X
বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩
১৮ আশ্বিন ১৪৩০

জীবিত উদ্ধার রহিমা, বস্তাবন্দি লাশটা তাহলে কার?

খুলনা প্রতিনিধি
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৫:১৯আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৫:৪৬

ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায় দাফন হওয়া এক নারীর লাশ নিজের মায়ের বলে দাবি করেছিলেন খুলনার দৌলতপুরের মরিয়ম মান্নান। শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে ফুলপুর থানায় গিয়ে উদ্ধারকৃত নারীর পোশাক ও সংরক্ষিত আলামত দেখে এমন দাবি করেন তিনি। তার এমন দাবির একদিন পরই নিখোঁজ রহিমা খাতুনকে (৫২) জীবিত অবস্থায় ফরিদপুরের বোয়ালমারী ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিখোঁজের ২৮ দিন পর শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ১১টার দিকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে ফুলপুর উপজেলায় দাফন হওয়া লাশটি আসলে কার?

এ বিষয়ে জানতে শনিবার রাতে ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলা ট্রিবিউনের খুলনা প্রতিনিধি। জীবিত উদ্ধার রহিমা, বস্তাবন্দি লাশটা তাহলে কার?

ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'সেদিন পোশাক ও অন্যান্য আলামত দেখে মরিয়ম মান্নান দাবি করেছেন লাশটি তার মায়ের। তখন আমরা বলেছি, ডিএনএ পরীক্ষা না করে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। ডিএনএ পরীক্ষার পরই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।'

তিনি বলেন, '১০ সেপ্টেম্বর বস্তাবন্দি অবস্থায় ওই লাশটি আমরা উদ্ধার করেছিলাম। প্রাথমিকভাবে এটি হত্যাকাণ্ড বলে মনে হয়েছে আমাদের। হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা লাশের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি। ওই দিনই অজ্ঞাত লাশটি উদ্ধারের খবর পেয়ে নওগাঁ থেকে এক নারী ফুলপুর থানায় আসেন। তিনি দাবি করেন, লাশটি তার নিখোঁজ মেয়ের হতে পারে। এরপর আমরা তাকে সব আলামত দেখাই। কিন্তু তাতে তার সন্দেহ থেকে যায়। এরপর আমরা তার মেয়ের বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে অনুসন্ধান চালাই। দুদিন পর তার মেয়েকে ঢাকার বসুন্ধরা থেকে উদ্ধার করে দিই। এর মধ্যে লাশের দাবিদার না পাওয়ায় দুদিন পর দাফন করা হয়।'

ওসি বলেন, 'গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ খুলনার মরিয়মের কল আসে আমাদের কাছে। তখন মোবাইলে ধারণ করা লাশের আলামত ও পরনের পোশাকের ছবি তার কাছে পাঠানো হয়। ওই ছবি দেখেই মোবাইলে মরিয়ম জানান, লাশটি তার মায়ের। মরিয়মের মা ও দাফন করা নারীর বয়সের গরমিল এবং কিছু তথ্য অস্বাভাবিক মনে হওয়ায় তাকে থানায় এসে যাবতীয় আলামত দেখে লাশ শনাক্ত করতে বলেছিলাম। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে তিনি ফুলপুর থানায় আসেন। এরপর লাশ উদ্ধারের স্থান ও কবর দেওয়া স্থান ঘুরে দেখেন। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। পরে লাশের পরিহিত কাপড় ও যাবতীয় আলামত দেখে মরিয়ম দাবি করেন, লাশটি তার মায়ের। তখন আমরা ডিএনএ পরীক্ষার কথা বললে মরিয়ম রাজি হন। পরে মরিয়ম ফুলপুর থানায় ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আব্দুল মোতালিব শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) আদালতে লাশের ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। ওই দিন রাতেই খুলনা পুলিশ মরিয়মের মাকে জীবিত উদ্ধার করেছে বলে খবর পাই। রবিবার সকালে এই খবর আদালতে পৌঁছানোর আগেই ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন মঞ্জুর হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে আমরা আর ডিএনএ পরীক্ষা করবো না। কারণ আবেদনকারীর মাকে পাওয়া গেছে।'

ওই লাশটি তাহলে কার, তার পরিচয় ও হত্যাকারীদের শনাক্তে পুলিশ কোনও পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা জানতে চাইলে ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, 'আমার থানা ও আশপাশের এলাকায় খোঁজ নিয়েছি আমরা। এখানে কেউ নিখোঁজ নেই৷ আমাদের ধারণা, অন্য কোনও স্থানে হত্যা করে ওই নারীকে বস্তাবন্দি করে এখানে ফেলে যাওয়া হয়েছে। পরিচয় নিশ্চিত হতে আমরা ইতোমধ্যে ওই নারীর ছবি দিয়ে পোস্টার লাগিয়েছি বিভিন্ন এলাকায়। পত্রপত্রিকায় তা প্রকাশ করেছি। বেতার বার্তায় ছবিসহ বিভিন্ন জেলায় খবর পাঠিয়েছি। এখনও প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। একইসঙ্গে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্তে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা।'

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পিবিআইয়ের খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘ফুলপুর থানা এলাকা থেকে বস্তাবন্দি এক নারীর লাশ উদ্ধার হয়। ওই থানার ওসি আমাদের জানিয়েছেন, বয়স ৩২ উল্লেখ করে লাশ দাফন করা হয়েছে। অথচ মরিয়মের মা রহিমার বয়স ৫২ বছর। এজন্য ডিএনএ পরীক্ষা করে লাশ শনাক্ত করতে বলেছি আমরা। কারণ মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছেন আদালত।'

ফুলপুর থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ১০ সেপ্টেম্বর উপজেলার বওলা গ্রামের দারোগা বাড়ির পেছনের একটি ঝোপের ভেতর থেকে লাশের গন্ধ পান গ্রামবাসী। পরে পুলিশ গিয়ে গলিত লাশ উদ্ধার করে। পরিচয় নিশ্চিত হতে না পারায় লাশটি আঞ্জুমান মফিদুলের মাধ্যমে ফুলপুর উপজেলা সদরের একটি কবরস্থানে দাফন করা হয়। লাশের পরনে ছিল গোলাপি রঙের সালোয়ার, লাল ও গোলাপি ছাপের কামিজ এবং গাঢ় লাল রঙের ওড়না। উদ্ধার ওই লাশের বয়স ৩২ বলে রেজিস্টার খাতায় উল্লেখ করেছে পুলিশ।

এর আগে গত ২৭ আগস্ট রাত ১০টার দিকে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার বাসার উঠানের নলকূপে পানি আনতে যান রহিমা খাতুন। কিন্তু এক ঘণ্টা পরও তিনি বাসায় না ফেরায় সন্তানরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। এরপর নলকূপের পাশে মায়ের জুতা, ওড়না ও পানির পাত্র পড়ে থাকলেও মাকে খুঁজে পাননি সন্তানরা।

এ ঘটনায় ওই রাতেই রহিমার ছেলে দৌলতপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরদিন তার মেয়ে আদুরী আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে থানায় অপহরণ মামলা করেন। পাশাপাশি বিষয়টি র‌্যাবকেও জানানো হয়। এ মামলায় ছয় জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে দীর্ঘদিন ধরে রহিমার সন্ধান না পাওয়ায় মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছেন আদালত।

আরও পড়ুন:

/এএম/এমএস/
সম্পর্কিত
পুলিশের মাঝে বঙ্গবন্ধুর চেতনা ছড়িয়ে দিতে টিডিএস সেমিনার
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এসবির ৫ বছরের ‘স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান’
মিসরে পুলিশ কমপ্লেক্সে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, আহত ২৫ (ভিডিও)
সর্বশেষ খবর
যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার পদচ্যুত
যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার পদচ্যুত
দেশের পথে প্রধানমন্ত্রী
দেশের পথে প্রধানমন্ত্রী
বিপিআরএ’র উদ্যোগে ‘ডিজিটাল পিআর’ বিষয়ক কর্মশালা
বিপিআরএ’র উদ্যোগে ‘ডিজিটাল পিআর’ বিষয়ক কর্মশালা
ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ড বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে এফবিসিসিআই’র মহড়া
ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ড বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে এফবিসিসিআই’র মহড়া
সর্বাধিক পঠিত
শত খ্যাপাটে যুবক প্রমাণ করে দিলো ‘খালে হবে’
শত খ্যাপাটে যুবক প্রমাণ করে দিলো ‘খালে হবে’
দুদকের মামলায় সাবেক বিমানবালার তিন বছরের কারাদণ্ড
দুদকের মামলায় সাবেক বিমানবালার তিন বছরের কারাদণ্ড
আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পেতে বাধা যেখানে
আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পেতে বাধা যেখানে
‘তখন আমার আবেগ কাজ করেছে বিবেক কাজ করেনি’
‘তখন আমার আবেগ কাজ করেছে বিবেক কাজ করেনি’
সার্ভার সমস্যার কারণে জন্ম সনদ পেতে ভোগান্তি
সার্ভার সমস্যার কারণে জন্ম সনদ পেতে ভোগান্তি