X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

রহিমার স্বামীকে সন্দেহ করছে পিবিআই

হেদায়েৎ হোসেন, খুলনা
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৫:৪৪আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৬:২২

খুলনার আলোচিত রহিমা বেগম নিখোঁজের ঘটনায় পিবিআই তার স্বামী বেল্লাল ঘটক ওরফে বেলাল হাওলাদারকেই সন্দেহ করছে। এ পর্যন্ত পিবিআইয়ের কাছে এবং আদালতে রহিমা বেগম যেসব তথ্য দিয়েছেন তা সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছে পিবিআই। তবে এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। তদন্ত কর্মকর্তা ফরিদপুর ঘুরে এখন বান্দরবান যাবেন তথ্য উদঘাটনে।

বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) পিবিআই পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা রহিমার কাছ থেকে পাওয়া সব তথ্যই ক্রস চেক করছি। এখন পর্যন্ত তার দেওয়া তথ্যের সপক্ষে কোনও তথ্য পাইনি। তার দেওয়া তথ্য বিভ্রান্তিমূলক। ২৭ সেপ্টেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা ফরিদপুরের সৈয়দপুর গ্রামে কুদ্দুসের বাড়ি ঘুরে এসেছেন। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এখন বান্দরবানে যাবেন তদন্ত কর্মকর্তা। বান্দরবান সদরের ইসলামপুরে রহিমা গিয়েছিলেন। সেখানকার তথ্যও যাচাই করা হবে। তদন্ত চলবে।’

বেলাল হাওলাদারকে জিজ্ঞাসাবাদের পর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এই মামলায় একমাত্র রহিমার দ্বিতীয় স্বামী বেলাল হাওলাদারকেই সন্দেহ করছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলে সঠিক তথ্য পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী আমরা। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। শুনানি হয়নি এখনও। এই মামলার তদন্ত শেষে আদালতে রিপোর্ট দেওয়া হবে। তারপর এই মামলা বা ভিকটিম রহিমা, মেয়ে মরিয়ম ও বাদী আদুরীসহ অন্যদের ব্যাপারে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে আদালতই নির্দেশ দেবেন।’

পিবিআই পুলিশ সুপার বলেন, ‘রহিমা বেগম জানিয়েছিলেন, ২৭ আগস্ট রাতে অপহরণ হওয়ার পর হুঁশ ফিরে সাইনবোর্ড পড়ে দেখেন তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে রয়েছেন। সেখান থেকে তিনি বান্দরবান এলাকার মণি বেগমের ভাতের হোটেলে চাকরি করেছেন। হোটেল মালিক তাকে স্থানীয় একটি ক্যাম্পে চাকরি দেওয়ার কথা বলেন। চাকরির জন্য তার জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি কার্ডের প্রয়োজন। জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি কার্ডের জন্য তিনি সরাসরি চলে আসেন ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে তার পূর্ব পরিচিত কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে। সেখানে অবস্থান করে ১৬ সেপ্টেম্বর যান সৈয়দপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হকের কাছে। সেখানে গিয়ে তিনি বলেন, “আমার জন্ম হয়েছে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে। কর্মের তাগিদে বাগেরহাটে থাকি। সেখানে গৃহপরিচারিকার কাজ করি।” এতে সন্দেহ হওয়ায় তাকে জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি দেওয়া হয়নি।’

এদিকে, রহিমার দেওয়া তথ্যের কোনও মিল পিবিআইয়ের না পাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মরিয়ম আক্তার ওরফে মরিয়ম মান্নান বলেন, ‘মাকে পাওয়ার পরে আমারও তেমনটাই মনে হচ্ছে। সঠিকভাবে বলতে পারবে পিবিআই। যেহেতু তদন্ত করছে তারা, তাই সঠিক উত্তর তারাই দিতে পারবেন। আমি মিডিয়ার সামনে আসবো খুব তাড়াতাড়ি। সবার সব প্রশ্নের উত্তর দেবো।’

মরিয়ম আরও বলেন, ‘দেখুন আমার মা হারিয়েছে, আমরা খুঁজেছি তাকে। খুঁজতে হবে তাকে। আমার মনে হচ্ছে, মা অপহরণ হননি। তবে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এমন কাজ– এটা ভাবা ভুল। আমার মা নিজের জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণ। তিনি আমাদের ওপর রাগ করে গিয়েছেন। অভিযোগ আমাদের ওপর। আর একটা কথা, মা ভাবেননি আমরা মামলা করবো। মামলায় সরাসরি কারও নাম আমরা দিইনি। পুলিশ যখন বলেছে, আমরা কাদের সন্দেহ করি, তখন যাদের সঙ্গে বিরোধ ছিল তাদের নাম সন্দেহ তালিকায় আনা হইছে। এখন মা আমাকেও সন্দেহ করছেন। আমার মায়ের যত্ন নেওয়া এখন সব থেকে জরুরি। মায়ের পাশে থাকার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই নেই। আসলে আমি মায়ের পাশে থাকতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘মায়ের নিখোঁজের বিষয়ে আমার এবং আমার পরিবারের কোনও সম্পর্ক নেই। তারপরও প্রশাসনকে বলবো তদন্ত করতে। আমি এবং আমরা যদি জড়িত থাকি, আমাদের বিচারের আওতায় আনা হোক। মাকে খোঁজা কোনও অন্যায় না। আপনার মা হারালে আপনিও খুঁজতেন। মরিয়ম মান্নান বলেন, ‘মাকে পেয়েছি খুশি। ব্যক্তিগত, সামাজিক যত হেনস্তার শিকার হই না কেন, মায়ের হাত ছাড়বো না। মা গিয়েছেন, বলেননি আমাদের মামলা করতে। আমরা জানতামও না।’

মায়ের নিখোঁজ হওয়া প্রসঙ্গে মরিয়ম বলেন, ‘কীভাবে বুঝবো মা একা একা চলে গেছেন, আমাদের ছেড়ে, আর ফিরবেন না! জানলে কোনোদিন জিডি মামলায় যেতাম না। ডাক্তার দেখাতে গিয়ে আমার প্রথম মনে হয়েছে মা অপহরণ হননি। কারণ, যখন ডাক্তার জিজ্ঞেস করছিলেন কী হয়েছে, তিনি বলেছেন তাকে মেরেছে। এক বছর আগে তাকে যারা যেভাবে মেরেছিল সেই ব্যাখ্যা করছেন মা। মাকে দেখে ভয় পাচ্ছি। মা আমাকে অবিশ্বাস করছেন। এখন মিডিয়া বা কারও সামনে আসতে চান না। মায়ের যত্ন নেওয়াটা জরুরি।’

উল্লেখ্য, রহিমার পরিবারের দাবি, ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে পানি আনতে বাড়ি থেকে নিচে নামেন রহিমা বেগম (৫২)। একঘণ্টা পার হলেও তিনি বাসায় ফিরে আসেননি। পরে মায়ের খোঁজে সন্তানরা সেখানে গিয়ে তার ব্যবহৃত স্যান্ডেল, ওড়না ও কলস রাস্তার ওপর পড়ে থাকতে দেখেন। রাতে সম্ভাব্য সব স্থানে সন্ধান নেওয়ার পর সন্তানরা মাকে পাননি। এরপর সাধারণ ডায়েরি ও পরে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করে পরিবার। এ মামলার তদন্তকালে পুলিশ ও র‌্যাব ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেফতার করে। তারা হলেন– খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রধান প্রকৌশল কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম কিবরিয়া, রহিমার দ্বিতীয় স্বামী বেল্লাল ঘটক ওরফে বেলাল হাওলাদার, দৌলতপুর মহেশ্বরপাশা বণিকপাড়া এলাকার মহিউদ্দিন, পলাশ, জুয়েল ও হেলাল শরীফ। এ অবস্থায় বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ সেপ্টেম্বর আদালত মামলাটির তদন্তভার পিবিআইতে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে নথিপত্র ১৭ সেপ্টেম্বর বুঝে নেয় পিবিআই খুলনা। এখন এ মামলার তদন্ত করছেন পিবিআই পরিদর্শক আব্দুল মান্নান। ২২ সেপ্টেম্বর রহিমার মেয়ে মরিয়ম আক্তার ওরফে মরিয়ম মান্নান দাবি করেন, তার মায়ের লাশ তিনি পেয়েছেন। তিনি ২৩ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের ফুলপুরে দিনভর অবস্থান নেন এবং ব্যস্ততম সময় অতিবাহিত করেন। একই সঙ্গে সেখানে ১০ সেপ্টেম্বর উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত এক নারীর লাশকে নিজের মা বলে শনাক্ত করেন এবং ডিএনএ প্রোফাইল করার জন্য সম্মত হন। ২৪ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের আদালতে ডিএনএ প্রোফাইল করার আবেদন করা হয়। আদালত ২৫ সেপ্টেম্বর শুনানি শেষে ডিএনএ প্রোফাইল করার অনুমতি দেন।

এদিকে, ফরিদপুরের বোয়ালমারি উপজেলার সৈয়দপুর থেকে শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতে রহিমা বেগমকে জীবিত উদ্ধার করে পুলিশ। ২৫ সেপ্টেম্বর বিকালে আদালতে সোপর্দ করা হলে রহিমা ২২ ধারার জবানবন্দিতে তিনি অপহরণ হয়েছিলেন বলেই দাবি করেন। এরপর সন্ধ্যায় আদালত বাদী আদুরীর জিম্মায় তাকে মুক্তি দেন। এরপর ওই রাতেই মেয়ে মরিয়ম ও আদুরী তাদের মাকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান। ঢাকায় রহিমা বেগমের চিকিৎসা চলছে।

আরও পড়ুন:

/এমএএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ
জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ
দক্ষিণখানে ভবনের চার তলা থেকে পড়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
দক্ষিণখানে ভবনের চার তলা থেকে পড়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যাজুয়েট হলেন ১৯ জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যাজুয়েট হলেন ১৯ জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী