ করা সম্ভব হবে না।

তিনি আরও জানান, বকশিগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউনিয়নের আইরমারী খানপাড়া গ্রামে দশানি নদীর ভাঙন রোধে কাজ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এই জায়গায় কোনও অনিয়ম বা দুর্নীতির সুযোগ নেই। মূলত যে জায়গায় কাজ করা হয়েছে এর বাইরে ভাঙন শুরু হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সেই ভাঙন রোধেও কাজ করবে।

/এসএইচ/
সম্পর্কিত
কেনিয়ায় বন্যায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৮১
বৃষ্টি ও বন্যায় কেনিয়ায় নিহত অন্তত ৪৫
তলিয়ে গেছে দুবাই বিমানবন্দর, বিপাকে প্রবাসীরা
সর্বশেষ খবর
‘মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’
‘মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’
সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী মারা গেছেন
সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী মারা গেছেন
ইউক্রেনের শান্তি আলোচনায় আমন্ত্রণ পায়নি রাশিয়া: সুইজারল্যান্ড
ইউক্রেনের শান্তি আলোচনায় আমন্ত্রণ পায়নি রাশিয়া: সুইজারল্যান্ড
দাতা সংস্থাগুলো বাংলাদেশকে ঋণের শর্তে আটকে ফেলেছে: ক্যাব
দাতা সংস্থাগুলো বাংলাদেশকে ঋণের শর্তে আটকে ফেলেছে: ক্যাব
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ