জামালপুর-শেরপুর সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) হোসনে আরাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলামের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ‘১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলা দিবস’ উপলক্ষে আলোচনা সভা চলাকালে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের উপস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আলোচনা সভায় বক্তব্য চলাকালে এমপি হোসনে আরা ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘দলীয় কর্মসূচিতে আমাকে দাওয়াত দেওয়া হয় না। আমাকে কেনো দাওয়াত দেওয়া হয় না? এ কথা বলতেই আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং এক পর্যায়ে গায়ে হাত তোলেন। এ সময় আনোয়ারকে নিবৃত্ত না করে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মহিলা এমপি হোসনে আরাকে ধমক দিয়ে চুপ থাকতে বলেন। পরে এমপি অপমান সইতে না পেয়ে আওয়ামী লীগ অফিস ত্যাগ করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের ১নং সদস্য ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হোসনে আরা তাৎক্ষণিক রাত ১০টায় তার নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন।
তিনি বলেন, ‘১৭ আগস্ট সন্ধ্যায় উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সারা দেশের ৬৩ জেলায় সিরিজ বোমা হামলা ঘটনার প্রতিবাদে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আমি ওই সভায় উপস্থিত হয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের আসনটি খালি দেখতে পাই এবং তার সম্মানে আমি দাঁড়িয়ে থাকি। পরে তিনি সভাস্থলে আসলে আমি তাকে বসতে দিয়ে আমার আসনে বসি এবং সবিনয়ে জানতে চাই, যেকোনও সভা-সমাবেশের বিষয়ে আমাকে কেন জানানো হয় না।
‘এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক বহিষ্কৃত নেতা আনোয়ারুল ইসলাম আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে আমার হাতে থাপ্পড় মারেন।’
এমপি হোসনে আরা অভিযোগ করে বলেন, ‘ইচ্ছা থাকলে প্রতিমন্ত্রী মহোদয় বিষয়টি তাৎক্ষণিক সুরাহা করতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেটি করেননি। বরং আমাকেই শাসিয়েছেন।’
এ বিষয়ে উপজেলা যুবলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম (ভিপি বাবু) বলেন, ‘দলের উপজেলা সভাপতি ও প্রতিমন্ত্রীর সামনে একজন নারী এমপির ওপর হামলা, এটি অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ঘটনা। প্রতিমন্ত্রী মহোদয় ইচ্ছা করলে বিষয়টি ওই সময়ই সমাধান করতে পারতেন।’
দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভায় উপস্থিত উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে নারী এমপির কোনও কথা কাটাকাটি হয়নি। বরং এমপি মহোদয়ই তার কাছে জবাব চেয়েছেন, কেন তাকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। উত্তরে শ্রম বিষয়ক সম্পাদক বলেছেন, “এ বিষয়ে আপনি আমাকে বলেন কেন। আমি তো আর দফতর সম্পাদক নই।” এটা কি তার অপরাধ?’
সভায় উপস্থিত উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ বলেন, ‘এটি শোকের মাস আগস্ট। এ মাসের সব কর্মসূচি দলীয় ফেসবুক গ্রুপ এবং বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় সব নেতাকর্মীকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। নারী এমপি মহোদয় যে অভিযোগ করেছেন সে বিষয়ে শ্রম বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলামের কোনও খারাপ ভূমিকা ছিল না।’
অভিযুক্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘মাননীয় এমপি হোসনে আরা মহোদয়কে কোনও ধরনের গালিগালাজ বা গায়ে হাত তোলার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
এ ব্যাপারে ইসলামপুরে জেলা পরিষদ ডাকবাংলায় অবস্থানরত ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘মাননীয় নারী এমপি হোসনে আরার অভিযোগটি সত্য নয়। কারণ আমি তাকে আমার পাশের চেয়ারে বসিয়ে সভার কার্যক্রম সমাপ্ত করেছি। এ ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম মাননীয় এমপি হোসেনে আরার সঙ্গে কোনও রকমের খারাপ আচরণ করেছেন বলে আমি দেখিনি।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজ রয়েছে ভিডিও ফুটে দেখলেই বিষয়টি খোলসা হবে। দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য মাননীয় এমপি হোসনে আরা সভা থেকে বের হয়ে বিভিন্নভাবে কুৎসা রটাচ্ছেন। এতে আওয়ামী লীগ ও তার নিজের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। যা কাম্য নয়।’
