বৈরী আবহাওয়ায় পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটা। বেচাকেনা নেই পর্যটনসংশ্লিষ্ট দোকানগুলোতে। মুষলধারে বৃষ্টি, ঝোড়ো হাওয়ার প্রভাব পড়েছে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটায়। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে গত তিন দিন ধরে পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় থেমে থেমে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন সমুদ্রসৈকতে আসা ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরা।
বৃষ্টির কারণে অনেক পর্যটক গন্তব্যে ফিরে গেছেন। পর্যটকরা চলে যাওয়ায় অনেকটা খালি পড়ে আছে হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলো। বেচাকেনা নেই খাবার হোটেলসহ পর্যটনসংশ্লিষ্ট অন্যান্য দোকানগুলোতে। তারা বসে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন। অনেকে দোকান বন্ধ রেখে বাড়িতে চলে গেছেন। অতি বৃষ্টির কারণে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষসহ সবজি চাষিরাও পড়েছেন চরম বিপাকে।
খাবার হোটেল আল মদিনার স্বত্বাধিকারী আলমগীর হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে কুয়াকাটায় কোনো পর্যটক নেই। সকাল থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। ১২ জন কর্মচারীর বেতন আছে ১০ হাজার টাকা টাকা। খুবই খারাপ অবস্থায় দিন যাচ্ছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ৯০ ভাগ রুমই খালি। কাঁকড়া ও ফিশ ফ্রাই, শুঁটকির দোকান, পোশাকের দোকান, ছবি প্রিন্ট ও এডিটিং স্টুডিও, বার্মিজ আচার ও চকলেটের দোকান, ঝিনুকের দোকানগুলোতে ভিড় নেই পর্যটকদের। বেচাকেনা একেবারে শূন্যের কোটায় চলে এসেছে। তাই অনেকেই দোকান বন্ধ করে বাড়ি চলে যাচ্ছেন।
আচার ব্যবসায়ী মহিবুল্লাহ বলেন, ‘আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে আমাদের দোকানগুলোতে কোনও বেচাকেনা নেই। বসে বসে সময় পার করছি। বর্তমানে পর্যটক না থাকার কারণে বেচাকেনা একেবারেই খারাপ যাচ্ছে।’
কুয়াকাটায় ঘুরতে আসা পর্যটক তুহিন বলেন, ‘কুয়াকাটায় বেড়াতে এসে বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়ে আনন্দটাই মাটি হয়ে গেছে। গত দুদিন হোটেল থেকে বের হতে পারছি না। সি-বিচে নেই কোনও পর্যটক। খাওয়ার হোটেলগুলো প্রায় বন্ধ। কয়েকটা হোটেল খোলা রয়েছে। তাতে তাজা খাবার নেই। সৈকতে নেমে গোসল করেও আনন্দ পাইনি। বলতে গেলে হাতেগোনা কয়েকজন গোসলে নেমেছে। এককথায় বলা যায়—পর্যটকশূন্য কুয়াকাটা। নেই কোনও মানুষের কোলাহল। বৃষ্টিতে ভিজে সাগরে নেমেছি। একা নামতে ভয় হচ্ছে।’
পরিবহন ব্যবসায়ী মিরাজ বলেন, ‘গত ৩/৪ দিন ধরে গাড়ি প্রায়ই ফাঁকা যাচ্ছে। অনেক ট্রিপ বাদ হচ্ছে যাত্রীর অভাবে। কাউন্টারে বসে বসে সময় কাটাচ্ছি।’
হোটেল-মোটেল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইব্রাহিম ওয়াহিদ বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রায় পর্যটকশূন্য রয়েছে কুয়াকাটা। ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যটক থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে এলাকা ছাড়ছেন তারাও। মঙ্গলবার থেকে হোটেলের বুকিং নেই। বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে পর্যটনকেন্দ্রটি এখন পর্যটকশূন্য। তবে সামনে ঈদুল আজহা উপলক্ষে টানা ছুটি রয়েছে। সেই ছুটি উপভোগ করার জন্য পর্যটকরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন হয়তো সে কারণেই এখন পর্যটক কম দেখা যাচ্ছে।’
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ মোতালেব শরীফ বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ায় একেবারেই পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে কুয়াকাটা। হোটেলগুলোতে ৫ শতাংশ পর্যটক রয়েছে। পর্যটন ব্যবসায়ীরা লোকসানে রয়েছেন।’
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের সহকারী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ার কারণে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে কুয়াকাটা। সামান্য কিছু পর্যটক রয়েছে তাদের সেবায় আমাদের টিম সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে। সমুদ্রে তিন নম্বর সতর্কসংকেত জারি রয়েছে। এর প্রভাবে সমুদ্র কিছুটা উত্তাল রয়েছে। আমরা পর্যটকদের মাইকিং করে সতর্ক করছি তারা যাতে গভীর সমুদ্রে বিচরণ না করেন।’
এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা আবহাওয়া অফিসের (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা মাহবুবা সুখী বলেন, ‘উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। বৃষ্টিপাত আগামীকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।’