X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

টিকা দিতে ৭ লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগে তদন্ত কমিটি

বরিশাল প্রতিনিধি
২০ জানুয়ারি ২০২২, ১৮:২৭আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২২, ১৮:৪৬

বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় করোনাভাইরাসের টিকা দিতে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সাত লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, করোনা প্রতিরোধে উপজেলার ১৫ হাজার ২০০ শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় গত ১৯ ডিসেম্বর টিকাদান শুরু হয়। উপজেলা সদরের কালীখোলা রোডে ‘বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থার’ কার্যালয়ের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৪ হাজার ৬৯৪ জন শিক্ষার্থীকে প্রথম ডোজের টিকা দেয়।

অভিযোগ উঠেছে, শুরুতেই ওই এনজিও কার্যালয়ে টিকা নিতে আসা শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকের কাছ থেকে বরিশালের সদর থেকে টিকা আনার জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া বাবদ ৫০ টাকা করে আদায় করেন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। প্রথমে ২-৩ দিন এভাবে টাকা আদায়ের পর অভিভাবকদের সমালোচনার মুখে পড়লে টাকা আদায়ের কৌশল পাল্টে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সরাসরি টাকা নেওয়া বন্ধ করে দেয়। এরপর সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে টিকা আনার খরচ বাবদ টাকা আদায় শুরু করেন শিক্ষা কর্মকর্তা।

নাম না প্রকাশের শর্তে বিদ্যালয়গুলোর কয়েকজন প্রধান শিক্ষক জানান, তারা টিকা আনার খরচ বাবদ নজরুল ইসলামকে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন না করলেও স্কুল ফান্ড থেকে তারা ওই টাকা দিয়েছেন। ৫০ টাকা করে আদায়ের হিসাবে ১৪ হাজার ৬৯৪ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে সাত লাখ ৩৪ হাজার ৭০০ টাকা আদায়ের অভিযোগ ওঠে।

অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে, বরিশাল সদর থেকে আগৈলঝাড়া পর্যন্ত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া দুই হাজার ২০০ টাকা। শিক্ষার্থীদের টিকা আনার জন্য ১৩ দিনে গাড়ি ভাড়া বাবদ খরচ দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৬০০ টাকা। আরও দুই দিন টিকা আনার ভাড়া বাবদ চালককে দেওয়া হয়েছে তিন হাজার টাকা। টিকা সরবরাহের জন্য সর্বসাকুল্যে খরচ হয়েছে ৩৪ হাজার ৬০০ টাকা। সবার প্রশ্ন, বাকি সাত লাখ টাকা গেলো কোথায়?

প্রশাসনের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, টিকা রাখার সঠিক তাপমাত্রার জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের প্রয়োজন হয়। উপজেলার প্রশাসনের আওতায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ না থাকায় একটি এয়ারকন্ডিশন কিনতে ওই শিক্ষা কর্মকর্তাকে ৫০ টাকার পরিবর্তে ২০ টাকা করে নিতে বলা হয়েছিল। সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে কেন বাড়তি টাকা নেওয়া হয়েছে বা ওই টাকা কোথায় কী কাজে ব্যয় হয়েছে তা কেউ জানেন না।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ডা. বখতিয়ার আল মামুন বলেন, ‘সরকার টিকা সরবরাহ করেছে বিনামূল্যে। হাসপাতালের প্রশিক্ষিত জনবল দিয়ে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হয়েছে। সেখানে টাকার বিষয় থাকার কথা নয়। যদি কেউ টাকা তুলে থাকে, সে দায়িত্ব তার নিজের।’

বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক বদিউল আলম বাবুল জানান, শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার জন্য তার কাছে ৩-৪ দিনের জন্য ভেন্যু চাইলে শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে তার অফিসের নিজের কক্ষ ছেড়ে দেন। পরে এসিসহ পুরো অফিসটি দীর্ঘদিন ব্যবহার করা হয়। এই সময়ের মধ্যে প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্মাণ করা বিশেষ সিঁড়ি, ভবনের রঙ, কারেন্ট বিল বাবদ তার অর্ধলক্ষাধিক টাকা ক্ষতি হয়। তবে এ জন্য তাকে কোনও টাকা দেয়াও হয়নি বা তিনি নেননি। শিক্ষার্থীদের টিকার জন্য টাকা আদায়ের কথা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, টাকা তোলার এখতিয়ার তার (নজরুল ইসলাম) নেই। আর সে যদি এটা করে থাকে, তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিযুক্ত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনও টাকা উত্তোলন করা হয়নি। যে টাকা খরচ হয়েছে তা শিক্ষকরা দিয়েছেন।’

এ বিষয়ে আগৈলঝাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাশেম বলেন, ‘এ ঘটনায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহের নিগার তনুকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’

অপর সদস্যরা হলেন, থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. মাজহারুল ইসলাম, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সুশান্ত বালা ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান ইউএনও।

/এফআর/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে বাইডেনের স্বাক্ষর
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে বাইডেনের স্বাক্ষর
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা