X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

‘আর কতদিন বন-জঙ্গলে থাকবো?’

জিয়াউল হক, রাঙামাটি
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৩:১৪আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৫:৩৭

লংগদুর ক্ষতিগ্রস্ত ঘর-বাড়ি ‘আমাদের বাড়ি-ঘরে আগুন দেওয়ার পর সরকার তা বানিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু সরকার প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি। গত তিন মাস আমরা বন-জঙ্গলে, আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে দিন কাটিয়েছি। এভাবে কয়দিন থাকা যায়? আমরা আশাহত।’ এভাবেই নিজেদের কষ্টের কথা বলছিলেন লংগদুর তিনটিলা গ্রামের সহকারী শিক্ষক চন্দ্র সুরথ চাকমা।

চন্দ্র সুরথ চাকমা

তিনি বলেন, ‘আমি ১৯৯২ সালে শিক্ষকতা শুরু করি। সেই থেকে অল্প অল্প করে সংসারে অনেক কিছুই তৈরি করেছি। আমার ঘরে অনেক কিছুই ছিল। আগুনে নিমিষেই সব শেষ হয়ে গেলো। চিন্তাও করিনি এমন হবে। জীবন তো থেমে থাকবে না। জীবনে এগিয়ে নিতে পোড়া বাড়ির পাশে ছোট্ট ঘর বানিয়ে কোনোমতে আছি। এত ছোট ঘরে পরিবার নিয়ে থাকা খুবই কষ্টকর। সামনে আরও কঠিন সময় আসছে। ছেলে-মেয়ের পরীক্ষা। তাদের পড়ালেখার খরচ চালানোই কষ্টকর হচ্ছে এখন। বর্ষা মৌসুমে যে কষ্ট হয়েছে তা কাউকে বললে বিশ্বাসও করবে না। সামনে আসছে শীতকাল। তার আগে যদি ঘর নির্মাণ করে না দেয় তাহলে কষ্টের আর সীমা থাকবে না।’

চন্দ্র সুরথ চাকমা

প্রসঙ্গত, ১ জুন লংগদু উপজেলার সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মোটরসাইকেল চালক নুরুল ইসলাম নয়নের লাশ দীঘিনালার চারমাইল এলাকায় পাওয়া যায়। স্থানীয় বাঙালিরা এই ঘটনার জন্য পাহাড়ের সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে দায়ী করেছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে ২ জুন সকালে নয়নের লাশ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল উপজেলা সদরে আসার পথে পাহাড়িদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। লংগদু উপজেলা সদরসহ তিনটিলা, বাইট্টাপাড়া, মানিকজোড় ছড়া গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক পাহাড়িদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরপর থেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন এ এলাকার লোকজন।

তিনটিলা গ্রাম

বাইট্টাপাড়া গ্রামের অরেক ক্ষতিগ্রস্ত বুদ্ধজয় চাকমা বলেন, ‘পাশের গ্রামে এখনও আছি। পরের ঘরে থাকা কী যে কষ্টের তা বলে বোঝানো যাবে না। কিন্তু আমরা নিরুপায় হয়ে আছি। আর নতুন করে ঘর বানানোর মতো টাকাও হাতে নাই। সরকারের দিকে তাকিয়ে আছি। সরকার ঘর করে দিলে ঘর হবে, না দিলে রাস্তায় রাস্তায় থাকতে হবে। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া এসব মানুষের দাঁড়ানো সম্ভব না। আগে আমাদের সবার মধ্যে যে সম্প্রীতি ছিল তা একদিনে নষ্ট হয়ে গেলো।’ 

তিনটিলা গ্রাম

বুদ্ধজয় চাকমা আরও বলেন, ‘বাড়িটি দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারি নাই। ১৯৮৯ সালে একবার এমন ঘটনা ঘটেছিল। তখনও আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম। কিন্তু এবারের মতো ক্ষতি তখন হয়নি। তিল তিল করে সংসারের সব কিছু জোগাড় করেছিলাম। কিন্তু আগুনে সব শেষ করে দিল। সেই সঙ্গে বিশ্বাসও নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের এখানে অনেক রাত পর্যন্ত বাঙালিরা থাকতো। আমরাও বাইট্টাপাড়া বাজারে অনেক রাত পর্যন্ত থাকতাম। এখন আর কেউই সেভাবে আসে না। আমরাও যাই না।’

বুদ্ধজয় চাকমা

তিনি আরও জানান, ‘আমার একটা ঘর আর একটা দোকান পুড়ে গেছে। বাড়ি এখনও আগের মতো আছে। দোকানটা কোনোমতে করেছি। আর কোনোমতে বউ-বাচ্চা নিয়ে থাকি। এমন করে আর কতদিন থাকতে হবে তাও জানি না। সরকার ঘর তুলে দিলো কিন্তু আবার এমন ঘটনা ঘটলে, তখন ওই পাকা ঘর ছেড়ে পালাতে হবে। ঘর করার আগে নিরাপত্তা জরুরি। আগে সেই বিষয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। না হয় পাকা ঘর দিয়ে মানুষের মধ্যে বিশ্বাস ফেরানো যাবে না।’

বাইট্টাপাড়া গ্রাম

বাইট্টাপাড়া গ্রামের আরেক ক্ষতিগ্রস্ত সুভাষ কান্তি বলেন, ‘ঘটনার সাতদিন পর ছেলেকে ঘরটি দেখার জন্য পাঠিয়েছিলাম। আমি দেখতে আসি প্রায় ১ মাস পর।’

আরও পড়ুন- পোড়া বসতভিটায় ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা লংগদুর অগ্নিদুর্গতদের 

 

/জেবি/এসটি/এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
থেমে থাকা ট্রাকে পিকআপের ধাক্কা, ২ জন নিহত
থেমে থাকা ট্রাকে পিকআপের ধাক্কা, ২ জন নিহত
প্রতিদিন মা হারাচ্ছে ৩৭ ফিলিস্তিনি শিশু
প্রতিদিন মা হারাচ্ছে ৩৭ ফিলিস্তিনি শিশু
সেন্ট জোসেফ স্কুলে তিন দিনব্যাপী লিট ফেস্টিভ্যাল শুরু
সেন্ট জোসেফ স্কুলে তিন দিনব্যাপী লিট ফেস্টিভ্যাল শুরু
জাকিরের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে প্রাইম ব্যাংকের বড় জয়
জাকিরের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে প্রাইম ব্যাংকের বড় জয়
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ