বান্দরবানে এবার শিমের ফলন ভালো হয়েছে। পাহাড়ের ঢাল আর জমিতে চাষ হয়েছে শিমের। কিন্তু কৃষি পণ্যের দাম বৃদ্ধি আর মধ্যসত্বভোগীদের কারণে ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, জেলা সদরের রেইচা,ক্যামলং,লাঙ্গিপাড়া, মাঝের পাড়া,সুয়ালকসহ বিভিন্ন পাহাড়ে এখন কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন জমি থেকে শিম তুলতে। এবছর বান্দরবানে দেশি ও সীতাকুন্ডের শিম বেশি আবাদ হয়েছে।
কৃষকরা জানান, ভাদ্র মাস থেকে শিম চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করা হয়। কার্তিক মাসে বীজ বপন করা হয়। রোপনের ২১-২৫দিনের মধ্যেই গাছ লতায় লতায় ছেয়ে যায়। এরপর ফুল আসে, তা থেকে ফল। এ বছর শিমের উৎপাদন দেখে খুশি কৃষকরা।
শিম চাষি আবদুল মালেক বলেন, ‘গত দুবছর ধরে আমি রেইচা গোয়ালিয়া খোলা সড়কে শিম চাষ করছি। গতবছর ফলন ভালো হয়েছিল। এবছরও ফলন ভালো হয়েছে। শুধু জৈব সার ব্যবহার করেই শিমের ভালো ফলন পেয়েছি।’
আরেক শিম চাষি হ্লাথুই প্রু বলেন, ‘এখানে শিমের ফলন ভালো হয়। গত বছর আমি তিন কানি জমিতে শিম চাষ করেছিলাম। এবার ৫ কানি জমিতে করেছি।’ অন্য সবজি থেকে শিমে বেশি লাভ হয় বলেও জানান তিনি।
বান্দরবানের শিম ভালো হওয়ায় প্রতিবছরই দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারি ব্যবসায়ীরা ছুটে আসেন এখানে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শিম সরবরাহ করে প্রচুর মুনাফা লাভ করে।
এ বিষয়ে পাইকারি ব্যবসায়ী আবদুল লতিফ বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর ডিসেম্বর,জানুয়ারি,ফেব্রুয়ারিতে রেইচা,গোয়ালিয়াখোলা,মাঝের পাড়াসহ বিভিন্নস্থান থেকে শিম সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করি। গতবছর ১১-১২শ টাকায় শিমের মণ বিক্রি করলেও এবার মাত্র ৯০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।’
মধ্যসত্বভোগীদের দৌড়াত্ম্য ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অনেক কৃষক। কৃষকেরা জানায়,লাভের আশায় ব্যাংক ও মহাজন থেকে ঋণ নিয়ে শিম চাষ করে ঠিকমতো দাম না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছের কৃষকেরা।
শিম চাষি লোকমান বলেন, ‘গতবছর আমরা শিম বিক্রি করে ন্যায্য মূল্য পেয়েছি। এ বছর ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আগের চেয়ে বেশি জমিতে আবাদ করেছি। কিন্তু এবছর শিমের ন্যায্যা মূল্য পাচ্ছি না। এবছর প্রতি কেজি শিম ১৩-১৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।’
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, গত বছরের চেয়ে এবছর শিম উৎপাদন বেড়েছে অনেকটা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫৫৫ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদের বিপরীতে উৎপাদন হয়েছিল ৭ হাজার ৯৫৪ মেট্রিকটন। এবার ৬০০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়েছে আর এর বিপরীতে প্রায় ৯ হাজার মেট্রিকটন শিম উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান,বান্দরবানের মাটি, আবহাওয়া ও জলবায়ু শিম চাষের জন্য উপযোগী। কৃষকরা শিম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। তাদের নানা সহায়তা দিচ্ছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘বান্দরবান পার্বত্য জেলায় সমতল ভূমি নাই বললেই চলে। এখানে ৯৫ ভাগই পাহাড়ি জমি। বান্দরবানে সদর,লামা,রুমা ও আলিকদম এ চারটি উপজেলায় শিম চাষ হয়। শিমের উৎপাদন খরচ খুবই কম। একটি জমির আইলেও শিম চাষ করা যায়।
তিনি বলেন,বেশি ফলন হওয়ায় কিছু লোক সিন্ডিকেট করে এর ন্যায্যা মূল্য থেকে কৃষকদের বঞ্চিত করছে।
কৃষকদের মতে,শিম চাষে সহজ শর্তে ব্যাংক থেকে ঋণ প্রদান,কৃষি পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখা ও মধ্যসত্বভোগীদের দৌড়াত্ম্য কমানো হলে অনেক চাষিই এই শিম উৎপাদনে নেমে পড়বে।