X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রীমঙ্গলে চা নিলাম কেন্দ্র থেকে ব্যবসায়ীকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১:১৪আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১:১৪

মৌলভীবাজারে শ্রীমঙ্গলে দেশের দ্বিতীয় চা নিলাম কেন্দ্রে চা ব্যবসায়ী মো. শহীদ আহমদকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী বাদী হয়ে শ্রীমঙ্গল থানায় দুজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৮-১০ জনকে আসামি করে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

ব্যবসায়ী শহীদ আহমদ শ্রীমঙ্গলের সোনার বাংলা ব্রোকার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং শ্রীমঙ্গল চা নিলাম কেন্দ্রের ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। তার বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার গাগলাজোর গ্রামে। তিনি শ্রীমঙ্গল ৩নং পুল এলাকায় দুই যুগ ধরে বসবাস করছেন।

অভিযুক্ত দুই জন হলেন- শ্রীমঙ্গল শ্রীমঙ্গল বোকার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও উপজেলা কৃষকলীগের সদস্যসচিব মো. হেলাল আহমদ (৪০), শ্রীমঙ্গল ট্রাক ট্যাংক লরি পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান মিয়া (৪৭)।

শ্রীমঙ্গল থানায় দায়ের করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ব্যবসায়ী শহীদ আহমদ বুধবার সকাল ১১টায় ২২তম চা নিলাম পরিচালনা করার জন্য শ্রীমঙ্গল শহরের ভানুগাছ রোডের জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে যান। সে সময় হেলাল আহমদ ও শাহজাহান মিয়াসহ অজ্ঞাত ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে তার ওপর অতর্কিত হামলা করেন। শহীদকে কিল, ঘুষি ও চড়-থাপ্পড় মেরে একটি প্রাইভেট কারে উঠিয়ে শহরের মিশন রোডে তাদের ব্যক্তিগত অফিসে নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে তার কাছে ২৭ লাখ টাকা পাওনা দাবি করেন, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

সেখানে তিন ঘণ্টা আটক রাখার পর ওইদিন রাত ৮টার মধ্যে ২৭ লাখ টাকা প্রদান করার শর্তে ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে। সেই শর্ত ভঙ্গ করলে তাকে প্রাণে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয়। সেখান থেকে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ছাড়া পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে স্বজনরা তাকে দ্রুত মৌলভীবাজার লাইফ লাইন প্রাইভেট হাসপাতালের কার্ডিওলজি চিকিৎসকের কাছে নেন।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ওইদিন রাতে তাদের কথামতো উল্লিখিত টাকা প্রদান না করায় হেলাল আহমদ বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন করে টাকার জন্য হুমকি দিতে থাকেন। পরে তিনি অসহায় হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। এ ছাড়া টি ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন বরাবরে বিচারপ্রার্থী হয়ে অপর একটি আবেদন করেন। এমনকি অবস্থা বেগতিক দেখে মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদকে বিষয়টি ফোনে অবহিত করেন সোনার বাংলা ব্রোকার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান শহীদ আহমেদ।

শহীদ বলেন, ‘চা নিলামের সময় তাকে তুলে নেওয়ার জন্য বহিরাগত সন্ত্রাসীরা নিলাম সেখানে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে বসে ছিল। নিলাম ডাকা শেষ হওয়ার পরপরই জোর করে টেনেহিঁচড়ে আমাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় এবং প্রাণে হত্যার ভয়ভীতি দেখায়।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে শ্রীমঙ্গল ব্রোকার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হেলাল আহমদ বলেন, ‘আমি তার কাছে চা পাতার টাকা পাই। ২৭ লাখ ৩৩ হাজার সামথিং। এটার যথেষ্ট প্রমাণ আছে। চেক আছে, ডিও আছে, লেজার খাতা আছে। সাক্ষীও আছে। ওইদিন অকশনের পরে তাকে আমি আমার অফিসে চা খাওয়ার জন্য নিয়ে আসি। এরপর সে রাত ৮টায় আমার পাওনা টাকার বিষয়ে চা ব্যবসায়ীদের নিয়ে বসবে বলে চলে যায়। এটি কোনও জিম্মি করার ঘটনা না। সেখানে চা ব্যবসায়ী সমিতির সমিতির সভাপতি চেরাগ ভাই ও আকরাম খান, ট্রাক সমিতির শাহজাহান ভাই, রূপসী বাংলা ব্রোকার্সের পরিচালক মনীর ভাই ছিলেন।’

এ বিষয়ে রূপসী বাংলা টি ব্রোকার্সের চেয়ারম্যান ও ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মো. মনীর বলেন, ‘নিলামে প্রথম ডাক আমার ছিল। নিলাম শেষ করে আমার অফিসে চলে যাই। ঘটনার সময় আমি ছিলাম না। পরে চা ব্যবসায়ীরা ফোন করে আমাকে জানান, শহীদ ভাইকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। তারপর ওইদিন বিকালে হেলাল আমাকে ফোন করে বলে, “অফিসে আসতে হবে। শহীদের সঙ্গে গ্যাঞ্জাম হইছে। বিষয়টি বসে শেষ করতে হবে, আপনি তো ব্রোকার্সের সভাপতি।” আমিও গেলাম হেলালের অফিসে। সেখানে ব্যবসায়ী সমিতির অনেকেজন ছিল। যাওয়ার পর হেলাল বললো, “শহীদকে আমরা  রাত ৮টা সময় দিয়েছিলাম।” আমি বললাম, “দিনে যতটুকু শুনেছি, শহীদ সাহেবকে উঠিয়ে এনেছেন। এরপর শহীদ সাহেব কৌশল করে সেখান থেকে বের গেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিলামে যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে, সেটি নিন্দনীয় বিষয়। চায়ের ব্যবসা ভদ্র লোকের ব্যবসা। এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করা হোক। ‘ 

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল চা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. চেরাগ আলী বলেন, ‘বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।’ মোবাইল ফোনে সেসব বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘একবার আমার দোকানে আসলে কথা বলবো।’

শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চা ব্যবসায়ী ব্যবসায়ী সমিতি উপদেষ্টা  আকরাম খান বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি সেখান থেকে শহীদকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছি। বিষয়টি সমাধানের জন্য ওইদিন রাতে সামাজিকভাবে সালিশ বৈঠকে বসার জন্য বলেছিলাম।’

শ্রীমঙ্গল থানার ওসি বিনয় ভূষণ রায় বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি এবং লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

/এমএএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মার্কিন শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়ায়
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ অব্যাহতমার্কিন শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়ায়
বালুবাহী বলগেট থেকে নদীতে পড়ে শ্রমিক নিখোঁজ
বালুবাহী বলগেট থেকে নদীতে পড়ে শ্রমিক নিখোঁজ
পিনাকীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পিনাকীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটে বান্দরবানে দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ
৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটে বান্দরবানে দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ
সর্বাধিক পঠিত
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে