এক সপ্তাহেও মামলা হয়নি চট্টগ্রামের রাউজানে ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম হত্যার ঘটনায়। প্রকাশ্যে দিনদুপুরে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলেও জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি কী কারণে এ ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়েছে তার কোনও ক্লু উদ্ঘাটনও করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী ও স্বজনদের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
নিহত ব্যবসায়ীর ভাই দিদারুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার ভাইকে রাতের আঁধারে নয়, প্রকাশ্যে দিনদুপুরে খুন করা হয়েছে। ১৫ থেকে ২০ জনের সশস্ত্র সন্ত্রাসী এ ঘটনা ঘটিয়ে নির্বিঘ্নে চলে গেছে। অথচ পুলিশ গত এক সপ্তাহেও এ ঘটনায় জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি। অথচ পুলিশ খুনিদের ছবি সিসিটিভির ফুটেজে পেয়েছে। তারপরও পুলিশ প্রশাসনের কোনও ভূমিকাই আমরা লক্ষ করছি না।’
মামলা করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মামলা করে কী হবে? গত ৫ আগস্টের পর রাউজানের নোয়াপাড়া এলাকায় অন্তত ২৫ থেকে ৩০ বার গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে অনেকেই আহত হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ভয় দেখানো, গুলি ছোড়ার দৃশ্য ভাইরাল হয়েছে। কেউ কেউ মামলা করেছে। বেশির ভাগ ঘটনার ভয়ে-আতঙ্কে মামলা করেনি। মামলা করেও কী হয়েছে, পুলিশ একজন আসামিকেও গ্রেফতার করেনি। যদি এসব মামলার আসামিদের গ্রেফতার করা হতো তাহলে আমার ভাই জাহাঙ্গীর খুন হতো না।’
তিনি বলেন, ‘আমি জানি, মামলা করলেও আমার ভাই হত্যার বিচার পাবো না। এ কারণে বিচার চাইছি না। আমাদের জীবনের নিরাপত্তা কে দেবে? খুনি কারা তা পুলিশ জানে। তারপরও আমরা পুলিশকে কিছু বলছি না। আমরা ভাই হত্যার বিচার আল্লাহর কাছে দিয়েছি। তিনিই এর বিচার করবেন।’
নিহতের বড় ছেলে মাকসুদ আলম বলেন, ‘আমার বাবাকে প্রকাশ্যে দিনদুপুরে সন্ত্রাসীরা হত্যা করে পালিয়ে গেছে। অথচ পুলিশ একজনকেও ধরতে পারেনি। পুলিশ হত্যাকারীদের গ্রেফতারে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আমি বাবা হত্যার বিচার চাই। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করে শাস্তি দাবি করছি।’
এদিকে, নিহত ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার করে শাস্তির দাবিতে রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া পথেরহাটে মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ মিছিল করেছেন গ্রামবাসী। এসব কর্মসূচিতে ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় রাজনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
নোয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় বিএনপি নেতা হাজী জসীম উদ্দিন বলেন, ‘শুনেছি সন্ত্রাসীরা ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমের কাছে চাঁদা দাবি করেছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী ফজল হক বাহিনীর প্রধান ফজল হক সৌদি আরবে বসে এ চাঁদা দাবি করে। চাহিদার চাঁদা না পেয়ে তার অনুসারীদের দিয়ে প্রকাশ্যে গুলি করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। জড়িতদের ছবি সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে। পুলিশ হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে পারলেও রহস্যজনক কারণে গ্রেফতার করছে না। শুনেছি হত্যাকারীরা গরীবুল্লাহ পাড়া, নোয়াপাড়া ও বেতাগীসহ আশপাশে অবস্থান করছে।’
এ বিষয়ে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম সফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘নিহতের পরিবারের সদস্যরা মামলা করতে থানায় আসবেন বলেও এখনও আসেনি। মামলা না দিলে কীভাবে আসামি গ্রেফতার করবো। নিহতের অনেক স্বজন আছে, যদি কেউ না থাকতো তাহলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করতো।’
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল ও ডিবি) মো. রাসেল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নিহতের পরিবারে আমরা বেশ কয়েকবার খবর পাঠিয়েছি যাতে তারা হত্যার বিষয়ে থানায় এজাহার দায়ের করেন। এখন পর্যন্ত স্বজনদের কেউ এজাহার নিয়ে থানায় আসেননি। এরপরও পুলিশ বসে নেই। হত্যায় জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
উল্লেখ্য, শুক্রবার জুমার নামাজ পড়তে শহরের চান্দগাঁওয়ের বাসা থেকে গ্রামের বাড়ি নোয়াপাড়ায় যান জাহাঙ্গীর আলম। ওইদিনই ১৭ দিন ব্যবসার কাজে মিয়ানমার ও মালয়েশিয়ায় অবস্থান করে দেশে ফিরেছিলেন। মোটরসাইকেলে করে মসজিদে যাওয়ার পথে বাড়ির অদূরে আসাদ আলী মাতব্বর পাড়া জামে মসজিদের কিছু আগে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তার পথ আটকে এলোপাতাড়ি গুলি করে। পরে মসজিদের মুসল্লিরা বের হলে তাদের লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীরা ফাঁকা গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। পরে এলাকার লোকজন তাদের উদ্ধার করে এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলমকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় আব্বাস উদ্দিন নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হন। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
জাহাঙ্গীর আলম নগরীর আসাদগঞ্জে পাইকারি শুঁটকি ব্যবসায়ী। এ ছাড়াও তার নোয়াপাড়া পথেরহাট এলাকায় একটি কমিউনিটি সেন্টার রয়েছে।
