X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত বয়স্ক ও শিশুরা

তৈয়ব আলী সরকার, নীলফামারী
১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ২২:০৪আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ২২:০৪

দেশের উত্তরে হিমালয়ের কাছাকাছি অবস্থিত জেলা নীলফামারীতে ঘন কুয়াশা, কনকনে ঠান্ডার কারণে শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বহু মানুষ। হাসপাতালগুলোতে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া হাঁপানি, ব্রংকাইটিস ও অ্যাজমা রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। শীতজনিত এসব রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বয়স্ক ও শিশুরা।

নীলফামারী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা যায়, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ২১ জন, শিশু ওয়ার্ডে ৩৯ এবং নবজাতক বিভাগে ১৫ জনসহ তিন বিভাগে মোট ৭৫ শিশু চিকিৎসাধীন রয়েছে। শয্যা আর ওষুধ সংকটের মধ্যে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নার্স ও চিকিৎসকরা। এ ছাড়াও বয়স্ক রোগী ৩৭ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে। বহির্বিভাগে শীতজনিত রোগসহ অন্যান্য রোগে ৫৬০ জন চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন।

সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হাকিম জানান, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৫ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে, বাতাসের আর্দ্রতা বিরাজ করছে ৯৫ শতাংশ এবং বাতাসের গতিবেগ নেই বললেই চলে। তাপমাত্রা ওঠানামা ও বাতাসের কারণে ঠান্ডার পরিমান বেশি। আরও কয়েকদিন এই অবস্থা চলতে পারে। বৃহস্পতিবার সামান্য বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

জেলার ডোমার, ডিমলা ও সদর উপজেলায় শীতের দাপট বেশি। ওই এলাকাগুলো হিমালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় সন্ধ্যা নামতে না নামতেই কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় চারপাশ। মানুষ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

প্রচণ্ড এই শীতে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি সমস্যায় পড়ছেন। বিশেষ করে, শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগ নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, সর্দি, কাশি, বমি যেন লেগেই আছে। বৃদ্ধদের শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ব্রংকাইটিস, বাত, ব্যথাসহ নানা রোগ দেখা দিয়েছে।

সদরের কুন্দুপুকুর ইউনিয়নের পূর্ব গুড়গুড়ী গ্রামের বাসিন্দা ও জেনারেল হাসপাতালের ভর্তি শিশু রাহার মা ছাবিনা বেগম বলেন, ‘সাবধানে রেখেও সকাল থেকে কয়েকবার পাতলা পায়খানা হয় মেয়েটির। পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় হাসপাতালে আনতে বাধ্য হলাম। এখানে এসে দেখি, শুধু আমার মেয়েই না, অনেক বাচ্চাই হাসপাতালের বিছানায় ভর্তি আছে।’

পৌর শহরের কুকাপাড়া ধনিপাড়ার শিশু হাসিবের (৫০ দিন) মা মজিদা বেগম জানান, পাতলা পায়খানার কারণে শনিবার বিকালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি করি। অনেক ওষুধ খাওয়ালাম, একটুও কমেনি। ওষুধ ও স্যালাইন বাইরে থেকে কিনে এনে দিতে হচ্ছে।’

ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স রোজিনা আকতার ওই রোগীর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘হাসপাতালে কলেরার ৫০০ থেকে ১০০০ মি. লি. স্যালাইন আছে। কিন্তু একজন শিশু বা নবজাতকের ২০০ বা ৩০০ মি. লি. স্যালাইন হলেই চলে। কিন্তু এতে ৭০০ থেকে ৮০০ মি. লি. স্যালাইন নষ্ট বা অপচয় হয়। এ কারণে শিশুদের কিছু স্যালাইন কিনতে হয়।

চাপড়া ইউনিয়নের যাদুরহাট গ্রামের শিশু রোগী সুবাইত জান্নাতের মা সুরাইয়া জান্নাত বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে মেয়ের হালকা জ্বর ও সর্দি লেগেই আছে। হাসপাতালের ডাক্তার জানালেন, চার দিনের বেশি জ্বর, সর্দি-কাশি থাকায় নিউমোনিয়া হতে পারে। তাই হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।’

শিশু ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, মঙ্গলবার সকালের দিকে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল ৭৫ জন। এরপর সকাল ৭টা থেকে ১০টার মধ্যে (৩ ঘণ্টায়) আরও তিন শিশু ভর্তি হয়। এখানে সর্দি, কাশি ও নিউমোনিয়া নিয়ে ৭৮ জন শিশু ভর্তি রয়েছে।

ওই ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স মিরা রানী রায় বলেন, ‘ঘন কুয়াশা, ঠান্ডা বাতাস ও কনকনে শীতে শিশুরা বেশি রোগাক্রান্ত হচ্ছে। আমরা সাধ্যমতো রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তবে কোনও কোনও দিন শিশু রোগীদের এতই চাপ বাড়ে যে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয়।

নীলফামারী ২৫০ শয্যা হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. আব্দুর রহিম বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে গত দুই দিনে নবজাতক ও শিশুরোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই ঠান্ডায় শিশু ও বৃদ্ধদের গরম পানি ও গরম খাবার খাওয়াতে হবে। গরম কাপড় ব্যবহার করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শিশুদের রোগ নিরাময়ের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। অসুস্থ হলে হাসপাতালে দ্রুত ভর্তি করতে হবে। হাসপাতালে যথেষ্ট ওষুধপত্র রয়েছে।’

জেনারেল হাসপাতলের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘শীতে শিশুদের ঠান্ডা থেকে বিরত রাখতে হবে। গরম কাপড় ও গরম খাবার খাওয়াতে হবে। সামান্যতম সমস্যা দেখা দিলে স্থানীয় হাসপাতাল অথবা কমিউনিটি ক্লিনিকের পরামর্শ নিতে হবে। কোনোভাবেই অবহেলা না করে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।’

নীলফামারী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আবু আল হাজ্জাজ বলেন, ‘শিশু কিংবা বয়স্কদের যেকোনও ধরনের সমস্যা দেখা দিলে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। সব সময় গরম পানি, গরম খাবার, নিরাপদে থাকতে হবে।’ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, ধুলাবালি মিশ্রিত আবহাওয়া ও ধূমপান দূরে থাকার পরামর্শ দেন তিনি।

 

 

/এমএএ/
সম্পর্কিত
‘যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে সামাজিক কুসংস্কার’
গরমে বাড়ছে নানা রোগ, চাপে আছে হাসপাতালগুলো
গরম থেকে বাঁচতে ভ্রাম্যমাণ শরবতের দোকানে ভিড়
সর্বশেষ খবর
ফুটপাত দখলকারীদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
ফুটপাত দখলকারীদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
আগামী বছর হজের খরচ আরও কমবে: ধর্মমন্ত্রী
আগামী বছর হজের খরচ আরও কমবে: ধর্মমন্ত্রী
জয়পুরহাটে হত্যা মামলায় ১৯ জনের যাবজ্জীবন
জয়পুরহাটে হত্যা মামলায় ১৯ জনের যাবজ্জীবন
শৈশব কেন অনিরাপদ?
শৈশব কেন অনিরাপদ?
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ