সাত বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধের বিরুদ্ধে। ধর্ষণের এই অভিযোগ মীমাংসা করতে শনিবার রাত ১০টায় শিশুটির বাড়িতে সালিশ বৈঠকের আয়োজন করে গ্রামের কয়েকজন মাতব্বর। বৈঠকে উভয়পক্ষের সদস্যদের সিদ্ধান্তে অভিযুক্ত বৃদ্ধকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। বৃদ্ধের পক্ষে দুই হাজার টাকা সালিশের সভাপতির কাছে জমা দিয়ে রায় কার্যকরও করা হয়েছিল। কিন্তু রাত ২টায় স্থানীয় সেনাক্যাম্প ও পুলিশের একটি টিম বৈঠকস্থলে পৌঁছালে সালিশকারীরা পালিয়ে যায়। তখন সেনা ও পুলিশ সদস্যরা শিশুটির মুখে ধর্ষণের বর্ণনা শুনে বৃদ্ধকে গ্রেফতার করেন। কুমিল্লার লালমাই উপজেলায় এই ঘটনা ঘটে।
ধর্ষণের অভিযোগে আটক বৃদ্ধ ওই এলাকার রেহান উদ্দিনের ছেলে আবাদ উল্যাহ। রবিবার (৯ মার্চ) দুপুরে শিশুটির মা বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে লালমাই থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, নির্যাতনের শিকার শিশুটি স্থানীয় একটি মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। ২৭ ফেব্রুয়ারি মাদ্রাসা থেকে বাড়ি ফেরার পথে শিশুটিকে কুকুর দিয়ে কামড়ানোর ভয় দেখিয়ে একটি পরিত্যক্ত রান্নাঘরে ধর্ষণ করে আবাদ উল্যাহ। দশ দিনের ব্যবধানে একইভাবে শিশুটিকে সে তিনবার ধর্ষণ করে। গত ৭ মার্চ দুপুরে বাড়ির অন্য শিশুদের মাধ্যমে জানতে পেরে মা জিজ্ঞাসা করলে শিশুটি ধর্ষণের বর্ণনা দেয়।
শিশুটির চাচা বলেন, নির্যাতনের শিকার শিশুটির ধর্ষণের অভিযোগের বর্ণনা শুনে গ্রামের মাতবররা বৃদ্ধ আবাদ উল্যাহকে সালিশ বৈঠকে নিয়ে আসতে বললে শনিবার রাত ১০টায় গ্রামের কয়েকজন ছেলে তাকে একটি চা দোকান থেকে ডেকে নিয়ে আসে। বৈঠকে দুই পক্ষের লোকজন একমত হয়ে বৃদ্ধকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে। অভিযুক্তের পক্ষে দুই হাজার টাকা জমা করে রায় কার্যকরও করা হয়েছিল। খবর পেয়ে রাত ২টায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা আসলে সালিশ বৈঠক স্থগিত হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে পুলিশও আসে। অভিযোগের বর্ণনা শুনে তারা বৃদ্ধকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
সালিশ বৈঠকে অংশগ্রহণকারী ও ওই এলাকার বাসিন্দা ফজলুর রহমান মিন্টু বলেন, ‘গ্রামের গণ্যমান্যদের নিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করতে শনিবার রাতে বৈঠক হয়েছে। শিশুটির ওষুধ খরচ বাবদ ৫০ হাজার টাকা দিতে রায় দিয়েছিল বিচারকরা। বৃদ্ধের পক্ষে সর্দারের কাছে দুই হাজার টাকা জমা দিয়ে রায়ও কার্যকর করা হয়েছিল। কিন্তু শনিবার দিবাগত রাত ২টায় সেনাবাহিনীর টিম গিয়ে বৃদ্ধকে আটক করে নিয়ে গেলে সালিশ বৈঠক সমাপ্ত হয়ে যায়।’
লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘৭ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় বৃদ্ধের বিরুদ্ধে শিশুটির মা ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন। ভিকটিমকে মেডিক্যাল চেকআপের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
ওসি আরও বলেন, ‘গ্রামের মানুষ তাই এসব বিষয় গোপন রাখতে চায়। তারা সালিশের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে বিচার শেষ করে দিচ্ছিল বলে শুনেছি। কিন্তু তার আগেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়।’